মোঃ গোলাম কিবরিয়া – লোহাগড়া
নড়াইলের লোহাগড়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৭ই ডিসেম্বর রবিবার সকাল ১০ ঘটিকায়। নূরমোহম্মদ শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক ৩৯ তম বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান ২০২৩ অনুষ্ঠানে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস এর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন ট্রাষ্টির সহ সভাপতি ও দীর্ঘদিনের সহচর বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ শ. ম. আনয়ারুজ্জামান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডাঃ এ এইচ এম আব্দুর রউফ, বিভাগীয় প্রধান অর্থপেডিক বিভাগ যশোর মেডিকেল কলেজ ও প্রতিষ্ঠাতা পঙ্গু হাসপাতাল, যশোর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বীরমুক্তিযোদ্ধা এস এম এ হান্নান রুনু, লোহাগড়া সরকারি আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) কামরুন্নাহার লিনা, মুন্সী আলাউদ্দিন সভাপতি লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ, আলহাজ্ব সৈয়দ মসিয়ূর রহমান সাধারণ সম্পাদক লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ ও মেয়র লোহাগড়া পৌরসভা, নড়াইল মডেল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও আল্লাহর দান হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মোঃ গোলাম কিবরিয়া সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ, ট্রাস্টের নির্বাহী সদস্যবৃন্দ, সাধারণ সদস্যগণ, উপস্থিত প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ, বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীবৃন্দ । ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান । মহান বিজয়ের এই মাসে মুক্তিযুদ্ধের কালজয়ী সংগঠক নূর মোহম্মদ মিঞার নামে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টের এই মহতি অনুষ্ঠানে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযুদ্ধে নড়াইল অস্ত্রাগার ভেঙ্গে অস্ত্র ছিনিয়ে আনা অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা, এ জনপদের শিক্ষকদের শিক্ষক মরহুম নূর মোহাম্মদ মিঞার জন্ম ১৯২৬ সালে। ১৯৪১ সালে , ইতনা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৪৩ সালে নদীয়া কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে আই.এ, ১৯৪৭ সালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ পাশ করেন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে তাঁর অধ্যাপনা শুরু। তিনি সেখান থেকে লোক প্রশাসন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন এবং এস,এম, হলের প্রাক্তন প্রভোষ্ট। ১৯৬৩ সালে তিনি The social contract শিরোনামে নিবন্ধ লেখার জন্য ইউনেস্কো পুরস্কার পান। ১৯৬৪ সাল থেকে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৫ খানা বাংলা শব্দ কোষ/পরিভাষার রচয়িতা। পাকিস্তান আমলে তিনিই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম,এ, ক্লাসে বাংলায় লেকচার দেওয়া শুরু করেন। মধুমতি পাড়ের মহিশাপাড়া গ্রামের এই ক্ষণজন্মা পুরুষ তাঁর বাল্যকাল ও কৈশোরের লীলাভূমি এই লোহাগড়ার অবহেলিত জনপদের প্রেক্ষাপটে নিজের জীবনকে চোখে দেখেছেন, স্বপ্নে তাঁর আলোকিত লোহাগড়াকে, কর্মে তাঁর শিক্ষা-বান্ধব লোহাগড়া, মর্মে তাঁর আধুনিক লোহাগড়া। “শিক্ষাতেই লোহাগড়ার মুক্তি” – এ সত্যকে গভীরে নিয়ে তিনি লোহাগড়ার শিক্ষার প্রসারে শ্রম, মেধা এবং অর্থ যুগিয়েছেন। তাঁর শিক্ষকতা জীবনের অবসরকালীন প্রাপ্য সমুদয় অর্থ দিয়ে ১৯৮৩ সালে গঠন করেছেন মেধাবী-গরীবদের শিক্ষাবান্ধব এই শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্ট যা থেকে প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। ট্রাস্টের মুলধন ৪১,০০,০০০/- (একচল্লিশ লক্ষ) টাকা থেকে বর্তমানে ট্রাস্টের স্থায়ী আমানত হিসাবে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ৫০,০০,০০০.০০/- (পঞ্চাশ লক্ষ) টাকা। পরিবারের পক্ষ থেকে আজ আবার দুটি চেক হস্তান্তর করেন এ পর্যন্ত মূলধন দাঁড়াল এক কোটি টাকা, মূলত এটাই ছিল নুর মোহাম্মদ মিয়ার স্বপ্ন । যে সকল ছাত্র-ছাত্রী আজ ট্রাস্টের বৃত্তি পেয়েছে তারা যেন নিজেদেরকে শাণিত করে মহামতি নূর মোহাম্মদ মিঞার মত দেশপ্রেমিক, উদার, সাহসী এবং সর্বোপরি প্রকৃত শিক্ষায় আলোকিত মানুষ হতে পারে। ২০২২ সাল পর্যন্ত এই শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে মোট ৫৮,৩৭,৬০০/- (আটান্ন লক্ষ সাইত্রিশ হাজার চছয়শত) টাকা বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। এ বছর ৪টি কলেজ, ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০টি মাদ্রাসা থেকে ২৬৮ জন কে মোট ২,৬৮,০০০/- (দুই লক্ষ আটষট্টি হাজার) টাকা এবং উচ্চ শিক্ষায় ০৫ জন কে মোট ২৫,০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা অর্থাৎ সর্বমোট ২,৯৩,০০০/- (দুই লক্ষ তিরানব্বই হাজার ) টাকা বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি