তেজগাঁওয়ে পৌঁছার আগে আগুন দেখা যায় ট্রেনে

0
202
তেজগাঁওয়ে পৌঁছার আগে আগুন দেখা যায় ট্রেনে
তেজগাঁওয়ে পৌঁছার আগে আগুন দেখা যায় ট্রেনে

আলোকিত ডেস্ক:

মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি টঙ্গী স্টেশনে থামেনি। থেমেছিল ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে। এর আগে ট্রেনটির স্টপেজ ছিল গফরগাঁও এবং ময়মনসিংহ জংশনে। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছাতে সময়ের হিসাবে দূরত্ব ১৮ মিনিটের। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনটিতে আগুন দেখা যায়নি। কিন্তু তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছার আগে টের পাওয়া যায় ট্রেনে আগুন লেগেছে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর সৈনিক ক্লাবের আগে ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সৈনিক ক্লাব পর্যন্ত দুই শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের পর এটি নিশ্চিত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্য মতে, ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটি বগিতে আগুন দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। সকাল পৌনে ৭টার দিকে আগুন নির্বাপণ হয়। পরে একটি বগি থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার ফাইটাররা।

dhakapost

তাদের মধ্যে একজন শিশু, একজন নারী এবং দুজন পুরুষ ছিলেন। এর মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন– নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার তিন বছরের শিশুসন্তান ইয়াসিন। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন এবং চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতেই ঢাকা রেলওয়ে থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং হত্যার পৃথক ধারায় একটি মামলা (মামলা নং- ৭) হয়েছে। মামলার আসামিরা অজ্ঞাত। বাদী ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনটির পরিচালক (গার্ড) খালেদ মোশাররফ।ছায়াতদন্ত শুরু করেছে র‍্যাব, থানা পুলিশ, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা জেলার এসপি বলেন, ‘রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। যদিও আমরা এখন পর্যন্ত জড়িত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারিনি।’ যোগাযোগ করা হলে তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। উত্তরা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। উত্তরা, গুলশান  এবং তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করছে। আমরা এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি, চেষ্টা চলছে।’ তবে,গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বলেন, ‘আমরা প্রথমত ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সব সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত আমাদের অবজারভেশন, মিডিয়াতে যেভাবে আসছে তা সঠিক মনে হয়নি। আমরা এর প্রমাণও পেয়েছি। অর্থাৎ আগুন কোন এলাকায় লাগানো হয়েছে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে সিসিটিভি ফুটেজে।’ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত আমরা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে কোনো আগুন বা ধোঁয়ার আলামত পাইনি। তবে, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর সৈনিক ক্লাব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে আগুনের আলামত স্পষ্ট দেখা গেছে।’

ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সৈনিক ক্লাব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের পর এটি স্পষ্ট মনে হয়েছে যে, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে উঠে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর আগুন দেওয়া হয় ট্রেনটিতে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সৈনিক ক্লাবের আগের কোনো সিসিটিভিতে আমরা ট্রেনটিতে আগুন কিংবা ধোঁয়ার আলামত দেখতে পাইনি। এ ছাড়া, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই ট্রেনটি স্টেশন ত্যাগ করে।’ বিমানবন্দর থেকে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনটিতে আগুন লাগানো হয়নি— উল্লেখ করে মি: ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে, বিমানবন্দরে দুজন নেমে যাওয়ার পরপরই আগুন দেখা যায়। তার মানে, তারা আগুন দিয়ে বিমানবন্দরে নেমে গেছেন। এটি আসলে সঠিক নয়। কারণ, বিমানবন্দর থেকে মহাখালী বা তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছার দূরত্ব ১৮ মিনিট। আগুন ১৮ মিনিট আগে লাগলে পুরো ট্রেন পুড়ে ছাই হয়ে যেত।’ ‘ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের আগে ট্রেনটির যাত্রাবিরতির স্টেশন ছিল গফরগাঁও এবং ময়মনসিংহ জংশনে। টঙ্গীতেও ট্রেনটি থামেনি। আর বাইরে থেকে দেখার সুযোগও নেই যে কেউ আগুন লাগাচ্ছে কি না। আমাদের ধারণা স্পষ্ট, আগুন বিমানবন্দর স্টেশনে দেওয়া হয়নি। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের পর আগুন দেওয়া হয়। আমরা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের মাস্টার, লাইনম্যান, সিগন্যালম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা ক্লিয়ার পাস দিয়েছেন। তারাও তখন আগুন দেখেননি। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর আগুন ভিজিবল (দৃশ্যমান) হয়েছে।’

dhakapost

আলোকিত প্রতিদিন/ ২০ ডিসেম্বর ২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here