যে কারণে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি

0
203

আলোকিত ডেস্ক:

নানা নাটকীয়তার পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশগ্রহণের চূড়ান্ত ঘোষণা দেয় দলটি। এবার এককভাবে ২৮৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। তাদের মধ্যে তিনজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে নির্বাচনে ২৮০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে জাতীয় পার্টি। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়ে ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ’নির্বাচনী পরিবেশ সন্তোষজনক। তাই ২৮৩ আসনে (পরে তিনটি আসনে দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে জাপা। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন মহলের আশ্বাসে আমাদের মধ্যে মোটামুটি একটা আস্থা এসেছে যে—তারা নির্বাচনটা ভালোভাবে করতে চায়। বিশেষ করে, সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে বাদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের ভোটের লড়াইয়ে নেমেছে তার দল। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে নির্বাচনে যাচ্ছে দলটি। পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এশাদপত্নী রওশনের জন্য একটি আসন ফাঁকা রেখে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা দেওয়া হয়। যদিও রওশনপন্থিরা প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিলেন, দয়ার আসন রওশন গ্রহণ করবেন না। পরে অবশ্য রওশন নিজেই জানিয়ে দেন দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি, সেজন্য তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হননি। ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলেও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ছিল নানা গুঞ্জন। আলোচনায় ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়। শেষ পর্যন্ত একসময়ের মহাজোটের শরিক দলকে ২৬ আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টিকে ২৫টি আসনে সমর্থন দিয়ে দলীয় প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত চিঠিতে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে শুরুতেই কোনো প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাপার একেএম সেলিম ওসমান। মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাই-বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার শুরুর তিন দিন পর বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) ইশতেহার প্রকাশ করেছে জাতীয় পার্টি। দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বনানীতে পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ২৪ দফার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দেন। ‘শান্তির জন্য পরিবর্তন, পরিবর্তনের জন্য জাতীয় পার্টি’– স্লোগান সামনে রেখে ঘোষিত জাতীয় পার্টির ইশতেহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—তারা নির্বাচনে কেন অংশ নিচ্ছে– এ ব্যাপারে একটি লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে জাতীয় পার্টি বলেছে, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ তাদের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, দলীয় প্রভাবমুক্ত প্রশাসন, সুশাসন ও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। কিন্তু বিগত শাসকরা তার প্রতিফলন দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের মানুষ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে হলে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে জাতীয় পার্টি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি অতীতে ৯ বছরের সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা নিয়ে আগামীতে সরকারে থাকার দৃঢ় আশা ব্যক্ত করে।জাপার নির্বাচনী ইশতেহারে ২৪ দফার মধ্যে আছে—প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন, নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার, পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন, সুশাসনের বাংলাদেশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মামলাজটের অবসান, শিক্ষিত/অশিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, শিক্ষা পদ্ধতির সংশোধন, সন্ত্রাস দমন ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, ইসলামের আদর্শ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, সর্বোচ্চ ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের কল্যাণ সাধন, খাদ্যনিরাপত্তা, নদী সংরক্ষণ ও ভাঙনরোধে ব্যবস্থা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে স্থিতিশীলতা, শিল্প ও অর্থনীতির অগ্রগতি সাধন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ, পররাষ্ট্রনীতিতে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, নারী সমাজের কল্যাণ সাধন, জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান-মুদ্রানীতি-রাজস্বনীতির সংস্কার, গুচ্ছগ্রাম পথকলি ট্রাস্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রেশনিং চালু, যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কার ও অভিবাসন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ২৭ দল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আছে ১ হাজার ৮৯৬ জন। ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা দেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, তা যাচাই-বাছাই চলে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১৭ ডিসেম্বর। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া নির্বাচনী প্রচার শেষ হবে ৫ জানুয়ারি।

আলোকিত প্রতিদিন/ ২১ ডিসেম্বর ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here