আবু সায়েম:
র্যাবের পৃথক অভিযানে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী, অবৈধ অস্ত্রধারী মাদক কারবারির অন্যতম হোতা ও ইয়াবার গডফাদার খ্যাত নবী হোসেনের অন্যতম সহযোগী বার্মাইয়া রফিক এবং তার একান্ত সহযোগী ফরিদ আলমকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নস্থ গহীন পাহাড় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, আইস, ফেনসিডিল এবং আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ২২ডিসেম্বর শুক্রবার নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে মাদক পাচারের হাব হিসেবে ব্যবহৃত কক্সবাজারের টেকনাফ থানাধীন হ্নীলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে কুখ্যাত মাদক কারবারী বার্মাইয়া রফিক এর মাদক সিন্ডিকেট পার্শ্ববর্তী দেশ হতে বড় একটি মাদকের চালান নিয়ে রঙ্গীখালীর গহীন পাহাড়ী আস্তানায় অবস্থান করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে মাদক ব্যবসায়ী, অবৈধ অস্ত্রধারী এবং পার্শ্ববর্তী দেশ হতে মাদক চোরাকারবারির অন্যতম হোতা ও ইয়াবার গডফাদার খ্যাত নবী হোসেনের অন্যতম সহযোগী মোঃ রফিক আহাম্মেদ প্রকাশ বার্মাইয়া রফিক ( ৪০) এবং তার অন্যতম সহযোগী ফরিদ আলম ( ২৮)কে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৩,১৪,০০০ (তিন লক্ষ চৌদ্দ হাজার) পিস ইয়াবা, ০২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, ০২টি ওয়ান শুটার গান এবং ০৪ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মাদক কারবারিরা হলো, টেকনাফ উপজেলার ওয়াব্রাং সুইচপাড়ার আব্দুল কাদেরের পুত্র বার্মাইয়া রফিক (৪০)এবং একই ইউনিয়ন ও উপজেলার নুর আলমের পুত্র ফরিদ আলম ( ২৮)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃতরা পরস্পর যোগসাজসে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে মাদক চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। গ্রেফতারকৃত বার্মাইয়া রফিক ছোট বেলায় তার পিতা-মাতার সাথে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে এবং কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার হ্নীলা ইউনিয়নের ০৩নং ওয়ার্ডের ওয়াব্রাং সুইচপাড়া এলাকায় বসবাস শুরু করে। জীবিকার মাধ্যম হিসেবে সে প্রথমে নাফ নদীতে মাছ ধরে এবং মাছ ধরার আড়ালে স্থানীয় ও মায়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে মাদক ব্যবসার ভয়ংকর একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। গ্রেফতারকৃত বার্মাইয়া রফিকের চাহিদা মোতাবেক পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক ব্যবসায়ীরা মাদকের চালান প্রথমে নবী হোসেনের মাধ্যমে নাফ নদী পার করে দেয় এবং সেখান থেকে বার্মাইয়া রফিক তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাছ ধরার বোটে করে বাংলাদেশে নিয়ে এসে রঙ্গীখালির গহীন পাহাড়ে তাদের আস্তানায় ৬/৭ দিনের জন্য মজুদ করে। এ সময় বার্মাইয়া রফিক’সহ তার সিন্ডিকেটের সহযোগীরা আস্তানায় অবস্থান করতো এবং মজুদকৃত মাদকের চালান স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের নির্ধারিত এজেন্টদের নিকট সুবিধাজনক সময়ে সরবরাহ করতো। মাদকের চালান সরবরাহের পর তারা রঙ্গীখালির পাহাড়ী আস্তানা ত্যাগ করতো। পুনরায় বিপুল পরিমাণ মাদকের চালান বাংলাদেশে নিয়ে এসে রঙ্গীখালির কোন না কোন পাহাড়ী আস্তানায় মজুদ করে সরবরাহ করার এই প্রক্রিয়া অব্যাহতভাবে চলতে থাকতো। মাদকের টাকা লেনদেনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত বার্মাইয়া রফিকের নেতৃত্বে পাশ্ববর্তী দেশের মাদক ব্যবসায়ী সিকদারপাড়া এলাকার আইয়াজ এবং নাকফুরা এলাকার সলিম ও জুনায়েদ এর নিকট মাদকের চাহিদা করা হতো। চাহিদা মোতাবেক পাশ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধ পথে নিয়ে আসা মাদক তার নির্ধারিত এজেন্টের নিকট বিক্রয় এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ বার্মাইয়া রফিক তার এক নিকটতম আত্মীয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করতো। একইভাবে ক্রয়কৃত মাদকের মূল্য বাবদ ক্যাশ টাকা তার ঐ নিকটতম আত্মীয়ের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিকট প্রেরণ করতো। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উক্ত টাকা বিভিন্ন কোম্পানীর বিক্রয়কর্মীদের মাধ্যমে টেকনাফস্থ কতিপয় হুন্ডী ব্যবসায়ীদের নিকট পাঠাতো। অতঃপর হুন্ডী ব্যবসায়ীরা প্রাপ্ত টাকা টেকনাফস্থ বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এর বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় প্রেরণ করতো। পরবর্তীতে এই টাকা ডলারে রুপান্তর করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মায়ানমার’সহ বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করতো, যা পরে বিভিন্ন হাত বদল হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক ব্যাবসায়ীদের হাতে পৌঁছাতো। গ্রেফতারকৃত বার্মাইয়া রফিক মাদক ব্যবসার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ এবং বাংলাদেশের মাদক ব্যাবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন ও মূল সমন্বয়কারী হিসেবেও ভূমিকা পালন করতো। রেকর্ডপত্র যাচাইন্তে তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় হত্যা ও মাদক’সহ ০৩টি মামলা সংক্রান্তে তথ্য পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ এবং র্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাদের অপর এক সহযোগী পালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তারা তিনজনই আপন সহোদর ভাই এবং চিহ্নিত মাদক কারবারী। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে মাদকদ্রব্য বাংলাদেশ নিয়ে আসে এবং নিজেদের হেফাজতে বিভিন্ন কৌশলে মজুদ করে রাখতো। মজুদকৃত মাদকদ্রব্য ফেনসিডিল কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ এবং ক্ষেত্রবিশেষ পার্শ্ববর্তী দেশেও ফেনসিডিল পাচার করতো বলে জানা যায়। এছাড়াও গ্রেফতারকৃতরা কুমিল্লার সীমান্তবর্তী হতে ফেনসিডিল সংগ্রহপূর্বক নদী পথে মহেষখালী হয়ে পাশ্ববর্তী দেশে পাচারের জন্য টেকনাফ আনায়ন করলে গোয়েন্দা সূত্রে অবগত হয়ে ফেনসিডিলসহ মাদক কারবারীদের র্যাব আটক করতে সক্ষম হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবু সালাম চৌধুরী ( ল’ এন্ড মিডিয়া) বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ ইয়াবা দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। পাশ্ববর্তী দেশ হতে মাদকদ্রব্য বিশেষ করে ইয়াবা ও আইস এর চালান অবৈধ অনুপ্রবেশের যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট রয়েছে তন্মধ্যে টেকনাফের হ্নীলা এলাকাটি অন্যতম পয়েন্ট। সীমান্তবর্তী ও দূর্গম এলাকা হওয়ার কারণে টেকনাফের হ্নীলা এলাকাটিকে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক পাচারের গুরুত্বপূর্ণ হাব হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। পরবর্তীতে এই ইয়াবা বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এতে করে আমাদের যুব সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে নানাবিধ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তিনি আরো বলেন, দেশব্যাপী মাদকের বিস্তাররোধে র্যাব-১৫ কর্তৃক দায়িত্বাধীন এলাকার বিভিন্ন স্থানে গোয়েন্দা নজরদারী ও প্রতিনিয়তই মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনাসহ সমাজের বিবিধ অপরাধ দমনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে -১৫ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ২,৮৩,১১,৯৮৭ (দুই কোটি তিরাশি লক্ষ এগার হাজার নয়শত সাতাশি) পিস ইয়াবা, ৬১.৬৯৮ (একষট্টি কেজি ছয়শত আটানব্বই গ্রাম) কেজি আইস/ক্রিস্টাল মেথ এবং ২,৮৭৭ (দুই হাজার আটশত সাতাত্তর) বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২২ ডিসেম্বর ২৩/মওম