শুভ বড়দিন

0
326

জন ক্রসওয়েল খকসী:

সারা পৃথিবীর ন্যায় প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ও খ্রীষ্টিয়ান সম্প্রদায়ের বিশ্বাসীবর্গ যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন যাকে বাংলাভাষায়“বড়দিন” এবং ইংরেজীতে “খ্রীষ্টমাস” বলে তা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকে। বাংলাদেশে এই দিবসটি যাতে উৎসব মুখর পরিবেশে সর্বস্থানে পালিত হতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ সরকার নানা মুখি পদক্ষেপ গ্রহন করে থাকে। বড়দিনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খ্রীষ্টিয়ানদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বাণী ও নিজ নিজ কার্যালয়ে নেতৃবৃন্দের কে বিশেষ সাক্ষাৎ দিয়ে এ দিনকে মহিমান্বিত করে থাকেন।বড়দিন বাংলাদেশে একটি সরকারী ছুটির দিন। এ দিন বিটিভি এবং অন্যান্য বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ও বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান ও সংবাদ প্রচারিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন পরিবারে, চার্চে,প্রতিষ্ঠানে খ্রীষ্টমাসটির বড়দিনে তারা দিয়ে সাজানো, প্রীতিভোজ, উপাসনা ও প্রাক্- বড়দিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও শহরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কারী বাহিনীর তৎপরতা ও বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে।২০০৪ সালে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন “খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট”গঠন করার পর বিভিন্ন গীর্জায় সরকারী অনুদানসহ বিগত প্রায় দুই দশক ধরে নানাবিধ উন্নয়ন ও কল্যাণ মূলক কার্যক্রম গ্রহন করে আসছে। খ্রীষ্টিয়ানরা খ্রীষ্টাব্দ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তিন টি পর্বকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে পালন করে থাকে।প্রথমটি হচ্ছে বড়দিন। দ্বিতীয় টি হচ্ছে খ্রীষ্টাব্দের নববর্ষ দিবস এবং অপরটি হচ্ছে যীশুখ্রীষ্টের আত্মত্যাগ সপ্তাহ ও পুনরুত্থান দিবস। আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতি বছর বড়দিন এবং নববর্ষ নির্ধারিত তারিখ যথা ক্রমে ২৫ ডিসেম্বরে ও পহেলা জানুয়ারীতে পালিত হয়। যীশু খ্রীষ্টের আত্মত্যাগ সপ্তাহ এবং পুনরুত্থান পর্বটি সাধারণত এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে পালিত হয়। বাংলাদেশে খ্রীষ্টিয়ানরা প্রায় সব জেলাতেই বসবাস করে। যীশু খ্রীষ্ট ও খ্রীষ্টিয়ানদের সম্পর্কে অল্প বিস্তর এ দেশের লোকেরা শুনেছে। অতীতে প্রয়াতঃ এডভোকেট প্রমোদ মানকিনএম.পি. নামে একজন খ্রীষ্টিয়ান প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও ,বি সি এস প্রশাসন, স্বাস্থ্যসেবা,পুলিশ,শিক্ষাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে খ্রীষ্টিয়ান কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যুগযুগ ধরে কাজ করে দেশের জন্য অবদান রেখে আসছে। মুক্তিযুদ্ধে খ্রীষ্টিয়ান মুক্তিযোদ্ধা, মিশন কেন্দ্র, গীর্জা, পুরোহিত ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সমাজের অবদান অনস্বীকার্য। মুক্তিযুদ্ধও মুক্তিযুদ্ধোত্তর কালে বহুখ্রীষ্টিয়ান মিশনারীগণ, দেশীয় পুরোহিতবর্গ এবং এনজিও সংস্থা সমুহ ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী বাংলাদেশী শরণার্থীদের ত্রাণ সহায়তা এবং দেশে প্রত্যাবর্তন করার পর থেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, চিকিৎসা, শিক্ষা ও উন্নয়নে বিশেষ ভুমিকা রেখে আসছে। ব্রিটিশ যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগে ও বহু খ্রীষ্টিয়ান বেসরকারী মিশন স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, সমবায়, কৃষি ও সামাজিক উন্নয়ন ও কল্যাণ মুলক বহু প্রতিষ্ঠান এ দেশে স্থাপিত হয়েছে ও দরিদ্র-পীড়িত লোকদের সেবা করে যাচ্ছে। এ সব কাজ খ্রীষ্টিয়ানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।স্মরণাতীত কাল থেকেই খ্রীষ্টিয়ানেরা ঈশ্বরের উপাসনা, প্রচার কার্য ও মানবসেবা এই তিনটি বিষয়কেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। তাই বড়দিনে মাংসময় দেহে জন্ম গ্রহনকারী পুত্র ঈশ্বর যীশুখ্রীষ্টের উপাসনা, তাঁর জন্ম গ্রহণের সুসংবাদ প্রচার ও দরিদ্র- অবহেলিতদের মুখে হাসি ফোটানোর মাঝেই বড়দিনের আনন্দ নিহিত আছে। খ্রীষ্টিয়ানদের কাছে বড়দিনের তাৎপর্য ও গুরুত্ব বহুবিধ ও বহুমাত্রিক।নিম্নে বড়দিন বিষয়ক খ্রীষ্টিয়ানদের কতিপয় মৌলিক বিশ্বাসের উপর আলোকপাত করছি- (১) বড়দিন হচ্ছে প্রভু যীশুখ্রীষ্টের ত্রাণকর্তা হিসাবেপৃথিবীতে আগমনের দিন।এদিন প্রভু যীশুখ্রীষ্টমানব রূপে জন্ম গ্রহন করেন।তিনি পিতা কর্তৃক প্রেরিত এক জাতপুত্র।তাঁকে যে বিশ্বাস এবং প্রভু ও ত্রাণকর্তা বলে মুখে স্বীকার ও গ্রহন করবে তখনই সে পাপের ক্ষমা লাভ করবে।তাই জন্য এ দিন তাঁর বিশ্বাসীরা তাঁকে ধন্যবাদ ও প্রশংসা জানায়।তারা এ দিন যীশুর নামের সংকীর্তন করে স্বর্গীয় আনন্দ লাভ করে। (২) বড়দিন হচ্ছে মানুষের মাঝে শুভেচ্ছা বিনিময় ও সম্প্রীতি বৃদ্ধির দিন।বড়দিন সব লোকের জন্যই মহানন্দের সুসংবাদ নিয়ে এ সেছে।তাই অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে কোন কিছুই আর মানুষের কাছে অজ্ঞাত অথবা ভৌগলিক ভাবে সীমাবদ্ধ থাকে না।বড়দিনের বার্তা ও কোন ব্যক্তি, ধর্মীয় সম্প্রদায়, পরিবার, সমাজ ও ভৌগোলিক সীমা রেখার মাঝে আজ আর সীমাবদ্ধ থাকে না।সর্ব জাতির কাছেই বড়দিনের সুসংবাদ পৌঁছে দেওয়া এই দিন পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। (৩) বড়দিন হচ্ছে একটি স্বর্গীয়দান এবং খ্রীষ্ট যীশুর জন্মোৎসব। প্রভু যীশুখ্রীষ্ট হচ্ছেন এই উৎসবের মধ্যমণি।তিনি ঈশ্বরের নিকট হতে আগত একটি দান।যে কেউ সেই দান বিশ্বাস করে গ্রহন করবে সে বিনষ্ট হবে না।কিন্তু অনন্ত জীবন লাভ করবে। দেশ, জাতি, ভাষা, আর্থিক অবস্থা, সমাজ ও সংস্কৃতি ভেদে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে বড়দিন পালিত হলে ও এর তাৎপর্য সর্বত্রই এক ও অভিন্ন।এই দিনের যিনি স্রষ্টা স্বয়ং প্রভু যীশুখ্রীষ্ট। তিনিইপথ, সত্য ও জীবন।তাঁকে ছাড়া কেউ ঈশ্বরের নিকট যেতে পারে না।তিনিই মানব জাতির মুক্তি দাতা ও মানব জাতির পাপ মোচনের নিমিত্ত আপন প্রাণ ক্রুশে বলিদান করে ছিলেন।তিনি গত কল্য, অদ্য ও চিরকাল একই ছিলেন, আছেন ও থাকবেন।এটিই হচ্ছে বড়দিনের অন্যতম বার্তা। (৪) বড়দিন হচ্ছে পবিত্র বাইবেল হতে ঐশ্বরিক সত্যকে আবিস্কারের দিন।প্রভু যীশুখ্রীষ্ট সম্পর্কে পবিত্র বাইবেলের ছেষট্টিটি পুস্তকেই সুস্পষ্ট,গভীর ও বিস্তারিত ভাবে লিপিবদ্ধ করা আছে।পবিত্র বাইবেল হচ্ছে ঈশ্বরের নি:শ্বসিত পবিত্র, অভ্রান্ত, অপরিবর্তনীয় ও জীবন্ত বাক্য।এর কোথাও কোন পরিবর্তন, ভ্রান্তশিক্ষা, বিভ্রান্তিকর,অসত্য, অতি রঞ্জিত, অপূর্ণ ও কাল্পনিক বিষয় ঈশ্বরের ভক্ত দাসেরা লিপিবদ্ধ করেননি।স্বয়ং ঈশ্বর ও ধার্মিকগণের যৌথ কাজের ফল হচ্ছে পবিত্র বাইবেল।ঈশ্বর নিজে তাঁর মনোনীত ভক্ত বৃন্দের লেখনীকে নিয়ন্ত্রণ করে সরাসরি পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় প্রতিটি শব্দ চয়ন,পবিত্র বাক্য গঠন, অধ্যায়, পদ ও যতি চিহ্ন ব্যবহার করে ছিলেন। পবিত্র শাস্ত্রের বিভিন্ন বিবরণী, কবিতা, ইতিহাস, পত্রাবলী, ভাব বাণী এবং অন্যান্য গ্রন্থ গুলিতে ঐশ্বরিক সত্যকে প্রকাশ করেছে।প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মালার ন্যায় এক সুত্রে গাঁথা আছে। ১৬০০ বছর ধরে পবিত্র আত্মার আবেশে ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত পবিত্র বাক্য ৪০ জনের ও অধিক লেখকবৃন্দ বিভিন্ন যুগে, স্থানে ও পরিবেশে হুবহু লিপি বদ্ধ করে রেখে ছিলেন।আশ্চর্য জনক বিষয় হলো এই যে,পবিত্র শাস্ত্রের লেখকেরা সবাই একই যুগের ও স্থানের না হয়ে ও তারা সকলেই একই সত্যকে প্রকাশ করে ছিলেন ও অভ্রান্ত ভাবে লিপিবদ্ধ করে ছিলেন এবং প্রত্যেকটি পুস্তকই শুদ্ধ ও পরিস্কার ভাষায় লিখিত। পবিত্র বাক্য গুলি এমনই জীবন্ত যে,যখন কেউ এ গুলো বিশ্বাস করে পড়তে আরম্ভ করে তখন সেই বাক্য গুলি ও সেই ব্যক্তিকে পড়তে আরম্ভ করে। সেই বাক্য পড়ার সময় মনে হবে এটা তার জীবনের সাথে মিলে যাচ্ছে, তাকে অভিযুক্ত করবে, গভীর সত্যকে অনুধাবন করাবে এবং আত্নসমর্পণের জন্য উদ্বুদ্ধ করবে।পবিত্র বাইবেলের লেখকেরা ছিলেন ভাব বাদী ,রাজা,বিচার কর্তা, রাজার পানপাত্র বাহক, সমাজ বামণ্ডলীর নেতা, মেষ পালক,যীশুর শিষ্য, প্রেরিত ইত্যাদি।তাদের স্বাক্ষ্য অনুসারে,যীশুখ্রীষ্ট হলেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা,ঈশ্বরের বাক্য, অভিষিক্ত ত্রাণকর্তা, ঈশ্বরের পুত্র, আশ্চর্য মন্ত্রী, বিক্রম শালী ঈশ্বর,সনাতন পিতা,শান্তিরাজ, মনুষ্যপুত্র,অলৌকিকক্ষমতাশালী, সু সমাচার ঘোষণাকারী, জগতের বিচারকর্তা, শেষ আদম, স্বর্গের ও পৃথিবীর সমস্ত কর্তৃত্বের অধিকারী, অনন্তকালীন মহা যাজক, দায়ূ দরাজার বংশধর, ধার্মিকতার সূর্য ইত্যাদি।পবিত্র বাইবেলে সদা প্রভু ঈশ্বর পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা এই তিনটি স্বত্তার মাধ্যমে মানুষের কাছে তিনি আত্মপ্রকাশ করেছেন।এটিকে ত্রিত্ব ঈশ্বর বলে।কিন্তু তারা এক ও অভিন্ন।তারা অনাদি কাল থেকেই আছেন ও এই বিশ্ব ব্রম্মাণ্ডকে সৃষ্টি করে ছিলেন।যীশুখ্রীষ্ট বাক্য হিসাবে ছিলেন ও স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধারের নিমিত্তমাংসে মূর্তিমান হয়ে ছিলেন। (৫) বড়দিন হচ্ছে ঈশ্বরের অভিষিক্ত প্রতি জ্ঞাত মশীহকে গ্রহন করার দিন।মশীহ নামের অর্থ হচ্ছে উদ্ধার কর্তা। প্রাচীন কালে কোন ব্যক্তিকে ক্ষমতা অর্পন করা হলে তার মাথায় তৈল ঢেলে অভিষিক্ত করা হতো।কিন্তু প্রভু যীশুখ্রীষ্টকে মশীহ হিসাবে পিতা ঈশ্বর যখন অভিষিক্ত করেন তখন তিনি তাঁকে মাথায় তৈলের পরিবর্তে পবিত্র আত্মায় অভিষিক্ত করে ছিলেন।সাধারণ মানুষকে ও ঈশ্বর পবিত্র আত্মা দ্বারা বাপ্তাইজিত ও অভিষিক্ত করে থাকেন।ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেলেই কেবল মাত্র এই বিশেষ বাপ্তিষ্ম ও ক্ষমতা লাভ হয়।যে তা পায় সে যে কোন অসাধ্য কাজকে অলৌকিক ভাবে সাধন করতে সক্ষম হয়। (৬) বড়দিন হচ্ছে যীশুখ্রীষ্ট সম্পর্কে প্রমাণ প্রাপ্তির দিন।যীশুখ্রীষ্ট মাংসে মূর্তিমান হয়ে ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে মানুষের মাঝে বাস করবেন তা তার জন্মের অনেক আগেই ভাব বাদীগণ বলে ছিলেন।তাঁর অপর একটি নাম হলোই ম্মানূয়েল যার অর্থ হচ্ছে’ আমাদের সাথে ঈশ্বর বাস করেন’।বাস্তবিকই, যীশু আমাদের মতই রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেন এবং মানুষের মাঝে বাস করে ছিলেন। তিনি মানুষ হিসাবে জাগতিক বাবা-মা যোষেফ ওমরিয়মের সন্তান হিসাবে লালিত-পালিত হয়ে ছিলেন।তিনি সমাজ গৃহ ও মন্দিরে যেতেন, ক্ষিদে পেলে খেতেন, ঈশ্বরের রাজ্য ঘোষণা করতেন, হেঁটে হেঁটে প্রচার করতেন, ভর্ৎসনা করতেন, কাঁদতেন, দু:খ পেতেন, মানুষের বাড়ীতে অতিথি হিসাবে রাত্রি যাপন করতেন।তিনি সমাজের যারা পাপী এবং দৌরাত্ম্যকারী হিসাবে পরিচিত যেমন: কর গ্রাহী, মদ্যপায়ী, পেটুক, ব্যভিচারী লোকদের কে ঈশ্বরের বাক্য শোনাতেন ও তাদের জীবন কে রূপান্তরিত করতেন।তিনি শিশুদের কে ভালবাসতেন, মানুষ কেউ পমার সাহায্যে স্বর্গরাজ্যের বিষয়ে শিক্ষা দিতেন, অলৌকিক কাজ করতেন, নিষ্পাপ জীবন-যাপন করতেন,পিতা মাতার বাধ্য ছিলেন,জ্ঞানে ও বয়সে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে ছিলেন, শিশু কালে শরণার্থী হয়ে ছিলেন, শত্রুদের দ্বারা অপমানিত ও লাঞ্চিত হয়ে ছিলেন।তাঁকে শত্রুরা দুইজন দস্যুর সাথে ক্রুশোবিদ্ধ করে হত্যা করে ছিল।কিন্তু তার ক্রুশোবিদ্ধকালে একটি অস্থি ও চূর্ণ হয়নি।তাঁকে কুক্ষি দেশে বর্শা দ্বারা আঘাত করা হয়ে ছিল।তাকে কোড়ামেরে ক্ষত বিক্ষত করা হয়ে ছিল।তথাপি তিনি নীরবে তা গ্রহন করেন ও ক্রুশের উপরে থেকে ও শত্রুদের পাপ ক্ষমার জন্য পিতা ঈশ্বরের কাছে নিবেদন করে ছিলেন।তিনি কবর প্রাপ্ত হয়ে ছিলেন।কিন্তু সবচেয়ে অলৌকিক ঘটনা ছিল এইযে,মৃত্যু তাকে কবরে ধরে রাখতে পারেনি।ভাব বাদীগণের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে তিনি মৃত্যুর পর তৃতীয় দিনে কবর হতে প্রবল ভুমিকম্পসহ কারে অতি প্রত্যুষে মৃত্যু হতে পুন রুত্থিত হয়ে ছিলেন।তার কবর শূণ্য পড়ে ছিল।তিনি স্বর্গারোহণ করে ছিলেন।তাঁকে যারা বিশ্বাস করে সরল মনে গ্রহন করে ছিল তাদের পাপ তিনি ক্ষমা করে শাশ্বত জীবনের অধিকার দিয়ে ছিলেন। এসবই যীশু সম্পর্কে পবিত্র বাইবেলে উল্লিখিত সত্য। (৭) বড়দিন হচ্ছে রাজাদের রাজাও প্রভুদের প্রভুর জন্মদিন।যীশুর অপর নাম হচ্ছে শান্তিরাজ।তিনি এজগতে শান্তির রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে এসেছেন।কিন্তু এই রাজ্য কোন জাগতিক রাজ্য নয়।এটি হচ্ছে একটি ধার্মিক তার রাজ্য, যা মানুষের অন্তরে বিরাজ করে।সেখানে দিয়া বলের আত্মার সাথে যীশুখ্রীষ্টে বিশ্বাসীদের প্রতিনিয়ত যুদ্ধ হচ্ছে।দিয়া বল কর্তৃক মানুষ প্রলোভিত ও পরীক্ষিত হচ্ছে।এই রাজ্যে প্রত্যেক বিশ্বাসীই একেক জন যীশুখ্রীষ্টের সৈনিক, যাজক ও প্রজা।ঈশ্বরের রাজ্যে একমাত্র যীশুখ্রীষ্টই প্রভু।পৃথিবীর রাজগণ অপেক্ষা ও তিনি অধিক মহানও ক্ষমতাবান।তাঁর রাজ্যে শান্তির সীমা নেই।সেই রাজ্যে বিশ্বাসীরা অনন্ত জীবনের অধিকারী হয়।জাগতিক ভাবে দৈহিক মৃত্যু হলেও শেষ বিচারের সময় আবার তারা পুন রুত্থিত হবে।অপর দিকে, জাগতিক রাজাদের শাসনের ফলে শান্তি সাময়িকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে ও তাভঙ্গুরও অনিশ্চয়তা বিরাজ করে।পৃথিবীর রাজগণ তাঁর সন্মুখে কম্পমান হয়। রাজা যদি তাঁকে বিশ্বাস ও নির্ভর করে তবে তার রাজত্বকে তিনি আশীর্বাদ যুক্ত করেন,আবার দুষ্ট তার কারণে বিলুপ্ত ও করেন।তাই তাঁর নাম অতীব কীর্তণীয়ও মহান। (৮) বড়দিন হচ্ছে ঈশ্বরের সময়ের পূর্ণতা।ঐতিহাসিক ভাবে, যীশুর জন্মের আগের সময়টা ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়।পৃথিবীময় যুদ্ধ-বিগ্রহ,মৃত্যুও বিভীষিকা ছিল। রোমীয়রা যখন দূর প্রাচ্যের স্বল্প কয়েকটি জাতি ব্যতীত সারা পৃথিবীর জাতির শাসন ক্ষমতা লাভ করে তখন তারা এপৃথিবী থেকে তাদের ক্ষমতা বলে বিশৃঙ্খল জাতিগণের মধ্য থেকে সমস্ত সন্ত্রাস দমন ও যুদ্ধ বিগ্রহ নির্মূল করে শান্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনে।ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি ছিল যীশুর জন্মের জন্য অনুকুল পরিবেশ। ঈশ্বর তখন তাঁর এক জাত পুত্র যীশুকে এসময় টায় পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য উপযুক্ত সময় হিসাবে বেছে নিলেন।তিনি সম্রাট অগাস্টাস সিজারেররা জত্বকালেই তাকে পাঠিয়ে ছিলেন।তখন যূদিয়া প্রদেশ এবং প্রতিবেশী অঞ্চলের শাসন কর্তা ছিলেন রোমীয় সম্রাটের মিত্র রাজা হেরোদ।তিনি একজন নিকৃষ্টতর নিষ্ঠুর রাজা ছিলেন। মশীহের জন্মের বার্তা শুনে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তিনি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে যান।তাই তিনি সকল শিশুদেরকে মেরে ফেলার হুকুম দিয়ে ছিলেন।এমন পরিস্থিতিতে, যীশুর পিতা মাতা তাদের সন্তানকে নিয়ে ঈশ্বরের নির্দেশে মিশর দেশে পলায়ন করেন এবং যতদিন নাপ্যালেস্টাইনে ফিরে আসার উপযুক্ত পরিবেশ হয় নি ,সেখানেই যীশুকে নিয়ে বসবাস করে ছিলেন।খ্রীষ্টের জন্ম হয়েছিল প্যালেস্টাইন দেশের একটি ছোট শহর বেথ লেহেমে।এই শহরটি যিরুশালেম শহর থেকে সাত মাইল দক্ষিণে অবস্থিত।তিনি রাজা দায়ূদের বংশধর ছিলেন। (৯) বড় দিন হচ্ছে একটি সত্য ও ঈশ্বরের অলৌকিক কাজ।এটা কোন রূপ কথা নয়। যীশুর পার্থিব পিতা ছিলেন যোষেফ এবং মাতা ছিলেন মরিয়ম।মরিয়ম যোষেফের বাগদত্তা স্ত্রী হলে ও তাদের সহবাসেরপূর্বেই কুমারী মরিয়ম পবিত্র আত্মার শক্তিতে গর্ভধারণ করেন।ফলে যোষেফ লোক লজ্জার ভয়ে গোপনে তার বাগদত্তা স্ত্রীকে পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলে ও ঈশ্বর তাকে তা করতে দেননি। কারণ কুমারী মরিয়মের গর্ভে যে সন্তান এসেছে তা ঈশ্বরেরই মহানু গ্রহের ফল।কারণ সে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা তমশীহ।তাঁর নাম ঈশ্বর রেখে ছিলেন যীশু অর্থাৎ ত্রাণকর্তা। কারণ তিনি মানব জাতিকে সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণ দিবেন, জগতে ধার্মিক কারণ কুমারী মরিয়মের গর্ভে যে সন্তান এসেছে তা ঈশ্বরেরই মহানু গ্রহের ফল।কারণ সে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা তমশীহ।তাঁর নাম ঈশ্বর রেখে ছিলেন যীশু অর্থাৎ ত্রাণকর্তা। কারণ তিনি মানব জাতিকে সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণ দিবেন, জগতে ধার্মিক তার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন এবং ঈশ্বরের সাথে ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ককে আবার ও পুনর্মিলন করবেন।যীশুর জন্মের সময় বেথেলহেমের আকাশে এক নুতন তারা উদিত হয়েছিল।যীশুর জন্ম হয়েছিল গোয়াল ঘরে এবং যাব পাত্রে তাঁকে কাপড়ে জড়িয়ে শুইয়ে রাখা হয়ে ছিল। একদল মেষ পালকেরা যীশুর জন্মের সংবাদ স্বর্গীয় দূতগণের মাধ্যমে প্রান্তরে রাত্রি বেলায় পেয়েছিল।পূর্ব দেশীয় তিনজন পণ্ডিত আকাশের নুতন তারাটি দেখে মহা মুল্যবান স্বর্ণ, কুন্দুরু ও গন্ধরস উপহার নিয়ে বেথেলেহেমে যীশুকে দেখতে উপস্থিত হয়ে ছিলেন এবং শিশু যীশুকে প্রণাম করে ছিলেন।এসবই ভাববাণী অনুযায়ী বড়দিনের আশ্চর্য ঘটনা যা প্রভু যীশুর মশীহরূপে আগমনের প্রমাণ দেয়। (১০) বড়দিন হচ্ছে স্বর্গীয় আনন্দ লাভের দিন।বর্তমান জগত চক্ষুর অভিলাষ, মাংসিক অভিলাষ, জীবিকার দর্প এবং ইন্দ্রিয় সুখের উপাদানে পরিপূর্ণ।এগুলো মানুষকে পাপ কাজে প্রলুব্ধ করে।মানুষ সেখানে সারাক্ষণ ডুবে থাকতে চায়।আমরা এতই ব্যস্ত থাকি যে যীশুর বিষয় নিয়ে ভাব বার সময় আমাদের নেই।মূল্যবান ধন সম্পদের ভাণ্ডার দিয়ে নিজের জগতকে পূর্ণকরার প্রতিযোগিতায় সকলেই লিপ্ত। স্বর্গে ধন সঞ্চয় আমাদের কাছে হাস্যকর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়। বড়দিনের আত্মিক আনন্দ আমরা উপলব্ধি করতে পারি না।আমরা কেউ কেউ বড়দিনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ভ্রমণ বিলাসে লিপ্ত থাকে।সেদিন কেউ কেউ ঘুমিয়ে দিন কাটাই।আমরা যতই মনটাকে প্রফুল্ল করার চেষ্টা করি ততই আমরা নিজেদেরকে অসুস্থ জীবনের দিকে ধাবিত করাই।বড়দিন আমাদের জীবনে একটি শুভ বারতা নিয়ে আসে যা আমাদের জীবন কে স্বর্গীয় আনন্দে পরিপূর্ণ করে তুলতে পারে। মানব জীবনে যীশুখ্রীষ্টের আদর্শ অনুসরণ করে সমাজে একজন সু নাগরিক হওয়া যায়।তাঁর শিক্ষা আত্মিক, সামাজিক ও মানবিক গুণাবলীর বিকাশের জন্য অপরিসীম ভুমিকা রাখে।সমাজ থেকে যাবতীয় অস্থিরতা দূর, শান্তি ও ন্যয্যতা প্রতিষ্ঠা এবং আত্মিক জীবনে যীশুখ্রীষ্টের শিক্ষা পালন করে সার্বিক মুক্তি লাভ করা যায়। বড়দিন মানুষের জীবন থেকে হিংসা-বিদ্বেষ ও সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের কেউ দ্বুদ্ধকরে এবং শান্তি পুনরুদ্ধারের দিক নির্দেশনা দেয়।যীশুর শিক্ষা সার্বজনীন ভাবে সকলের মঙ্গল ও কল্যাণের নিমিত্ত দত্ত হয়েছে।তাই যে কেউ তা স্বাধীন ভাবে পালন করতে পারে ও যীশুতে নুতন জীবন লাভ করতেপারে।সবাইকে শুভ বড়দিন।

আলোকিত প্রতিদিন/ ২৩ ডিসেম্বর ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here