শহরের হাসপাতালের অফিস সহকারী গ্রামে মস্তবড় ডাক্তার

0
336
শহরের হাসপাতালের অফিস সহকারী গ্রামে মস্তবড় ডাক্তার
শহরের হাসপাতালের অফিস সহকারী গ্রামে মস্তবড় ডাক্তার
আব্দুস সাত্তার টিটু: 
ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের ছড়াছড়ি এখন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, বাড়ছে তাদের সীমাহীন দৌরাত্ম্য। ডাক্তার না হয়েও ডাক্তারি প্যাড ব্যবহার করছেন । রোগী দেখে ভুয়া ডাক্তার নামে কথিত নামে বেনামে ডাক্তাররা। আর এতে করে অনেক রোগীরা প্রতারিত হচ্ছে। গ্রামের এক শ্রেণীর দালালদের বিভিন্ন প্রলোভনে নিজেকে বড় ডাক্তার হিসেবে পরিচিত করে তোলেন  এই সকল ডাক্তাররা।  বেশিরভাগ রোগীকে স্ট্রয়েড সমৃদ্ধ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করান। এই স্ট্রয়েড সমৃদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করলে রোগীর কিডনি তথা ফুসফুস সংক্রমিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায় ২নং বারশত ইউনিয়নের গুন্দীপ ৯ নং ওয়ার্ডের কালিবাড়ি এলাকায় ভুয়া ডাক্তারের ছড়াছড়ির অভিযোগ উঠেছে। এসব ডাক্তার চিকিৎসার নামে প্রতিনিয়তই প্রতারণা করে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।গ্রামের সহজ -সরল মানুষকে ঠকিয়ে বিভিন্ন চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ভুল চিকিৎসার ফলে মৃত্যুর ঝুঁকিতে থেকেই যাচ্ছেন অধিকাংশ রোগীরা।  বারশত ইউনিয়নের কালীবাড়ির মোড়ে এমনই একজন কথিত ডাক্তার “সুমন নাথ” যিনি জেনারেল ফিজিশিয়ান মা ও শিশু এন্ড সার্জারি অভিজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণা করে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।ডাক্তারী প্যাড ব্যবহার করে দিনে এবং রাতে শিশু থেকে বয়স্ক সব ধরনের জটিল রোগের রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মা ও শিশু এন্ড সার্জারি বিশেষজ্ঞ পরিচিত  হলেও পেট ব্যাথা রোগীর চিকিৎসাও বাদ দেননা। দ্রুত  ইনজেকশন রেফারও করেন। সব রোগের প্রাথমিক ফি নেন একশত টাকা। বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০( ২০১০ সনের ৬১ নং আইন ) এ বলা আছে নিবন্ধন ব্যতীত এলোপ্যাথি চিকিৎসা নিষিদ্ধ ২২। (১) অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন নিবন্ধন ব্যতীত কোন মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এলোপ্যাথি চিকিৎসা করিতে, অথবা নিজেকে মেডিকেল চিকিৎসক বা, ক্ষেত্রমত,ডেন্টাল চিকিৎসক বলিয়া পরিচয় প্রদান করিতে পারিবেন না। (২) কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর বিধান লংঘন করিলে উক্ত লংঘন হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি ৩ (তিন) বৎসর কারাদন্ড অথবা ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন। সরজমিনে ডাক্তার সুজন নাথের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে তার সব কাগজ পত্র ঠিক আছে বলে জানান।দেখতে চাইলে আধাঘণ্টা পরে দেখাতে পারবেন বলে অপেক্ষা  করার অনুরোধ করেন। আলাপের এক পর্যায়ে সুজন নাথ স্বীকার করেন তিনি  বৈধ ডাক্তার না। তিনি আরো বলেন ,,” আমি আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের একজন অফিস সহকারী।”এখানেই শেষ নয় ,সুজন নাথ বলেন দীর্ঘ আঠারো বছর যাবত চিকিৎসক পরিচয়ে চিকিৎসা করে  আসছি ,কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কারো অভিযোগ নেই। এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার জন্যে অর্থের প্রলোভন দেখান। পরে সাংবাদিকরা রাজী না হলে এলাকার কয়েকজন সন্ত্রাসীদের দিয়ে সাংবাদিকের উপরে হামলার চেষ্টা করেন। তারা দুই মোটরসাইকেলে এসে সাংবাদিকদের ভিডিও করেন এবং ডাক্তারের কাছে চাঁদা চেয়েছেন এমন জমানবন্দী নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। পরে ওই মোটরসাইকেল আরোহীদের ডাক্তারের অপ চিকিৎসার বিষয়ে ভিডিও ফুটেজের সম্পর্কে অবগত করলে তারা ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে নিউজ করার জন্য তামিল দেন।এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। সচেতন মহলের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় রোগীর পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। অল্প সময়েই নিভে গেছে অনেকের জীবন প্রদীপ। বছরের পর বছর ধরে ভুয়া ডাক্তার কেন্দ্রিক নানা অরাজকতায় চিকিৎসাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সরকারের দায়িত্বশীল বিএমডিসি, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিএমএসহ ডাক্তারদের পেশাদার সংগঠনগুলো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান নাগরিক সমাজ। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: হাসান শাহরিয়ার কবির এর মোবাইল নাম্বারে কল করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৪ ডিসেম্বর ২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here