ফেসবুকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায়

0
154

আলোকিত ডেস্ক:

নারীদের নামে খোলা ফেসবুক আইডি থেকে বন্ধুত্ব। পরে ভিডিও কলে কথা বলা। এক পর্যায়ে নগ্ন ভিডিও ধারণ। এরপর তা ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করত একটি চক্র। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের প্রতারকরা এই চক্রের সদস্য। গত বুধবার চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার হন গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরাই এসব তথ্য দেন বলে দাবি ডিবির। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার করা দুজন হলেন মো. টিপু সুলতান (২৭) ও মো. মোসলেম রানা (২৮)। টিপু সুলতান রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে বিবিএ তৃতীয় বর্ষে এবং মোসলেম রানা তিতুমীর কলেজে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাকিং বিষয়ে স্নাতকে (সম্মান) পড়ছেন। তাঁদের দুজনই ঢাকার কড়াইলে বসবাস করেন। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের (দক্ষিণ) ফিন্যানশিয়াল অ্যান্ড সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের ইনচার্জ এডিসি মো. সাইফুর রহমান আজাদের নেতৃত্বে এক অভিযানে এই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং নানা অপরাধের সন্ধান পাওয়া গেছে। গত বুধবার রাজধানীর কড়াইল ও বনানী এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি জানায়, বাংলাদেশের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার পুরুষদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে চক্রটি। এই চক্রের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের একাধিক নাগরিক জড়িত। তাঁরাই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি এজেন্টদের ব্যবহার করে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। এ ধরনের একটি ঘটনার ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ডিবি জানতে পারে, চলতি বছর তাঁর ফেসবুক আইডিতে দিপীকা আগারওয়াল নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে, যা তিনি অ্যাকসেপ্ট করেন। উভয়ের মধ্যে পরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে উভয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে নিয়মিত ভিডিও কলে কথাবার্তা বলতেন। মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কলে কথা বলার সময় বাদীর অজান্তেই স্থিরচিত্র এবং ভিডিও চিত্র ধারণ করতেন দিপীকা। ১ সেপ্টেম্বর দিপীকার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে বাদীর ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে বেশ কিছু স্থিরচিত্র ও ভিডিও পাঠানো হয়, যেখানে বাদীর ছবি এডিট করে নগ্ন অবস্থায় ভাইরাল করে দেবেন বলে হুমকি দেওয়া হয়। বাদী এসব ছবি ও ভিডিও ডিলিট করার জন্য অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে এসব ছবি ও ভিডিও ডিলিট করার জন্য এক লাখ টাকা দাবি করেন ওই নারী। এক পর্যায়ে প্রতারকদের পাঠানো একটি বিকাশ নম্বরে সাত হাজার টাকা পাঠান ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা এবং ডিবির কাছে অভিযোগ করলে প্রতারক দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে প্রতারকচক্রের নানা অপকর্মের তথ্য। চক্রের হোতা ভারতের নাগরিক: ডিবি জানায়, এই চক্রের হোতা শাকিল নামের এক ভারতীয় নাগরিক। তিনি লোন অ্যাপস থেকে লোনগ্রহীতাদের লোন পরিশোধের জন্য এবং ফেসবুকে বন্ধুত্ব করে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য ভুয়া ইউপিআই (ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস) তৈরি করে দেন বাংলাদেশি এজেন্ট টিপুকে। টিপু ইউপিআই পাঠান পাকিস্তানি এজেন্ট পারভেজকে। পারভেজ ভিকটিমদের কল দিয়ে/ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করেন। এ ছাড়া নগদ/বিকাশের মাধ্যমে ভিকটিমদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে ভারতের শাকিলকে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে বাংলাদেশি এজেন্ট পান ২৫ শতাংশ এবং পাকিস্তানি এজেন্ট ২৫ শতাংশ অর্থ পান। সেই টাকা পরে বাংলাদেশি এজন্টে হয়ে ভারতে চলে যায় এবং বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি এজেন্ট তাঁদের নিজ নিজ কমিশন পান। যেভাবে শিক্ষার্থী থেকে প্রতারক: গ্রেপ্তার দুই ছাত্র একই এলাকায় বসবাস করার সুবাদে পরস্পর পরিচিত। তাঁরা অল্প সময়ে বেশি অর্থ উপার্জনের আশায় এ ধরনের প্রতারণায় যুক্ত হন। তাঁদের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকদের পরিচয়ের পর তাঁদের প্রলোভনে এবং সহায়তায় এ কাজে যুক্ত হন। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের (দক্ষিণ) এডিসি মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, এ ধরনের অপরাধ থেকে বাঁচতে পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমে ভিডিও কলে কথা বলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একই সঙ্গে সাইবার জগৎ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ২৫ ডিসেম্বর ২৩/ এসবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here