সংঘাত নয় নির্বাচন হোক নেতা বাছাইয়ের মহোৎসব: সুজন

0
254
সংঘাত নয় নির্বাচন হোক নেতা বাছাইয়ের মহোৎসব: সুজন
সংঘাত নয় নির্বাচন হোক নেতা বাছাইয়ের মহোৎসব: সুজন
মীর সালাহউদ্দীন:
সংঘাত-সহিংসতা নয় নির্বাচন সৎ,যোগ্য নেতা বাছাইয়ের মহোৎসব হোক বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।বুধবার (২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ইং) সকালে নগরীর ক্লাব ফোর কনভেনশন হলে সাংবাদিকদের সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে উক্ত মন্তব্য করেন তিনি।এসময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে আপনাদের অভিবাদন জানাচ্ছি।শীতের এই উষ্ণ সকালে আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হওয়ায় আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন,এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন নাগরিক সংকট নিরসনে নাগরিক উদ্যোগ সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে।লাখো নগরবাসীর জন্য সীমাহীন দুর্ভোগ বয়ে আনা জলাবদ্ধতা নিরসন,যানজট নিরসন,সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক রাখা,হজযাত্রীদের ভোগান্তি বন্ধ, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় গ্রাহক হয়রানি বন্ধ,ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী অসাধু-লুটেরা মুনাফাখোর গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য মোকাবেলা,রেল ও বিমান যাত্রীদের নানা সুযোগ-সুবিধা আদায়,খেলার মাঠ দখল,শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক কর্মসূচির বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত রাখাসহ নানা ইস্যুতে নাগরিক উদ্যোগের ভূমিকা আপনারা লক্ষ্য করে আসছেন।এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আপনাদের বলতে চাই যে,নাগরিক সংকট নিয়ে কাজ করলেও আমরা রাষ্ট্র এবং সমাজেরই অংশ, দূরের কেউ নই। সুতরাং দেশের প্রয়োজনে,রাষ্ট্রের প্রয়োজনে,সমাজের প্রয়োজনেও আমরা আমাদের মতামত অকুন্ঠভাবে তুলে ধরতে চাই।আজ আমরা আপনাদের সামনে এমন একসময়ে উপস্থিত হয়েছি, যখন দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়েছে। প্রার্থীরা আপনাদের দুয়ারে-দুয়ারে হাজির হয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।আগামী ৭ জানুয়ারি,২০২৪ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নাগরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে নাগরিক উদ্যোগের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।নির্বাচনকে নিয়ে সর্বস্তরের নাগরিকদের কাছে আমাদের উদাত্ত আহ্বান, ‘সন্ত্রাস,সংঘাত,সহিংসতা নয়- নির্বাচন হোক সৎ,যোগ্য ও ভালো নেতৃত্ব নির্বাচনের মহোৎসব।’আমাদের অনুরোধ,সবাই দলে দলে ভোটকেন্দ্রে যান,নিজেদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করুন এবং সৎ, যোগ্য এবং ভালো মানুষকে আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করুন।দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে,এটা শতভাগ সত্য।তারপরও নাগরিকদের অনেক সমস্যা-অসুবিধা আছে।দেখা গেছে, অনেকে নির্বাচিত হওয়ার পর আর জনগণের খোঁজখবরই রাখেননি বা সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে সেটা ঠিকভাবে ব্যবহারও করেননি।দেখা যাচ্ছে,এমন অনেকেই আবারও প্রার্থী হয়ে এসে জনগণের কাছে ভোট চাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী,স্বাধীনতা বিরোধী কোনো প্রার্থী নেই।এ অবস্থায় যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েও জনগণের জন্য কাজ করেননি,জনদুর্ভোগ নিরসনে ভূমিকা রাখেননি,তাদের যেন সবাই প্রত্যাখান করেন।সৎ, যোগ্য ও ভালো মানুষকে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে আমরা নাগরিকরা যাতে কোনো ভুল না করি কিংবা কোনো সস্তা প্রলোভনে যাতে মোহগ্রস্ত না হই, সেই বিষয়টি বিনয়ের সঙ্গে আমরা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।পাহাড়-নদী-সাগরের মিলনমোহনার জনপদ এই বন্দরনগরী চট্টগ্রাম।যে সবুজের সমারোহ একদিন এই জনপদকে দেশ-বিদেশের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল,অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বর্ণদুয়ার হিসেবে যে চট্টগ্রাম সুদীর্ঘকাল ধরে বিবেচিত হয়ে আসছে, সেই চট্টগ্রামের দুঃখ-বঞ্চনাগাঁথারও যেন শেষ নেই। সমৃদ্ধি-সম্ভাবনা সবই আছে, তারপরও কোথায় যেন না পাওয়ার বঞ্চনা চট্টগ্রামের নাগরিকরা প্রতি পলে পলে অনুভব করছেন।এ কী শুধু আবহমান ধরে চলা বঞ্চনার মর্মগাঁথা না কি যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাদের পালনে অক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ- এ প্রশ্ন আজ নাগরিকদের মনে সঞ্চার হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।সেই দায়িত্ব তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল,এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, একাধিক ফ্লাইওভার,জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নসহ হাজার-হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে বদলে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে,এত উন্নয়নের পরও চট্টগ্রামের কোথাও কোথাও নাগরিকদের কাছ থেকে এখনও হতাশার সুর ভেসে আসে।যেমন- চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি সড়কসহ রেলসেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে। এ সেতুর সমস্যা শুধু বোয়ালখালী বা দক্ষিণ চট্টগ্রামের নয়। কক্সবাজার, মহেশখালী, মাতারবাড়ি এবং চীন পর্যন্ত সড়ক নেটওয়ার্ককে কেন্দ্র করে বহুমাত্রিক উন্নয়নমুখী অর্থনীতির যে মহাযাত্রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু করেছেন, সেজন্য এ সেতু অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ মুহুর্তে সর্বাগ্রে প্রয়োজন, পদ্মা বা যমুনা সেতুর মতো আলাদা অথরিটি প্রতিষ্ঠা করে কালুরঘাট সেতুর কাজ শুরু করা। শুধু বোয়ালখালী নয়, চট্টগ্রামের সকল প্রার্থীকে একযোগে ওয়াদা করা উচিৎ যে, তারা নির্বাচিত হতে পারলে সম্মিলিতভাবে এ সেতু বাস্তবায়নে কাজ করবেন।প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপার আধার প্রাচ্যের রাণী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের সবুজ শ্যামলিমা আজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে।খাল-নদী, পাহাড় হারিয়ে যাচ্ছে।সবুজ উদ্যান নেই বললেই চলে।দখল-দূষন, মুনাফার বাণিজ্যিক চিন্তা আর ইট-পাথরের আগ্রাসনে চট্টগ্রাম পরিণত হচ্ছে ক্রমশঃ যান্ত্রিক জনপদে। আমরা নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা জনগণের সামনে ওয়াদা করুন যে, নির্বাচিত হলে পাহাড় কাটা, খাল, নদীনালা দখলের বিরুদ্ধে আপনাদের জোরালো অবস্থান থাকবে। চট্টগ্রামের সবুজ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড নিজেরাও করবেন না, কাউকে প্রশ্রয়ও দেবেন না। নাগরিক সমাজের কাছে আমাদের আহ্বান, যেসব প্রার্থী আপনাদের কাছে সবুজ চট্টগ্রামকে রক্ষার ওয়াদা করবেন, তাদের গ্রহণ করুন। যারা জনদাবিকে উপেক্ষা করবেন,তাদের প্রত্যাখান করুন। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে উপস্থাপন করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করছি। চট্টগ্রাম শহরে কিংবা উপকন্ঠের মধ্যে যে সংসদীয় আসনগুলো, সেখানে উন্নয়নটা সুষমভাবে হয়নি বলে নাগরিকরা মনে করেন। বিশেষত. মূল অংশের সঙ্গে প্রান্তিক এলাকার উন্নয়ন-অগ্রগতির বৈষম্য একেবারে দৃশ্যমান। যেমন পতেঙ্গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। কিন্তু সেখানে লাখো জনসাধারণের প্রাণের দাবি একটি মাতৃসদনসহ পূর্ণাঙ্গ সরকারি হাসপাতাল এবং ইপিজেড, পতেঙ্গা ও বন্দর এলাকার বাসিন্দাদের জন্য অন্তঃত দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা। সেই দাবি কেন যুগের পর যুগ উপেক্ষিত থাকবে ?কেন শহরের অভ্যন্তরে এত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হয়েও বন্দর-পতেঙ্গা প্রান্তিক জনপদ হয়ে থাকবে, সেই প্রশ্ন নাগরিকদের কাছ থেকে আমরা পাচ্ছি। নাগরিক উদ্যোগ মনে করে, উন্নয়ন বঞ্চিত প্রান্তিক এলাকার জনপ্রতিনিধিরা তাদের ভোটার কিংবা নাগরিকদের সঙ্গে সঠিক, ন্যায্য আচরণ করেননি। এটা নিজের ব্যর্থতা, উদাসীনতা না কি জনগণকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার মনোভাব সেই বিতর্কে আমরা যাচ্ছি না। এ প্রেক্ষাপটে এসে নাগরিক উদ্যোগের সুনির্দিষ্ট স্লোগান হচ্ছে- ‘কাম গরিবু যিবা, ভোট পাইব্যুদে ইবা।’
আমরা নাগরিকদের দায়িত্ব-কতর্ব্যের বিষয়ও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আমরা নাগরিকরা, যিনি আমাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে নিজেকে রাজার আসনে বসিয়ে আমাদের চাওয়া-পাওয়াকে উপেক্ষা করেছেন, আমাদের কথা বলেননি, আসুন আমরা তাকে প্রত্যাখান করি, আসুন আমরা তাকে জবাব দিই ভোটের মাধ্যমে। ভোটটা পরীক্ষীত যোগ্য প্রার্থীকে দেয়া, এটা নাগরিকদেরই দায়িত্ব। উল্লেখ করা প্রয়োজন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের যে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছে, সেটা বানচালের জন্য দেশি-বিদেশি শক্তি তৎপর হয়ে উঠেছে। তাদের টার্গেট নির্বাচন। তারা ভোট বানচাল করতে চায়। তারা দেশকে আবারও পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়। জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে পরাজিত পাকিস্তানের মতো একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। চট্টগ্রামবাসীর প্রতি নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে আহ্বান, আপনারা নির্বাচন বানচালকারীদের প্রত্যাখান করে দলে দলে ভোটকেন্দ্রে আসুন। ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করুন। এমন প্রতিনিধি বেছে নিন, যিনি সংসদে গিয়ে আপনার অভাব-অভিযোগ, চাওয়া-পাওয়ার কথা উচ্চকন্ঠে তুলে ধরবেন। এমন প্রতিনিধি নির্বাচিত করুন, যিনি ভোটে জিতে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যাবেন না,যিনি সুখে-দুঃখে, সমস্যা-সংকটে মানুষের পাশে থাকবেন। একজন সৎ,দায়িত্ববান,সুশিক্ষিত, দায়িত্ববান জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করুন। সেই প্রার্থীকে আপনারা বেছে নিন, যিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে আপোসহীন। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ, আব্দুর রহমান মিয়া, রুহুল আমিন তপন, সাইদুর রহমান চৌধুরী, মহানগর যুবলীগের সভাপতি মাহাবুবুল হক সুমন, নুরুল কবির, মোরশেদ আলম, মো. সেলিম, জাহেদ আহমদ চৌধুরী, ডা. অঞ্জন কুমার দাশ, অনির্বাণ দাশ বাবু, সমীর মহাজন লিটন, মো. বাবলু, ফেরদৌস মাহমুদ আলমগীর, রকিবুল আলম সাজ্জি, আব্দুর রহিম জিল্লু, পাভেল ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম ইমরান আহাম্মেদ ইমু, মনিরুল হক মুন্না প্রমূখ।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৭ ডিসেম্বর ২৩/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here