ক্রীড়া ডেস্ক:
২০২৩ সালটা ক্রিকেটে বাংলাদেশ অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা নিয়েই কাটালো। অনেক সাফল্যে মোড়া ছিল এই বছরটি। আবার বিশ্বকাপে ব্যর্থতাও বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবিয়েছে। এছাড়া সাকিব-তামিমের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক ছিল বড় আলোচনার বিষয়। সবচেয়ে বড়কথা ২০২৩ সালে বাংলাদেশ খেলেছে ৫০টি ম্যাচ। নিজেদের ৩৭ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে এক বছরে এর আগে এতগুলো ম্যাচ খেলেনি টাইগাররা। বছরের শেষ দিনে আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেই ম্যাচের অর্ধশত পূরণ করলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল। হার দিয়ে বছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজে টাইগারদের বেশকিছু প্রাপ্তি রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে সিরিজজুড়ে আলো ছড়িয়েছেন শরিফুল ইসলাম। দুর্দান্ত ফর্ম দেখিয়ে তিনি সিরিজসেরাও হয়েছেন। অন্যদিকে নিজের সামর্থ্য জানান দিয়েছেন লেগ-স্পিনার রিশাদ হোসেন। অথচ, বছরের শুরুতে প্রথম দুই মাস কোনো ম্যাচই খেলেনি বাংলাদেশ। বছরের পরের ১০ মাসে খেলেছে এই ৫০ ম্যাচ। এর মধ্যে ৪টি টেস্ট, ৩২টি ওয়ানডে এবং ১৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে টাইগাররা। রেকর্ড ম্যাচ খেলার বছরে টি-টোয়েন্টিতে কোনো সিরিজ হারেনি টাইগাররা। সব মিলিয়ে মোট চারটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ এবং একটি টুর্নামেন্টে খেলেছে বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে তিনটিতে জয় এবং একটি সিরিজ ড্র করেছে তারা। এছাড়া এশিয়ান গেমসে খেলেছে তিনটি ম্যাচ। যার মধ্যে ২টিতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বছরের শুরুতে মার্চে ইংল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। একই মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জয় পায় টাইগাররা। এরপর গত জুলাইতে আফগানদের ২ ম্যাচের সিরিজে হারিয়েছে সাকিবের দল। অক্টোবরে হাংঝুতে খেলেছে এশিয়ান গেমস। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৩ ম্যাচের সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র করলো বাংলাদেশ। ২০১৫ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ওয়ানডে ফরম্যাটে মাত্র একটি সিরিজ হেরে ঘরের মাঠকে নিজেদের দুর্গে পরিণত করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২০২৩ সালে দুর্গটি ভেঙে চুরমার হয়। এ বছর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান এবং নিউজিল্যান্ডের কাছে সিরিজ হারের লজ্জা পায় বাংলাদেশ। ২০২৫ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে । আসরে মাত্র ২টি ম্যাচ জিততে পেরেছে টাইগাররা। ২০০৩ সালের পর বিশ্বকাপে সবচেয়ে বাজে ফল সাকিব বাহিনীর। বড় আসরে ব্যর্থতার পরও বছরের শেষদিকে নিউজিল্যান্ডের মাঠে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে জয়ের নজির গড়ে টাইগাররা। সব মিলিয়ে এ বছর ৩২টি ওয়ানডের মধ্যে ১১টিতে জয়, ১৮টিতে হার এবং তিনটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয় বাংলাদেশের।
২০২৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় সাফল্য ছিল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এশিয়া কাপ জয়। দুবাইয়ের মাটিতে ফাইনালের লড়াইয়ে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বাংলাদেশ হারায় ১৯৫ রানের বড় ব্যবধানে। আসরের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক আশিকুর রহমান শিবলির সেঞ্চুরিতে ভর করে বাংলাদেশ তুলেছিল ২৮৩ রান। আরব আমিরাত অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৮৭ রানে। প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের পথে ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মত দলকে হারায় তারা। দু’টি করে সেঞ্চুরি এবং হাফ সেঞ্চুরিতে ১২৬ গড়ে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৩৭৮ রান করেন শিবলি। এখন পর্যন্ত দেশকে দু’টি বড় মেগা ইভেন্টের ট্রফি জয়ের স্বাদ দিয়েছে যুবা ক্রিকেটাররা। কিন্তু জাতীয় দল এখনও কোনো ট্রফি জিততে পারেনি।
দারুণ একটি বছর পার করেছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। গেল জুলাইয়ে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে শক্তিশালী ভারতের সঙ্গে ১-১ এ ড্র করে নিজেদের উন্নতির ইঙ্গিত দেয় নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। এমনকী ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারলেও ১টি ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। পরবর্তীতে এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জিতে নেয় তারা। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ। বছর শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ইতিহাস গড়েছে নারী দল। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে ম্যাচ জয়ের স্বাদ পায় তারা। টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১এ ড্র করলেও ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে হারে বাংলাদেশ। তারপরও নারী ক্রিকেটারদের জন্য এটি স্মরণীয় বছরই ছিল।
আলোকিত প্রতিদিন/ ৩১ ডিসেম্বর ২৩/মওম