নৌকার প্রার্থীসহ হারলেন যেসব হেভিওয়েট

0
297
নৌকার প্রার্থীসহ হারলেন যেসব হেভিওয়েট
নৌকার প্রার্থীসহ হারলেন যেসব হেভিওয়েট

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়েও অনেকে পরাজিত হয়েছে। পরাজিত এসব প্রার্থীর মধ্যে বর্তমানে মন্ত্রী পদে রয়েছেন এমন ব্যক্তি রয়েছেন। এছাড়া অনেক পরিচিত মুখও নৌকার পাল তুলতে পারেননি। নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছেই তাদের হারতে হয়েছে। সদ্য অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমান সরকারের ক্ষমতাসীন মন্ত্রী পদে থেকে নৌকার টিকিট পেয়ে ভোটের মাঠে নেমে হেরেছেন অন্তত তিনজন প্রার্থী। তারা হলেন- বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী দুই বারের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, ত্রাণ এবং দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী দুই বারের সংসদ সদস্য এনামুর রহমান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় প্রতিমন্ত্রী তিনবারের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য। এছাড়াও নৌকা নিয়ে হেরে যাওয়ার তালিকায় রয়েছেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। এদের মধ্যে বর্তমান প্রতিমন্ত্রী এবং সাবেক মন্ত্রীসহ একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তারা এলাকার জনপ্রিয় প্রার্থীদের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন। হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে হেরেছেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। সোস্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় মুখ ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। বরাবরের মতো এবারও দলীয় নির্বাচনী প্রতীক মশাল ছেড়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীকে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে লড়াই করেন। তবে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের কাছে পরাজিত হয়েছেন। ট্রাক প্রতীক নিয়ে কামারুল পেয়েছেন ৯৮ হাজার ৮৯৬ ভোট। ইনু পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৭৯ হাজার ৭৩৫ ভোট। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পিরোজপুর-২ আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ফলে তিনি এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটে লড়াই করেন। সেই লড়াইয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের কাছে হেরে যান মঞ্জু। মহিউদ্দিন ঈগল প্রতীকে ৯৯ হাজার ৭২৪ ভোট পেয়েছেন। আর মঞ্জু নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭০ হাজার ৩৩৩ ভোট। হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুব আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে হেরে গেছেন। এ আসনে ব্যারিস্টার সুমন ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৬৯ হাজার ৯৯ ভোট। আর অ্যাডভোকেট মো. মাহবুব আলী পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৫৪৩ ভোট। অর্থাৎ ৯৯ হাজার ৫৫৬ ভোট বেশি পেয়েছেন ব্যারিস্টার সুমন। এ আসনে মোট কেন্দ্র ১৭৭টি।টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম) আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনুপম শাহজাহান জয়ের কাছে হেরে গেছেন। এ আসনে অনুপম শাহজাহান ৯৬ হাজার ৪০১ ভোট পেয়েছেন। কাদের সিদ্দিকী গামছা প্রতীকে পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৫০১ ভোট। এ আসনে ভোট পড়েছে ৪২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও বহুল আলোচিত ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর এবং চরভদ্রাসন) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন টানা তৃতীয়বারের মতো জয় পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ এ আসন থেকে টানা তিনবার হেরেছেন। ঈগল প্রতীকে নিক্সন এক লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হ্যাটট্রিক করেছেন। অন্যদিকে নিক্সনের কাছে টানা তৃতীয়বারের মতো পরাজিত হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন নৌকার প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহ। তিনি পেয়েছেন এক লাখ ২৪ হাজার ৬৬ ভোট। সে হিসাবে নিক্সন চৌধুরী ২৩ হাজার ৯৬৯ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-২ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকের ফজলে হোসেন বাদশা কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশার কাছে পরাজিত হয়েছে। এ আসনে অধ্যক্ষ শফিকুর পেয়েছেন ৫৪ হাজার ৯০৬ ভোট। ফজলে হোসেন বাদশা পেয়েছেন ৩১ হাজার ৪৬৬ ভোট। রাজশাহী-২ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৫২ হাজার ৭৮২ জন। আসনটির ১১২ ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুর-৫ আসনে ৮২ হাজার ৭২০ ভোট পেয়ে ট্রাক প্রতীক নিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি-জিএস আখতারউজ্জামান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীকের বর্তমান এমপি মেহের আফরোজ চুমকি। তিনি পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৭৮৩ ভোট। মানিকগঞ্জ-২ আসনে ভোটের লড়াইয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন ওই আসনের বর্তমান এমপি ও পপ সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম। ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের এই প্রার্থী। এ আসনে মোট ১৯৩টি ভোটকেন্দ্রে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু পেয়েছেন ৮৮ হাজার ৩০৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মমতাজ বেগম নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৮২ হাজার ১৩৮ ভোট। ঢাকা-১৮ আসনে স্বতন্ত্রী প্রার্থী মো.খসরু চৌধুরীর কাছে হেরে গেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী এবং দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেরীফা কাদের। নির্বাচনে কেটলি প্রতীকে খসরু চৌধুরী ৭৯ হাজার ৮৫টি ভোট পেয়েছেন। শেরীফা কাদের ৬ হাজার ৪২৯টি ভোট পেয়ে তিনি তৃতীয় হয়েছেন। ঢাকা-১৮ আসনের মোট ভোটার ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৮ জন। রবিবার নির্বাচনের দিন আসনটিতে ২১৭টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম হয়। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে। নির্বাচনী মাঠে ভোটের লড়াইয়ে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেননি। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া কেটলি প্রতীকে পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৭৫ ভোট। সিলেট-৬ আসনে চমক দেখিয়ে ১৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ১৯২টি কেন্দ্রের ফলাফলে এতথ্য জানা গেছে। এ আসনে নাহিদ পেয়েছেন ৫৮ হাজার ১২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৩৮৭ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ১০ হাজার ৮৫৮ ভোট। সিলেট-৬ আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ১৯২টি আর ভোটকক্ষ এক হাজার ৮৯টি। এ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৭২ হাজার ৭৪৯জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৩৭ হাজার ৫০৯ জন ও নারী ভোটার দুই লাখ ৩৫ হাজার ২৩৯ জন। জামালপুর-৪ আসনে হেরে গেছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এ আসনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ জয়ী হয়েছেন। ট্রাকের কাছে হেরে গেছেন নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান হেলাল এবং ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. মুরাদ হাসান। এ আসনে আবদুর রশীদ ট্রাক প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৬৭৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলাল নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৬৩৮ ভোট।

আলোকিত প্রতিদিন/৮ জানুয়ারি ২৪/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here