মীর সালাহউদ্দীন:
বহুল আলোচিত চট্টগ্রাম বন্দরনগরীর খুলশীর পাহাড়তলী কলেজ এলাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলাকালীন সময়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রকাশ্যে বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে হতাহতের ঘটনায় গুলিবর্ষণকারী শামীম আজাদ ব্লেড শামীম’কে বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রসহ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জনগনের সুষ্ঠু,শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সারাদেশব্যাপী দায়িত্ব পালন করেছে র্যাব। সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটারগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কিছু কিছু ভোট কেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে সুষ্ঠু ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছে। গত ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ আনুমানিক সকাল ১০.৩০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম-১০ আসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দরনগরীর পাহাড়তলী ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্র এলাকায় কতিপয় দুস্কৃতিকারী সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নে ঘটনোর উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে সহিংসতা ও গুলিবর্ষণ করে।উক্ত সহিংসতা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় ভোটারসহ শান্ত বড়ুয়া এবং জামাল নামক দুজন ব্যক্তি গুলিবৃদ্ধ হয়,পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।উক্ত ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। উক্ত ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়।ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৭ এর যৌথ আভিযানিক দল চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন কুমিরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় প্রকাশ্যে বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গুলি করে হতাহত করার ঘটনায় গুলি বর্ষণকারী শামীম আজাদ ব্লেড শামীম মুন্না,পিতা-আবুল কালাম আজাদ,সাং-সায়েরখালী,থানা-মিরসরাই, জেলা-চট্টগ্রাম’কে ০১টি বিদেশি পিস্তল ও ০২ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়।প্রাথমিকভাবে গ্রেফতারকৃত আসামি উক্ত ঘটনার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত শামীম আজাদ চট্টগ্রামের মিরসরাই এর স্থায়ী বাসিন্দা এবং বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী এলাকায় বসবাস করে আসছে এবং দীর্ঘদিন যাবৎ খুলশী ও তার পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় তার সহযোগীদের নিয়ে চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজি,অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল। গত ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ চট্টগ্রাম-১০ আসন, পাহাড়তলী ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্র এলাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জনসাধারনের স্বতঃফুর্ত ভোটাধিকার প্রয়োগ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ দেখে গ্রেফতারকৃত শামীম আজাদের নেতৃত্বে কতিপয় দুস্কৃতিকারী দেশী ও বিদেশি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সহিংসতার ও নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্ন ঘটানোর উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত শামীম আজাদ একটি বিদেশি পিস্তল দিয়ে প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে।গুলিবর্ষণের ঘটনায় ভোটার শান্ত বড়ুয়া এবং জামাল নামক দুজন ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়। গ্রেফতারকৃত শামীম ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে পেশীশক্তি প্রদর্শন ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভোটারদের ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন ভোটাধিকারে বাঁধাদান করতে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করছিল।পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে সে কৌশলে ঘটনাস্থল হতে পলায়ন করে এবং চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকায় আত্মগোপন করে পরবর্তীতে র্যাব৭ কর্তৃক গ্রেফতার হয়।গ্রেফতারকৃত শামীম আজাদ ব্লেড শামীম চট্টগ্রামের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্মাতক সম্পন্ন করে। সে চট্টগ্রামের খুলশী ও পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরণে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধ সংক্রান্তে ০৫টির অধিক মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় ০৩ বার কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আসামি ও উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদ সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/৯ জানুয়ারি ২৪/মওম