আবু সায়েম:
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে যেসব নতুন ট্রেন চালু করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কক্সবাজার এক্সপ্রেস। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বিরতিহীনভাবে চলাচলকারী আন্তঃনগর এ ট্রেনটি শুধুমাত্র চট্টগ্রামে অপারেশনাল বিরতি দেয়। গত ১ ডিসেম্বর এ ট্রেনটি চালুর পর থেকেই কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিট পাওয়া আর ‘সোনার হরিণ’ পাওয়া সমান্তরাল হয়ে গিয়েছিল। যাত্রা শুরুর ১০ দিন আগে স্টেশন এবং অনলাইনে একইসঙ্গে পাওয়া যেত ট্রেনটির টিকিট। কিন্তু টিকিট ছাড়ার মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যেত সব টিকিট। যদিও রেল কর্তৃপক্ষ বরাবরই বলে এসেছে, প্রচুর জনপ্রিয়তা থাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ একইসঙ্গে রেলঅ্যাপে ঢুকায় টিকিট সহজলভ্য নয়। এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (বাণিজ্যিক) নাহিদ হাসান খানের সাথে। রেলের এ কর্মকর্তা দায়িত্বে আছেন কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে। তিনি বলেন, রেলের টিকিটের মূল চাহিদার বেশিরভাগই থাকে ডিসেম্বর মাসের টিকিটে। এরমধ্যে এক হলো ডিসেম্বর মাস আর হলো কক্সবাজার তাই ডিসেম্বর মানেই টিকিটের চাহিদা ছিল বেশি। সারা বছরের চাহিদার ৬০ শতাংশের বেশি আসে শুধু ডিসেম্বর মাসে। বৃহস্পতি ও শুক্রবারের টিকিট পাওয়া যায় না। র্যাবের তদন্তের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে কি না সেটা আমার জানা নেই। তবে এই সময়টায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান থাকে কক্সবাজারে তার কারণেও কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিটের চাহিদা থাকে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বন্ধ থাকার কারণেও চাহিদা বেশি ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ের এই বক্তব্য যে সঠিক নয়, সেটা ফুটে উঠল কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিট কালোবাজারে বন্ধ করতে কক্সবাজার আদালতের স্বপ্রণোদিত মামলা করার উদ্যোগ থেকে। গত বছরের গত ১৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-১ এর বিচারক শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা কালোবাজারি দমনে মামলা দায়ের করেন। ২৬ ডিসেম্বর কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে গিয়ে সরেজমিন প্রাথমিক তদন্ত কাজ শুরু করেন র্যাবের কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) আবু সালাম চৌধুরী।
সরেজমিনে গিয়ে তদন্তের নেতৃত্ব দেওয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ট্রেনটি এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন। এখন স্বপ্ন নিয়ে খেলছে কালোবাজারির দল। এরপরই বদলে যেতে শুরু করে পুরো চিত্র। এখনও ১০ দিন ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হলেও পাওয়া যাচ্ছে যেকোনো দিনের টিকিট। এ প্রতিবেদন লেখার সময়, কক্সবাজার এক্সপ্রেসের একাধিক দিনের টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছিল। বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (বাণিজ্যিক) নাহিদ হাসান খান অস্বীকার করলেও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম টিকিট কালোবাজারি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, র্যাবের তদন্তের বিষয়টি অবশ্যই আমার কাছে আছে। তারা বিষয়টি জানে বলেই তদন্তের কাজ করছেন। এরমধ্যে, যারা অসাধু অনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত কিভাবে তাদের প্রতিহত করা যায় সেভাবে কাজ করা হচ্ছে। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত কী না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টিকিটের কালোবাজারির ব্যাপারে রেলের কোনো কর্মকর্তা জড়িত আছে বলে এখনও এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। যদি কাউকে এমনটার সঙ্গে জড়িত পাওয়া যায় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। র্যাবের কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) আবু সালাম চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে র্যাব তদন্ত করছে। তদন্তে অনেক কিছু পাওয়া গেছে। আদালতে প্রতিবেদনে তথ্য উপস্থাপন করা হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/৯ জানুয়ারি ২৪/মওম