সবুজ সরকার:
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের নির্বাচনী সহিংসতার মামলায় কর্মী-সমর্থকদের আটকের ঘটনায় মঙ্গলবার(৯ জানুয়ারি) টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কালিহাতী থানার সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন, সদ্য নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েক হাজার নেতাকর্মী এসে তার সঙ্গে যোগ দেয়। এ সময় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ১৬ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থান কর্মসূচির খবর পেয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম ঘটনাস্থলে পৌঁছে থানায় গিয়ে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ এক ঘণ্টা বৈঠকের পর আটককৃত ছয় জনের মধ্যে চারজনকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হয় এবং সহিসংতার মামলার এজাহারে দুই জনের নাম থাকায় তাদেরকে দ্রুত আদালতে পাঠানো হয়। অবস্থানের তিন ঘণ্টা পর মঙ্গলবার বিকাল সোয়া তিনটার দিকে ছোট ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর অনুরোধে তিনি ওই অবরোধ প্রত্যাহার করেন। পুলিশ সূত্র জানায়, রোববার(৭ জানুয়ারি) নির্বাচনের দিন বিকালে কালিহাতীর নাগবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল কাইয়ুম বিপ্লবের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সোমবার(৮ জানুয়ারি) কালিহাতী থানায় মামলা হয়। সোমবার রাতে এ মামলার এজাহারভুক্ত দু’জনসহ ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। তারা হচ্ছেন- বাংড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাসমত আলী নেতা, হৃদয়, রফিক, পিন্টু, লাট মিয়া ও মিজানুর রহমান। তাদের মধ্যে হাসমত আলী নেতা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক, অন্যরা সবাই লতিফ সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থক। অনুসারীদের আটকের খবর পেয়ে ঢাকা থেকে কালিহাতীতে এসে থানায় যান। তিনি আটক কর্মীদের ছেড়ে দিতে বলেন। পুলিশ তাদের ছেড়ে না দেওয়ায় লতিফ সিদ্দিকী মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে মুক্তির দাবিতে থানার সামনে বসে পড়েন। এ খবর কালিহাতীতে ছড়িয়ে পড়লে তার কর্মী-সমর্থকরা এসে তার সঙ্গে যোগ দেন। এ সময় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় ১৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে এ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনার খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত পরাজিত প্রার্থী মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার তার নেতাকর্মীদের নিয়ে থানার দিকে যেতে থাকেন। সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ দুই পক্ষের মধ্যে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম অবস্থান ধর্মঘটস্থলে যান। তিনি লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে থানায় গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। পুলিশ আটক ছয়জনের মধ্য থেকে এজাহারে নাম না থাকা চারজনকে ছেড়ে দেয়। তারা হচ্ছেন- হাসমত আলী নেতা, হৃদয়, পিন্টু ও রফিক। এজাহারভুক্ত মো. লাট মিয়া ও মিজানুর রহমান মিজান নামে দুজনকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে কাদের সিদ্দিকী বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীকে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। এদিন বেলা সোয়া তিনটার দিকে লতিফ সিদ্দিকী তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আঞ্চলিক মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। লতিফ সিদ্দিকীর কর্মী ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী, ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ তোতা, কালিহাতী পৌরসভার প্যানেল মেয়র অজয় দে লিটন, মোশারফ হোসেন সিদ্দিকী, রুহুল আমিন, আবুল কাশেম, আবু বকর, তাপস পাল, আব্দুল করিম, আরশেদ আলী, আব্দুল বারেক, আল আমিন মিয়া, জাহাঙ্গীর, নারায়ন পোদ্দার, আবুল হাসেম সহ শতাধিক ব্যক্তি জানায়, নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকে লতিফ সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে। হাট-বাজারে বের হলেই কর্মীদের মারপিট করা হচ্ছে। এসব কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশে করা হলেও তিনি প্রকাশ্যে আসছেন না। তার কথা অনুযায়ী কালিহাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদারের নির্দেশে আওয়ামীলীগের কর্মীরা হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় অংশ নিচ্ছে। উপজেলার পালিমা কেন্দ্রে লতিফ সিদ্দিকীর ট্রাক প্রতীকের এজেণ্ট থাকার অপরাধে সোমবার(৮ জানুয়ারি) সকালে রিপন মিয়াকে ছুরিকাঘাত করা হয়। গুরুতর আহতাবস্থায় তিনি কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করেনি। ওই মামলাটি গ্রহণ করার অনুরোধ করতে যাওয়ায় বাংড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাসমত আলী নেতা, হৃদয়, পিন্টু ও রফিককে থানার ওসি কামরুল ফারুক অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং আটক করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ আসনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে ৭০ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন, টাঙ্গাইলে মহান মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ইন চিফ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী নৌকার প্রার্থী মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার পান ৫৪ হাজার ৭৫ ভোট। লতিফ সিদ্দিকী এ আসন থেকে এর আগে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন। দুপুর আড়াইটার দিকে সেখানে আসেন লতিফ সিদ্দিকীর ছোট ভাই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে থানায় ঢুকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে গ্রেফতার হাসমত আলী, নুর, হৃদয় ও খোকাকে নিয়ে তিনি থানা থেকে বের হয়ে আসেন। পরে আন্দোলনরত বড় ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কাছে তাদের বুঝিয়ে দেন। এ সময় তিনি উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সরে যেতে বলেন। পরে তারা থানা ঘেরাও কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। এ সময় কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই আজাদ সিদ্দিকীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ফারুক বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল। চার জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি দুই জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’ কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘নির্বাচনপরবর্তী উত্তেজনা কাম্য নয়। এখানে উভয়পক্ষের ভুল বুঝাবুঝি ছিল। ছেড়ে দেওয়া চার জনকে সন্দেহমূলকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বাকি দুই জনকে আদালতে পাঠানো হবে তাদের আজকেই জামিনের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’
আলোকিত প্রতিদিন/৯ জানুয়ারি ২৪/মওম