গাইবান্ধায় শীতের প্রকোপ বেড়েই চলেছে তাই জনজীবন জুবু থুব্রু হয়ে পড়েছে

0
226
গাইবান্ধায় শীতের প্রকোপে জনজীবন জুবু থুব্রু হয়ে পড়েছে
গাইবান্ধায় শীতের প্রকোপে জনজীবন জুবু থুব্রু হয়ে পড়েছে
রানা ইস্কান্দার রহমান:
কয়দিন থাকি খুব শীত নাগছে। আত-দিন ওস পড়ে। মেলা মানষের কাচে একটা কম্বল চাছুনু কেউ দেয় না বাবা। ঠান্ডা বাতাসে হাত-পাও কাঁপে। মোর শরীলও থরথর করি কাঁপছে। কি আর করমো। ঘরোত তো সুতি থাকলে কেউ ভাত দিবানয়। এ জন্নে ভিক্ষ্যাত বারাছোম। পেট তো আর শীত মানে না বাহে।’ সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়ায় এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সাদুল্লাপুরের জয়েনপুর গ্রামের শতবর্ষী বৃদ্ধা জহুরা বেওয়া। তিনি পেশায় একজন ভিক্ষুক। স্বামী আকবর হোসেন একযুগ আগে মারা গেছেন। সহায় সম্বল বলতে কিছু নেই। আছে একটি ছাপড়া ঘর । এখানে জরাজীর্ণভাবে বসবাস করেন। নেই কোনো ছেলে সন্তান। আছে দুই মেয়ে। তাদের বিয়ে দিয়েছেন। এখন জীবন সংগ্রামে করছেন ভিক্ষাবৃত্তি। শীতে তীব্রতায় জবুথবু অবস্থায় তিনি। তবুও শীতের কাঁপুনি নিয়ে জহুরা বেওয়া বেরিয়েছেন ভিক্ষা করতে। শুধু এই জহুরা বেওয়াই নয়। এমন অসংখ্য জহুরা শীতের দাপটে পড়েছে বেকায়দায়। স্থবির হয়ে পড়ছে তাদের জীবনযাপন। গরম কাপড়ের অভাবে ছুটছে এদিক-সেদিক। এমন পরিস্থিতির শিকার হলেও ছিন্নমূল পরিবারে তেমন মেলেনি সরকারি কম্বল। শীত আক্রান্তে কমেছে আয়-রোজগার। এমন পরিস্থিতে খেটে খাওয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবন নানা সঙ্কটে পড়েছে। জানা যায়, পৌষের শেষ সপ্তাহ এসে গাইবান্ধার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। কনকনে শীতে যবুথবু হয়ে পড়ছে বয়স্ক এবং শিশুরা। আর এই ঠান্ডার কবলে অনেকের দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছে ওইসব রোগীর স্বজনরা। সম্প্রতি গাইবান্ধা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে শীতজনিত রোগীদের ভর্তি এবং চিকিৎসাসেবা নেওয়ার চিত্র। হাসপাতালগুলোতে আসা অধিকাংশ রোগী ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। জানা যায়, নদীবিধৌত গাইবান্ধার চরাঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলে কয়েকদিন ধরে সূর্যের মুখ দেখা মেলে না। চারদিকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে। সেই সঙ্গে উত্তরের মৃদু হিমেল হাওয়া বইছে। দিন শেষে রাত ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে থাকে কুয়াশার দাপট। যেন বৃষ্টির মতো ঝড়ছে এসব কুয়াশা। এ কারণে বেড়েই চলেছে শীতের তীব্রতা। কনকনে এই ঠান্ডায় যবুথবু হওয়া মানুষগুলো নাজেহাল হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে বিপাকে রয়েছে স্বজনরা। সবচেয় বেকায়দায় ছিন্নমূল এবং চরাঞ্চলের পরিবারগুলো। এসব পরিবারে ধীরে ধীরে দেখা দিচ্ছে শীতজনিত নানা রোগের প্রকোপ। এসব রোগীদের কেউ নিচ্ছেন পল্লী চিকিৎসকের সেবা। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ক্লিনিকে গিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। এছাড়াও শীতের কবলে বাদ পড়ছে না গৃহপালিত পশু-পাখি। আর বীজতলা নষ্টের আশঙ্কায় কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়ছেন। কামারজানি চরের বাসিন্দা সাদা মিয়া জানান, গরিব পরিবারের শ্রমজীবী মানুষ তিনি। অতি ঠান্ডায় একদিকে বিক্রি করতে পারছেন না শ্রম, অন্যদিকে তার শিশু সন্তান শ্বাসকষ্টে ভুগছে। এই শিশুর চিকিৎসা নিচ্ছেন সদর হাসপাতালে। গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহাবুব হোসেন বলেন, সম্প্রতি শীতের কারণে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এখনও প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। তাদের যত্নসহকারে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বেশ কিছু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৪ জানুয়ারি ২৪/ মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here