পাথরঘাটায় বন বিভাগকে ম্যানেজ করে গাছ কেটে বনের ভিতর ঘরবাড়ি নির্মাণ

0
204
পাথরঘাটায় বন বিভাগকে ম্যানেজ করে গাছ কেটে বনের ভিতর ঘরবাড়ি নির্মাণ
পাথরঘাটায় বন বিভাগকে ম্যানেজ করে গাছ কেটে বনের ভিতর ঘরবাড়ি নির্মাণ

মোঃ জিয়াউল ইসলাম:

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা এলাকার উপকুলীয় বাসিন্দাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগে  ঢাল হিসেবে কাজ করে ম্যানগ্রোভ বাগান। হরিণঘাটার সেই ম্যানগ্রোভ বাগান নির্বিচারে ধ্বংস করছে ভূমি ও বনদস্যুরা।  বনের গাছ কেটে গড়ে তোলা হয়েছে ঘরবাড়ি এবং মাছের ঘের। আর এই বনদস্যুদের সঙ্গে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে উজাড় হচ্ছে বন। বরগুনা পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা এলাকার হরিঘাটা সংরতি ম্যানগ্রোভ বনের গাছ কেটে নতুন করে অন্তত ১৫টি পরিবার জায়গা দখল করে গড়ে তুলছে ঘরবাড়ি মাছের ঘের সহ কৃষি জমি। এতে বনাঞ্চল উজার হয়ে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। বন বিভাগের জায়গায় অবাধে ঘরবাড়ি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিও বনদস্যুদের সাথে বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাদের বিরদ্ধে। গত ২০১৩ সালে বনের ওই অংশের গাছ কেটে ৩৫টি পরিবার বনের অন্তত ৯ একর জমি দখলে নিয়ে সেখানে ঘরবাড়ি তোলে বসবাস শুরু করে। আর সেই সংখ্যাটি বেড়ে এখন প্রায় শতাধিক হয়েছে। ওই সময় বন বিভাগের পক্ষ থেকে দখলদারদের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দেওয়া হলেও তাদের বিরুদ্ধে আজও উচ্ছেদের বিষয় কোন কার্যকারী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরিবারগুলো এখন তাদের জমির আয়তন বাড়াতে বনের গাছ কেটে পুনরায় দখল প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আর বন বিভাগ বলছে জনবলের অভাবে সব সময় খোঁজখবর রাখা যায় না। দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তাঁরা বনকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করে মিথ্যা মামলা দেন। ঐ এলাকার  একই গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম প্যাদা বলেন,বেড়িবাঁধের পাশে থাকতো এরা আস্তে আস্তে দেখতেছি বনের গাছ কেটে জমির আয়তন বাড়াচ্ছে, আমরা অনেকেই বন বিভাগকে জানাইছি অথচ তারা বলছে আমরা দেখতেছি বাস্তবে তারা কিছুই দেখে না, গাছের একটি ঢাল কাটলেও তাদেরকে কম বেশি টাকা দিতে হয় অথচ এখানে তো বন উজাড় করে জমি দখল দেয়া হইছে। বন বিভাগকে ম্যানেজ না করে এটা কোনমতেই সম্ভব না। পাথরঘাটা প্রেসকাবের সাধারণ সম্পাদক, জাফর ইকবাল বলেন, যে বন আমাদেরকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা  করে, সেই বনের গাছ কেটে জমি দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করছে  অথচ বন বিভাগ বলছে দেখতেছি না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এই বনদস্যুদের সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কারণেই এই দখলদার দের  থামানো যাচ্ছে না। পাথরঘাটার হরিণঘাটা বিট কর্মকর্তা, আব্দুল হাই, বন বিভাগকে ম্যানেজ করার কথা জানতে চাইলে বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন তারা নিজেরা বাঁচার জন্য এবং আমাদের ফাঁসানোর জন্য এই কথাগুলো বলছে, এখানে দখলদাররা যত বড় ক্ষমতার অধিকারী হোক না কেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, নতুন করে বন বিভাগের যে জমি দখল করা হয়েছিল বিষয়টি জানতে পেরে আমরা দখলকৃত জমি উদ্ধার করেছি এবং বন উজাড় করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে বনো মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর সাথে বন বিভাগের কোন কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বলে জানান এই বিভাগীয় কর্মকর্তা।১৯৬৭ সাল থেকে বন বিভাগের সম্প্রসারণে নানা প্রজাতির গাছ রোপণের মাধ্যমে বনটি সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার একরজুড়ে দৃষ্টিনন্দন এ বনে কেওড়া, গেওয়া, পশুরসহ সুন্দরী ও ঝাউবন রয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এখানে ২০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে বনায়ন করা হয়। এছাড়া সাগর তীরে লালদিয়ার চরে নতুন বন হওয়ায় পরিধি ক্রমশ বাড়ছে। এটি এখন বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৪ জানুয়ারি ২৪/ মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here