কুমিল্লায় প্রতারক চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার,পলাতক-১

0
250
কুমিল্লায় প্রতারক চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার,পলাতক-১
কুমিল্লায় প্রতারক চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার,পলাতক-১

মোঃ আবু বকর সিদ্দিক:

কখনো সাংবাদিক, আবার কখনো নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে করতেন দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার কাজ। সাধারণ মানুষকে ব্লাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মতো কাজও করে আসছিলো কয়েকটি প্রতারক চক্র। প্রতারণাকেই একমাত্র পুঁজি করে কর্মসংস্থান হিসেবে নিয়ে প্রতিনিয়ত করতো তারা প্রতারণা। সাম্প্রতিক সময়ে এমনি এক ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে দুই প্রতারককে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানাধীন বিজয়পাড়া গ্রামের মৃত রৌশন আলীর ছেলে আব্দুর রহমান (৫০) ও কোতোয়ালি মডেল থানাধীন কাপ্তানবাজার এলাকার মৃত আব্দুর রশিদ এর ছেলে মশিউর রহমান টিপু (৪৫)। এসময় অজ্ঞাতনামা অপর আরেক প্রতারক সঙ্গী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বাদীর এজাহার সূত্রে জানা যায় যে, কুমিল্লা নগরীর পুরাতন চৌধুরীপাড়া (০৫ ওয়ার্ড) এলাকার একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন এক গৃহকর্ত্রী। তাকে বিভিন্ন সময় ব্লাকমেইল করে চাঁদা দাবি করে আসছিল প্রতারক চক্রটি। গত ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই গৃহকর্ত্রীর বাসায় পুলিশ পরিচয়ে জোরপূর্বক প্রবেশ করে তিন প্রতারক। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করতে চেষ্টা করে ওই গৃহকর্ত্রীকে। এসময় চিৎকার করলে এগিয়ে আসেন ওই গৃহকর্ত্রীর মেয়ে আসিফা ও স্বামী কবির আহমেদ (ছদ্মনাম)। এসময় চক্রটি ধর্ষণ করতে ব্যর্থ হলে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পরিবারের ওপর চালায় নির্যাতন। এক পর্যায়ে হত্যার উদ্দেশ্যে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টাও করা হয় ওই গৃহকর্ত্রীকে। পরে বাসা থেকে নগদ ৪ লক্ষ টাকা, ভুক্তভোগী গৃহকর্ত্রীর গলার স্বর্ণের চেইন ১ ভরি ৮ আনা ও মেয়ের গলার স্বর্ণের চেইন ৮ আনা (যাহার অনুমান মূল্য ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা) জোরপূর্বক নিয়ে যায় পালাতক সদস্য। এসময় অন্যদের সহযোগিতায় দুইজনকে আটক করে ৯৯৯ জাতীয় জরুরি সেবায় ফোন দিলে পুলিশ এসে তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এদিকে এ ঘটনার পর দৈনিক মুক্ত খবর ও দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন অনুসন্ধানে মাঠে নামে এবং পলাতক প্রতারকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তিনি কোতোয়ালি মডেল থানাধীন কাপ্তানবাজার এলাকার মোঃ জাবেদ হোসেন (২৮)। আটককৃত মশিউর রহমান টিপু এক সময় তিশা ট্রান্সপোর্টের গাড়ি (বাস) চালাত। এরপর ক্রমান্বয়ে ট্রাক, রেন্ট এ কারের গাড়ি (মাক্রো), ওষুধ কোম্পানির গাড়ি (পিকআপ) ড্রাইভ করতো। সেই সময় থেকে নিয়মিত মাদক ফেনসিডিল, স্কার্ফ ও গাঁজা সেবন করতো। করতো একসময় পুলিশের সোর্স। সময়ের ব্যবধানে সব কিছু হারিয়ে গেলেও হারিয়ে যায়নি তার মাদক সেবনের অভ্যাসটি। তাই তো অনেকটাই বাধ্য হয়েই শুরু করেন ওয়ার্কশপে শার্টার লাগানোর কাজ। কিন্তু তা দিয়ে তো একদিকে সংসার সামলানো অন্যদিকে মাদকের টাকা জোগাড় করতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছিলেন হয়তো। তাই তো এবার ঘুরে দাঁড়াতে সব কাজ ছেড়ে দিয়ে একমাত্র প্রতারণার আশ্রয় হিসাবে নিজেকে কখনো সাংবাদিক আবার কখনো পুলিশ পরিচয় দিতেন অনেক জায়গাই। প্রতারণার ব্যবসাটির শুরুটা হয় মাত্র মাস দুয়েক আগে। অবশ্য একা নয়ই, দীর্ঘদিনের প্রতারণার আরেক মূল নায়েক রোকেয়া আকতার রুবির (৩৫) হাত ধরেই। এই চক্রটি আরও ভয়ংকর। যে একবার এই চক্রের হাতে পড়েছেন তিনিই হয়েছেন অপমানিত অপদস্ত। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পরিচয় দিয়ে করছেন অভিনব প্রতারণা। চাকরি দেওয়ার কথা বলে উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের থেকে গ্রহণ করতেন প্রতারণামূলকভাবে লক্ষাধিক টাকা। পরে চাকরি দিতে না পারায় ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইলেই নেমে আসতো তাদের জীবনে অনাকাক্সিক্ষত বহু ঘটনা। দেওয়া হতো বিভিন্ন ধরনের হুমকি। এই গ্রুপের মধ্যে রয়েছে লালমাই থানাধীন বাগমারা এলাকার ও কোতোয়ালি থানাধীন খেতাসার এলাকার (ঘোড়ামারা) ভাড়া বাসার রোকেয়া আকতার রুবি প্রধান, বলারামপুর (দিদার মার্কেট) এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন রানা টিভি মেকানিক (৩৮) ও কাপ্তানবাজার রাস্তার মাথা এলাকার জসিম ড্রাইভার (৪০)। কয়েকদিন যেতে না যেতেই সমস্যা দাঁড়ালো প্রতারণার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে। ভেঙ্গে গেলো চক্রটি। এবার শুরু হলো তিনটি গ্রুপে প্রতারণা। একটির নেতৃত্বে মশিউর রহমান টিপু, রোকেয়া আকতার রুবির নেতৃত্বে একটি এবং রানা ও জসিমের যৌথ নেতৃত্বে একটি অর্থাৎ পৃথকভাবে তিনটি প্রতারক চক্র। চক্রগুলোর নিয়মিত কাজ হচ্ছে প্রাইভেট কার / সিএনজি ভাড়া নিয়ে সাংবাদিকতার নামে সাধারণ মানুষকে ব্লাকমেইল করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এরা প্রত্যেকেই প্রতারক। সংবাদ লেখার কোন যোগ্যতাই নেই কারোর। নেই কারোর প্রতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট কিংবা সংবাদ লেখার বিন্দুমাত্র কোন অভিজ্ঞতা। অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশ করবে অথবা প্রশাসনকে জানাবে মর্মে অপরাধীদের ভয় দেখিয়ে ও সাধারণ মানুষকে ব্লাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ছাড়া তাদের কোন টার্গেটই থাকে না। আর প্রতারণার সেই অর্থ দিয়ে তারা প্রত্যেকেই ভারতীয় সীমান্তে গিয়ে মাদক সেবন করেন। যার জন্য প্রতিনিয়তই মূল ধারার সাংবাদিকদের নানান সমস্যায় পড়তে হয়, কখনো বা হতে হয় লাঞ্ছিত। প্রশাসনের উচিত এদের সবারই বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামীদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আজকের এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং আদালতে তাদের সোপর্দ করে হয়েছে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৬ জানুয়ারি ২৪/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here