গাইবান্ধায় উন্নত জাতের ঘাস চাষে সম্ভাবনার মুখ দেখছেন কৃষক ও খামারীরা

0
703
গাইবান্ধায় উন্নত জাতের ঘাস চাষে সম্ভাবনার মুখ দেখছেন কৃষক ও খামারীরা
গাইবান্ধায় উন্নত জাতের ঘাস চাষে সম্ভাবনার মুখ দেখছেন কৃষক ও খামারীরা
জোবায়দুর রহমান জুয়েল:
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং ভেটেরিনারি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ছোট-বড় সব মিলিয়ে গাইবান্ধা জেলায় গরুর খামার রয়েছে ১০৬০২ টি, ছাগল ৪৮৬৮টি ভেড়ার ৫৮৩টি । এসব গবাদি পশুর খামারগুলোতে খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে কৃষক ও খামারিরা ঝুকে পড়েছেন উন্নত জাতের ঘাস চাষে। খড়ের বিকল্প ও পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় গরু-ছাগলসহ অন্যান্য গবাদিপশুকে খাদ্য হিসেবে দেওয়া হচ্ছে ঘাস। খড়ের দামের তুলনায় এই ঘাস সাশ্রয়ী এবং উৎপাদন সহজ হওয়ায় ঘাস চাষে সম্ভাবনার মুখ দেখছেন খামারিরা। আবার অনেকেই এই ঘাস চাষ করে হচ্ছেন আত্মনির্ভরশীল। গাইবান্ধা সদর,সুন্দরগঞ্জ ,সাদুল্ল্যাপুর,পলাশবাড়ী,ফুলছড়ি, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার  বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে,পতিত জমি এবং বাড়ির আশপাশে ও রাস্তা ঢালু জায়গাতেও ঘাস চাষ হচ্ছে ব্যাপক হারে। অপরদিকে অনেক খামারিদের দাবি গোখাদ্য হিসেবে আগে ধানের খড় ব্যাবহার করা হত, বর্তমানে ধানের খড়ের দাম অনেক বেশি। এতে করে দুধ বা মাংস উৎপাদনে খরচ বেশি হয়। এখন তারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরামর্শ ও সহযোগীতায় উন্নত জাতের সুপার নেপিয়ার, পাকচং ও হোয়াইট জার্মান ঘাসের চাষাবাদ করছে। এতে করে গবাদি পশুর খাদ্যের চাহিদা মিটিয়েও ঘাস বাজারজাত করে হচ্ছে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। সদর উপজেলার পশ্চিম রাধা কৃষ্ণ পুর এলাকার খামারি শ্রী কৃষ্ণকান্ত বর্মন বলেন তার খামারে ৯টি গরুর জন্য ১০ শতাংশ জমিতে ঘাস চাষাবাদ করছেন ও তরফকাল গ্রামের মোঃ আনোয়ার হোসেন এর সাথে কথা বলে জানা যায় তিনি ৫০শতাংশ জমিতে ঘাস চাষ করে তার নিজের গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য। তিনি বলেন নিজের খামারে নিজের ঘাস না থাকলে কি চলে ,আমি নিজের খামারের ঘাসের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত ঘাস বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছি। সাদুল্ল্যাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জয়েনপুর গ্রামের  মোছাঃ নাজমা বেগম ৫২ শতাংশ জমি নিয়ে নেপিয়ার পাকচং-১ ঘাস লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, এতে করে তার ৭টি গরুর প্রতিদিনের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। তাকে গরুর জন্য অন্য কোনো ঘাসের চিন্তা করতে হচ্ছে না। আবার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্ৰামের খামারি মোঃ মাহমুদ হাসান বলেন আমার খামারে ৩১টি গরু আছে আমি ৪৬ শতাংশ  জমিতে নেপিয়ার ঘাস লাগিয়েছেন। তিনি আরো ১বিঘা জমি ঘাস লাগাবেন বলে জানিয়েছেন। ফুলছড়ি উপজেলা উদাখালি ইউনিয়নে উদাখালি গ্ৰামের খামারি মোছাঃ আজিরন বেগম বলেন আমার ঘরের ৪টি গরু আছে।প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শ মতে ১০ শতাংশ জমিতে নিপিয়ার পাকচং-১ ঘাস লাগাই এই ঘাস লাগাইতে খরচ খুবই কম। এই ঘাস মিষ্টি বেশি হওয়ায় গাভির দুধও বেশি হয়। এই ঘাস  চাষের জন্য বীজ বোনা এবং চারা লাগানো যায়। বীজ বুনলে দেড় মাস এবং চারা লাগালে এক মাসের মধ্যে ঘাস বড় হয়ে যায়। প্রতিমাসে অল্প ফসফেট, পটাশ এবং ইউরিয়া সার দিতে হয়। মাঝে মধ্যে একটু সেচও দিতে হয়। তিনি আরো বলেন, এই ঘাস চাষ করে গরু-ছাগলকে খাওয়ানোর পাশাপাশি জমি থেকে ঘাস বিক্রিও করছি। ঘাসের টাকায় সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ, জমির সার-কীটনাশক কেনার জন্য আগের মতো কষ্ট করতে হয় না।গ্রামের অনেকেই ঘাস চাষ করে লাভবান হয়েছেন। গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় নেপিয়ার পাকচং-১ ঘাসের চাহিদা অনেক বেশি।  ঘাস একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। একবার লাগালে কয়েক বছর ধরে ঘাস পাওয়া যায়। অন্য ফসলের মতো নেপিয়ার ঘাসের পরিচর্যা তেমন একটা করতে হয় না। সময়মতো সেচ আর সামান্য সার দিলেই ভালো ফলন হয়। অনেক কৃষক এবং খামারি এখন নেপিয়ার পাকচং-১ ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডঃ মাহফুজুর রহমান বলেন,গাইবান্ধা জেলায় মোট ঘাস চাষীর সংখ্যা ২৮৭০, ঘাস চাষে জমির পরিমাণ ৭২৪.৯০ একর, বাৎসরিক ঘাস উৎপাদন ৪৪১২৭.৭৬ মে.টন। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত চাষী ৮৫৩ জন। তিনি আরো বলেন কৃষক ও খামারিদের ঘাস চাষে প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে ।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২৪ জানুয়ারি ২৪/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here