কক্সবাজারে পতিত বনভূমিতে সবুজ বনায়ন সৃজন করেছেন বনবিভাগ

0
366
কক্সবাজারে পতিত বনভূমিতে সবুজ বনায়ন সৃজন করেছেন বনবিভাগ
কক্সবাজারে পতিত বনভূমিতে সবুজ বনায়ন সৃজন করেছেন বনবিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন বাঘখালী রেঞ্জে পতিত বনভূমিতে বন উজাড়ের ৩০ বছর পর পর্যাক্রমে নতুন ভাবে সবুজায়ন করার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজারের রামুর কচ্ছপিয়া, ঘিলাতলি ও জঙ্গল গর্জনিয়া মৌজা এলাকায় প্রায় ৭৬৫ হেক্টর পতিত বনভুমিতে রোপন করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির ২০ লাখ চারা গাছ। বনায়নকে ঘিরে এলাকার তিন হাজারের অধিক দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বনপ্রাণীর বাসস্থান নষ্ট, জৈব বিন্যাসের ক্ষতি ও অনুর্বরতা রোধে পতিত সব বনভুমিকে পর্যাক্রমে সবুজায়নের পাশাপাশি বননির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকার উদ্যোগ নেয়া হবে। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন বাঘখালী রেঞ্জের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া, ঘিলাতলি ও জঙ্গল গর্জনিয়া মৌজার বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো গাছপালাকে কেটে বন উজাড় করেন বনদস্যুরা। এতে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট, জৈব বিন্যাসের ক্ষতি ও অনুর্বরতা সৃষ্টি হয়েছে।এলাকাগুলোর খুব বেশি ভূমিক্ষয় ও পতিত জমিতে পরিণত হয়। এভাবে প্রায় ৩০ বছর পেরিয়ে যায়।

তিনদশক পর ওই পতিত বনভুমিতে নতুন করে বন সৃজনের উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সুফল নামে প্রকল্পের আওতায় বাঘখালী বিটের উখিয়ার ঘোনা ও থিমছরিতে ৩০০ হেক্টর, যার বরাদ্দ ৪৪ লাখ টাকা, ঘিলাতলি বিটের বেলতলিতে ৩৫০ হেক্টর যার বরাদ্দ ৫০ লাখ টাকা, কচ্ছপিয়া বিটের নদীর পশ্চিমকুল ও দুছরি এলাকায় ১১৫ হেক্টর যার বরাদ্দ ১৬ লাখ টাকা সহ মোট ৭৬৫ হেক্টর জমিতে বনায়ন সৃজন করা হয়েছে।

স্থানীয় শ্রমিকরা জানান, নার্সারী সৃজন, জঙ্গলকাটা, চারারোপন, বাগান রক্ষনাবেক্ষণ ও বাগান পাহারায় স্থানীয় জনগোষ্টির ৪৯০ জন মানুষের ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছরের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে । এখাতে ৪৯০ জন শ্রমিক পারিশ্রমিক হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা পেয়েছে। যা তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহে উপকৃত হয়েছে বলে জানান শ্রমিকরা। ঘিলাতলি বন বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খান জানান, চারাগাছ গুলো দিনদিন বেড়ে উঠছে। ঔষুধি গাছ বাগানের সর্বত্র দেখা মেলে। প্রায় ৩০ বছর পূর্বে বিলীন হওয়া বনে পুনরায় বনায়ন সৃজনও সঠিক পরিচর্যায় কারণে সর্বত্র চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।

বাঘখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা সরওয়ার জাহান বলেন, দেশীয় প্রজাতির গামারী, চিকরাশ, অর্জুন,আমলকি, হরতকি, বহেরা, কদম, কৃষ্ণচুড়া, বট, সোনালো, চাপালিশ, গর্জন, শাল,নিম সহ ২৮ প্রজাতির প্রায় ২০ লাখ চারা গাছ রোপন করা হয়েছে। বন বিভাগের পতিত জায়গাতে সবুজ বনাঞ্চল গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে সৃজিত বনায়নে দুই বার উডিং করা হয়েছে।এর আগে বনায়নে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরষ্কারও অর্জন করেছে। সুফল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দুই-তিন বছরের মধ্যে কক্সবাজারে ন্যাড়া ও পতিত পাহাড় আর দেখা যাবে না ।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, বনসংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষে বননির্ভর জনগোষ্ঠীর বিকল্পজীবিকার সংস্থানসহ নানান উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে বনের উপর মানুষের চাপ কমে আসবে। সুফল প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধির কয়েক লাখ চারা বিতরণ ও রোপণ করেছে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ। সুদীর্ঘ পথচলায় ২০২০ সালে সফল ‘বনায়ন’ এ প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার পান বাঘখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা। এধারা অব্যাহত রাখবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

৩০ জানুয়ারি ২০২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here