গাইবান্ধায় সমন্বিত দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পের সফলতায় বদলে গেছে হতদরিদ্রদের জীবন

0
801
গাইবান্ধায় সমন্বিত দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পের সফলতায় বদলে গেছে হতদরিদ্রদের জীবন
গাইবান্ধায় সমন্বিত দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পের সফলতায় বদলে গেছে হতদরিদ্রদের জীবন
জোবায়দুর রহমান জুয়েল: 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে বিআরডিবি সমম্বিত দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচির আওতায় এক গ্রাম এক পণ্যপল্লী গড়ে তোলার লক্ষ্যে জানুয়ারি ২০১৮ হতে জুন ২০২৩ ইং পর্যন্ত গাইবান্ধা সমন্বিত পল্লী দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড,গাইবান্ধা  উপপরিচালকের কার্যালয় হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের বরাদ্দ ৫০ কোটি ৫৪ লক্ষ্য টাকা, প্রকল্প ব্যয় ৪৯ কোটি টাকা। প্রকল্পে ৫৩৯ টি সমিতি গঠনের মাধ্যমে ১৮৬০০ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে নারী সদস্য সংখ্যা ১৩৯০৫ জন, পুরুষ সদস্য সংখ্যা ৪৬৯৫ জন। পণ্য ভিত্তিক পল্লী গঠন করা হয় ২২ টি। ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা হয় ২৬ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। বিআরডিবি কর্তৃক প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্রঋণের সহযোগিতা পেয়ে বদলে গেছে গাইবান্ধা জেলার  প্রতিটি উপজেলায় হতদরিদ্রদের জীবন যাপনের চিত্র। এতে করে হাজারো দরিদ্র পরিবারে যুবক ও যুব মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পের সহায়তা গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ,সাদুল্লাপুর উপজেলায় গড়ে ওঠে এ্যমব্রয়ডারী পল্লী, নকশি কাঁথা পল্লী, খামার পল্লী সহ আরো অনেক পল্লী। এ সকল পল্লীতে হাজার হাজার দরিদ্র নারী পুরুষ কাজ করে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। সদর উপজেলার খামার বোয়ালি এ্যমব্রয়ডারী পল্লীর সদস্য মোরশেদা বেগম বলেন, একটা সময় আমি খুব অভাবগ্রস্ত ছিলাম, অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হতো, ছেলে-মেয়েদেরকে স্কুলে লেখাপড়া করানোর মত খরচ জোগাতে পারতাম না, চিকিৎসা করার মত কোন টাকা পয়সা ছিল না , পরে আমি বিআরডিবি থেকে এ্যমব্রয়ডারীর উপর প্রশিক্ষণ নেই এবং সেখান থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নেই। এখন আমি এ্যমব্রয়ডারী কাজ করে মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করি। এই আয় দিয়ে আল্লাহর রহমতে এখন আমি অনেক ভালো আছি এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি।
ফুলছড়ী উপজেলার উদিয়াখালী  ইউনিয়নের কালির বাজারে লিটন চন্দ্র বর্মন বলেন, সমম্বিত পল্লী দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পে ইলেকট্রনিক্স এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি এবং ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ইলেকট্রনিক্স এর কাজ করে আমি এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা জনাব আবুল কালাম আজাদ বলেন সমম্বিত পল্লী দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পে আওতায় ৭৭টি দল গঠন করে ২৫৯৭জন কর্মী নির্বাচন করে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৯কোটি ২৫লক্ষ টাকা ৬% সুদে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলার রামভদ্র, রাজবাড়ী ,নয়ারহাট, কদমতলী, জানপাড়া এখন খামারপল্লী বা হাঁস পল্লী নামে পরিচিত পেয়েছি। উদ্যোক্তা আব্দুল মজিদ জানায়  বিআরডিবি থেকে হাঁসের খামারে উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি এবং ঋণ সুবিধা নিয়ে হাঁসের খামার স্থাপন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি। শুধু আমি একাই নই আমাদের গ্রামের প্রায় সকলেই বিআরডিবি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হাঁসের খামার গড়ে তুলে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়েছেন। সাদুল্লাপুর উপজেলার সমম্বিত পল্লী দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পে আওতায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে উদ্যোক্তা লাভলী বেগম গড়ে তুলেছেন জামুডাঙ্গা এ্যমব্রয়ডারী পল্লী সমতি।এই সমিতিতে প্রায় সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০জন এ্যমব্রয়ডারী কাজ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। সমিতির অন্যান্য সদস্যরা বলেন, আমরা পরিবারের যাবতীয় কাজ শেষ করে অতিরিক্ত সময়ে এমব্রয়ডারি কাজ করি এবং আমরা প্রতি মাসে ৭থেকে ৮হাজার টাকা আয় করি।এতে করে আমরা অভাব অনটন এর হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। পলাশবাড়ী উপজেলার উদ্যোক্তা মোছাঃ সাবিনা বেগম বিআরডিবি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গড়ে তুলেছেন ব্যাগ পল্লী।এখনে প্রায় ৩০০থেকে ৪০০ মহিলা কাজ করেন। আবার একই উপজেলায় গড়ে উঠেছে নুনিয়াগাড়ি এ্যমব্রয়ডারী পল্লী,নকশী কাঁথা পল্লী, যেখানে শত শত নারী পুরুষের কর্মসংস্থান সুযোগ হয়েছে। উদ্যোক্তা মিতু বেগম বলেন  সমম্বিত দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পে আওতায় প্রথমদিকে ২০ জন প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করি এবং পরবর্তীতে আমার এলাকার আশপাশে হতদারিদ্র মহিলাদেরকে নিয়ে এ্যমব্রয়ডারী পল্লী গড়ে তুলেছি। এখন আমার এই পল্লীতে ৬০০ হইতে ৬২০ জন কাজ করছেন। সবাই বর্তমানে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়েছেন। এছাড়াও রয়েছে নকশি কাঁথা পল্লী,যা ব্যাপকভাবে সফলতা লাভ করেছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরদস্ত ইউনিয়নের সিংজানি গ্রামের সুফলভোগী মোঃ সাজ্জাদুল রহমান “সিংজানি পুরুষ উন্নয়ন নার্সারি সমিতি” গড়ে তুলেছেন।তিনি বলেন প্রথমদিকে আমার একটি ছোট নার্সারি ছিল তারপর বিআরডিবি অফিস থেকে আমাকে পরামর্শ দেওয়ায় সেখানে আমি প্রশিক্ষণ নেই এবং ঋণ গ্রহণ করি। বর্তমানে আমি প্রায় ১২ বিঘা জমিতে নার্সারি করি। এই নার্সারির গাছে চারা বিক্রয় করে আমি এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। আমাদের গ্রামের ৫১টি পরিবার বিআরডিবির সহায়তা নিয়ে নার্সারি গড়ে তুলেছেন। এখন সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে সচ্ছলভাবে জীবন যাপন করছেন।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরদস্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ.খ.ম শরিফুল ইসলাম জর্জ বলেন , বাংলাদেশের পাঁচ বারের সফল রাষ্ট্র মহানায়ক দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে গাইবান্ধা দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্প প্রদানের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।পল্লী উন্নয়ন বোর্ড বিআরডিবির আওতায় এই ইউনিয়নে পিছিয়ে পড়া মানুষ গুলোর মধ্যে নার্সারি পল্লী, এ্যমব্রয়ডারী ,ইলেকট্রনিক্স ,গবাদি পশু পালন, সেলাই প্রশিক্ষন এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্য আমাদের এই এলাকার অত্যন্ত প্রাণহিত মানুষের জন্য এই প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আমাদের এই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বেকার যুবক-যুবতীদের মাঝে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে । বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই ধরনের প্রকল্প অব্যাহত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।
গাইবান্ধা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের উপপরিচালক মোঃ আব্দুল সবুর বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে গাইবান্ধা সমম্বিত পল্লী দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্প গাইবান্ধা জেলায় জানুয়ারি ২০১৮ হইতে জুন ২০২৩ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে । এটি একটি সফল প্রকল্প। গাইবান্ধা জেলায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে ১৮৬০০ জনকে । বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে মার্কেট লিংকেজ সৃষ্টি করে দেওয়া জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। তাদেরকে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার অব্যহিত রয়েছিল। যার ফলে এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০,০০০ (দশ হাজার)ও বেশি মানুষ কর্মস্থানে নিয়োজিত রয়েছে । যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তার প্রত্যেকে কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি আরো বলেন,এ প্রকল্পের কিছু অন্নন্য উদ্ভাবন রয়েছে সেটা হলো পণ্য ভিত্তিক পল্লী, একই ধরনের পণ্য দিয়ে একই ধরনের কাজ নিশ্চিত করা।প্রকল্পে আওতায় ২২টি পণ্য ভিত্তিক পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে। এতে করে মার্কেট লিংকেজ সৃষ্টির হয়েছে এবং ব্যাপক নারী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে,নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। গ্রাম থেকে শহরে যাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা উন্নয়নের যে জোয়ারে ভাসছে তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্পের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। এই উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য ২০২৩ সালে আমরা বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। যা গাইবান্ধার জন্য এবং এই প্রকল্পের জন্য একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত  হয়ে থাকবে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৪/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here