ইমরান নাজির, আঞ্চলিক প্রতিনিধি (মানিকগঞ্জ):
মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার টেপড়া বাজারের নিকট একাধিক সংস্থার নাম ও ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে স্থানীয় লোকজনের নিকট থেকে সঞ্চয়-আমানতের নামে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। পুলিশ এফআইআরভূক্ত আলমকে (৪৪) কোর্টে চালান দিলেও অন্যরা জামিনে বেরিয়ে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ সকল সমিতির বিরুদ্ধে গ্রামের সহজ-সরল, দরিদ্র মানুষদেরকে অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সঞ্চয়ের নামে কোটি-কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়। এ অবস্থায় সঞ্চয়ের টাকা ফেরতের জন্য ভূক্তভোগী গ্রাহকেরা দ্বারে-দ্বারে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলার টেপড়া গোবিন্দবাড়ী গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে আলম, খোর্দ্দ টেপড়ার বলাই দাসের ছেলে জগনাথ দাস (৪৫), ছোট কুষ্টিয়া গ্রামের কানাই শেখের ছেলে রজ্জব আলী ও শিবরামপুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী মাষ্টারের যোগসাজসে গ্রামীণ উন্নয়ন মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ ও গ্রামের আলো নামে দু’টি এনজিও সংস্থার নামে লোকজনের নিকট থেকে সঞ্চয়-আমানত বাবদ বিভিন্ন অংকের টাকা নেয়। জমাকৃত টাকা সাত বছরে দ্বিগুণ হবে এমন শর্তে এরা অনেকের নিকট ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা নেয়। তিন বছর আগে সুদ-আসলে টাকা ফেরৎ দেয়ার কথা থাকলেও তা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। তারা বিভিন্ন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে গ্রাহকদের তাদের টাকা ফেরৎ দিতে অসম্মতি জানিয়ে অসদাচরণ করতে থাকে।
ভূক্তভোগী চর-চারিপাড়া গ্রামের জলিল বিশ্বাসের স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৪৫) দেড় লাখ টাকা ফেরৎ পাওয়ার দাবিতে শিবালয় থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ আলম হোসেনকে গ্রেফতার করে কোর্টে চালান দেয়। ৫ ফেব্রুয়ারী আলম জামিনে আসলে কয়েক দিন পর অন্যরাও জামিন পায়। শিবরামপুর গ্রামের সাহাজুদ্দিনের ছেলে শওকত হোসেন সাকিম উক্ত চার অভিযুক্তের নিকট দশ লাখ টাকা ফেরৎ না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করে। ঐ চার ব্যক্তির নিকট স্থানীয় অপর ৪২ জন প্রায় এক কোটি ১৩ লাখ টাকা সঞ্চয়-আমানত বাবদ জমা দেয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তা ফেরৎ না পেয়ে অনুরূপ আবেদন করে।
গোবিন্দবাড়ী গ্রামের ভূক্তভোগী নূরুল ইসলাম জানান, গ্রামীণ উন্নয়ন মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে তার স্ত্রী নামে একটি সঞ্চয় পত্রে ৩ বছর মেয়াদী ৩ লক্ষ টাকার সঞ্চয় পত্র করা হয়। তখন কথা ছিল তার সঞ্চয়ের টাকা প্রয়োজন হলে সাত দিন আগে জানাইলে উক্ত টাকা ফেরৎ দিয়ে দেবে। কিন্তু, এখন লভ্যাংশের টাকা তো দুরের কথা তার সঞ্চয়ের মূল টাকা ফেরৎ না দিয়ে উল্টো হুমকি দিচ্ছে।
শ্রীবাড়ী গ্রামের মো: লিটন মিয়া জানান, ১৫ বছর আগে আমি ১০ লক্ষ টাকা জগন্নাথের মাধ্যমে জমা রাখি। গত দুই বছর যাবৎ আমার সঞ্চয়ের টাকার জন্য বহুবার গিয়েও ফেরৎ পাচ্ছি না। আমার সব সঞ্চয় এই জায়গায়। এই টাকা গুলিই জীবনের শেষ সম্বল। আমার পরিবাব নিয়ে চলতে পারিছি না। আমি এখন কি করব।
ভাকলা গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, স্ত্রী ও তার নামে দু’টি সঞ্চয় পত্রে ১০ লক্ষ টাকা জমা আছে। মেয়েকে বিয়ে দিবো বলে এই সঞ্চয় পত্রে টাকা জমা রেখে ছিলেন তিনি। মেয়ে বিয়ে দেবার সময় তিনি ঐ এনজিরও কাছে বহুবার গিয়েও তার ঐ টাকা ফেরৎ পায়নি। নিরুপায় হয়ে তিনি ঋণ করে তার মেয়েকে বিয়ে দিতে হয়েছে। এখন তার মেয়ের ঘরে সন্তান হলেও তার সঞ্চয়ের টাকা এখনো পাননি।
উক্ত সমিতির সভাপতি জগন্নাথ চন্দ্র দাস জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের কমিটির ভিতরে গড়মিল থাকার কারণে গ্রাহকদের টাকা ফেরৎ দিতে সমস্যা হচ্ছে। সময়মতো গ্রাহকদের টাকা ফেরৎ না দেয়ার কারণে আমাদের বিরুদ্ধে প্রত্যারণার মামলাও হয়েছে। তবে, এ পর্যন্ত সঞ্চয়ের প্রায় তিন কোটি টাকা গ্রাহকরা পাবে বলে তিনি স্বীকার করেন।
উপজেলা সমবায় অফিসার সরস্বতী রাণী দাস জানান, উক্ত সমিতির কাগজ পত্র না দেখে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার তদন্ত করা হবে। তদন্তর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: বেলাল হোসেন জানান, আমরা একটি অভিযাগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে সমবায় কর্মকর্তাকে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি একটু জটিল তাই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতেই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/১৪- ফেব্রুয়ারি-২৪/এসএএইচ