যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা ৩৩০ জনের মধ্যে প্রথম দফায় ফেরত ১৬৫

0
263
যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা ৩৩০ জনের মধ্যে প্রথম দফায় ফেরত ১৬৫
যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা ৩৩০ জনের মধ্যে প্রথম দফায় ফেরত ১৬৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মিয়ানমারের জাহাজে ১৬৫ বিজিপি, বিকালের মধ্যে বাকিদের হস্তান্তর ফেরত পাঠানো হচ্ছে বিজিপির ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিককে। যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে।তাদের মধ্যে রয়েছেন মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে প্রথম দফায় ১৬৫ জনকে কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনী জেটিঘাট থেকে জাহাজে করে পাঠানো হয় গভীর সমুদ্রে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমারের জাহাজে। বাকিদেরও বিকালের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। ১৬৫ বিজিপি গেল মিয়ানমারের জাহাজে, বিকালের মধ্যে বাকিদের হস্তান্তর ফেব্রুয়ারির শুরুতে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পর মিয়ানমারের এই নাগরিকদের বিজিবি হেফাজতে কক্সবাজারের টেকনাফ ও বান্দরবানের ঘুমধুমের দুটি স্কুলে রাখা হয়েছিল। হস্তান্তরের জন্য বৃহস্পতিবার ভোরে বাসে করে তাদের উখিয়ার ইনানী উপকূলে নৌবাহিনীর জেটি ঘাটে নিয়ে আসা আনা হয়। ওই ৩৩০ জনের মধ্যে ৯ জনকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসাও দেওয়া হয়। তাদের ইনানীতে নিয়ে আসা হয় অ্যাম্বুলেন্সে করে।এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুলিশ কর্নেল মায়ো থুরা নউং এর নেতৃত্বে বিজিপির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সকালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জাহাজে করে ইনানীতে নৌবাহিনীর জেটিঘাটে আসেন। তারাই বিজিবির কাছ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের বুঝে নেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানান, ইনানীতে মিয়ানমারের নাগরিকদের রাখা হয় একটি অস্থায়ী তাঁবুতে। বিজিপি প্রতিনিধিরা আসার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার বিষয়ক পরিচালক মো. রাকিবুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব মো. রাশেদ হোসেন চৌধুরী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত র উপস্থিতিতে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বিজিপি সদস্যদের নাম ধরে ডেকে, তাদের শনাক্ত করার পর সবকিছু মিলিয়ে তালিকায় স্বাক্ষর করে দুই পক্ষ। পরে তাদের জাহাজে তোলা শুরু হয়।মিয়ানমার নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বাংলাদেশের সীমানায় এসে সকাল থেকে গভীর সাগরে অবস্থান করছিল। পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের পর্যটকবাহী জাহাজ কর্ণফুলীতে করে পৌঁছে দেওয়া হয় মিয়ানমারের ওই জাহাজে। ১৬৫ বিজিপি গেল মিয়ানমারের জাহাজে, বিকালের মধ্যে বাকিদের হস্তান্তর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় সঙ্গে করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে এসেছিলেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা। আপাতত সেসব তাদের সঙ্গে ফেরত দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিজিবি সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (জিএস ব্রাঞ্চ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সীমান্তের অবস্থা এখন অনেক ভালো। দুই দেশের পেট্রোল বেড়েছে।এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে নৌবাহিনীর জেটি ঘাট এলাকায় নেওয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির পাশাপাশি কোস্ট গার্ড সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।বাহিনীগুলো হল- তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ। তারা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে তারা সাফল্য দেখিয়েছে।আরাকান আর্মি (এএ) এ জোটের অন্যতম অংশ। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী এটি। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।

রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। যুদ্ধের গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ছে এপাড়ে। এরকম ঘটনায় অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন কয়েকজন। ঢাকায় মিয়ানমারের দূতকে ডেকে এসব ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানানো হয় বাংলাদেশের তরফ থেকে।এদিকে যুদ্ধের মধ্যে বিদ্রোহীরা বিজিপির কয়েকটি সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করে নিলে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে। পরের কয়েক দিনে তাদের সংখ্যা পৌঁছায় ৩৩০ জনে। শুরুতে তাদের নিরস্ত্র করে বিজিবি হেফাজতে রাখা হয় বান্দরবানের একটি স্কুলে। পরে তাদের একটি অংশকে সরিয়ে নেওয়া হয় টেকনাফে।এর মধ্যেই তাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের তরফ থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।মিয়ানমারও তাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়।কিছুদিন আগে ভারত যেভাবে মিয়ানমারের সৈন্যদের ফেরত পাঠিয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সময়ে প্রত্যাবাসনের জন্য বিজিপি সদস্যদের আকাশপথে ফেরত পাঠানোর কথা বলেছিল বাংলাদেশ।
তবে ধারণক্ষমতা এবং একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে যাওয়ার সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে পরে মিয়ানমারের প্রস্তাবে তাদের নৌপথে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

আলোকিত প্রতিদিন/১৫ ফেব্রুয়ারি-২৪/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here