উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে অনুপ্রবেশ করে হট্টগোল সৃষ্টি, সরকারী কাজে বাধাদান, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল কেড়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলার চেষ্টা ও অসদাচরণের অভিযোগে দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় এবং একজন নারী কর্মচারীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় শেরপুরের নকলায় শফিউজ্জামান রানা নামে এক যুবককে ৬ মাসের কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দন্ডপ্রাপ্ত যুবক একটি পত্রিকার সংবাদদাতা বটে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিহাবুল আরিফ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এই কারাদণ্ড দেন।! গত মঙ্গলবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়ে তাকে শেরপুর কারাগারে পাঠানো হয়। কথিত সাংবাদিক রানাকে কারাগারে প্রেরণের ফলে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। সাধারণ জনগণের ফেইসবুকে পোস্ট ও সরেজমিনে জিজ্ঞাসায় তা পরিষ্কার হয়ে উঠে । এদিকে ২/৩টি গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ঘটনার সাথে জড়িত ইউএনও, আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভুক্তভোগীর মতামত যাচাই না করে শফিউজ্জামান রানাকে একজন শুধুই সাংবাদিক পরিচয়ে একপেশে খবর প্রচার করায় উপজেলা প্রশাসন বিব্রত ।স্থানীয় সাংবাদিরাও এমন খবর প্রচারে বিস্মিত। তরুণ উদ্যোক্তা রুমান জানান, সকল প্রকার আইন-কানুন মেনে তিনি একটি ছোট সেমাই তৈরীর কারখানা শুরু করেছেন। প্রতিমাসে রানা চাঁদা আনতে যায়। চাঁদা না দিলে মোবাইল কোর্ট করিয়ে জরিমানা করাবে বলে হুমকী দেয়। ঠিকাদার রাজীব বলেন, আমি রাস্তার উন্নয়নমূলক কাজ করার সময় সাংবাদিক রানা বরাবরই কৌশলে চাঁদা দাবি করে আসতো। চাঁদা দিতে অসম্মতি জানালেই সাংবাদিক পরিচয়ে কাজে বাধা দেয়। আমরা সরকারের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ঠিকাদারগণ পুরোপুরি রানার কাছে একপ্রকার জিম্মি হয়ে আছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, রানা সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলতে রাজি নয়। এসএসসি পাশের সনদপত্র অনুযায়ী রানার জন্ম তারিখ দুইটি। তিনি প্রথমে এসএসসি পাশ করে বাংলাদেশ সেনাবহিনীতে যোগ দেন। অসদাচরণের দায়ে সেখান থেকে তিনি বহিষ্কৃত হয়ে এলাকায় এসে নকলা হাসপাতাল রোডে ঘর ভাড়া নিয়ে ঔষুধ বিক্রির দোকান দেন এবং সেখানে ডাক্তার পরিচয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ রোগী দেখছেন। এই ফাঁকে পুনরায় চাকরির আশায় শফিউজ্জামান রানা তার নাম ও বয়স পরিবর্তন করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন।তথ্য গোপনের অপরাধে তিনি একাজে একজন অপরাধী বলে মনে করেন অনেকে।মানুষের পাশাপাশি সরকারের সাথেও প্রতারণা করার এমন লোকের সাঁজা হওয়াতে এলাকাবাসির সবাই খুশি এবং তাদের ধারণা এমন যে সাজাটা তার আরো আগে হওয়া উচিত ছিলো।তাতে নকলাবাসী স্বস্তিতে থাকতে পারতো। প্রমাণ হিসেবে একজন বললেন,রানার কারাদন্ড হওয়ায় নকলার কেউ সহমর্মিতা জানিয়ে কোন প্রকার কিছু বলছেননা; বরং অনেকে প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেইসবুকে স্বস্তির পোস্ট করেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান সুজা বলেন, আমার রাজনৈতিক পরিচয় ও ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় কথিত সাংবাদিক রানা। এ বিষয়ে আমি থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। তার সাঁজা হওয়াতে আমরা আপাতত স্বস্তিতে আছি। রানা প্রায়ই কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সম্মানি লোকজনের নামে ফেইসবুকে ছোট্ট একটা বার্তায় জানান দেয়- বিস্তারিত আসিতেছে, কিন্তু অজ্ঞাত কারনে পরে আর কিছুই আসে না; বরং তার টাইম লাইন থেকে আসিতেছে নামক ওই রহস্য জনক পোস্টটি সে ডিলিট করে দেয়। মানুষকে হয়রানি করার অপকৌশলের বিষয়টি সবাই এখন বুঝে গেছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। নকলা পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান লিটন বলেন, সাংবাদিক রানার কাজকর্ম সবসময় সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সে ফেসবুকে সারাক্ষণ কাউকে না কাউকে নিয়ে বাজে ও অসত্য মন্তব্য করেই চলেছে। মিথ্যা ভূতুরে কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সম্মানি লোকজনের নামে ফেইসবুকে লেখালিখে করে সবসময় হয়রানী করাই যেন তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, সাংবাদিক রানা আগে ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত আজকের বাংলাদেশ পত্রিকায় কাজ করতো। তার অপকর্মের জন্য তাকে পত্রিকা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। যদিও সে এখনো আজকের বাংলাদেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছে বলে ফেইসবুকে পোস্ট করতে দেখাযায়। মাঝে মধ্যে সে সরকারি প্রোগ্রাম গুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বয়কট করে। মানুষকে মিথ্যা সংবাদের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে টাকা দাবী করে। তার সাঁজা হওয়াতে আমরাও খুশি। সে এর আগে পুলিশ সুপারকে নিয়েও ফেসবুকে হয়রানী মূলক লেখা পোষ্ট করেছিল। তবে এখন হয়তোবা তা ডিলিট করে দিয়েছে। সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানার বর্তমান স্ত্রী (৩স্ত্রীর মধ্যে দ্বিতীয়) বন্যা আক্তার বলেন, গত মঙ্গলবার শফিউজ্জামান তাঁর ছেলে শাহরিয়ার জাহানকে সঙ্গে নিয়ে এডিপি প্রকল্পের কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ক্রয়সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে ইউএনও কার্যালয়ে আবেদন করে। আবেদনটি কার্যালয়ের কর্মচারী গোপনীয় সহকারী (সিএ) শীলার কাছে দিয়ে রিসিভড কপি চায়। তখন শীলা জানায় ইউএনও’র অনুমতি ছাড়া রিসিভড কপি দিতে পারবনা। পরে শফিউজ্জামান জেলা প্রশাসককে মুঠোফোনে বিষয়টি জানালে এতে ইউএনও ক্ষুব্ধ হন। একপর্যায়ে নকলা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ইউএনও এবং সিএ শীলার সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে আমার স্বামীকে আটক করে। পরে এসিল্যান্ড শিহাবুল আরিফ ওই কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শফিউজ্জামান রানাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। বন্যা আক্তার তার স্বামীর মুক্তি কামনা করছেন।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি