শেরপুরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা’র সাথে অশোভন আচরণ করায় মানববন্ধন

0
596
মো: নুর হোসাইন, বিশেষ প্রতিনিধি
শেরপুরের নকলায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল মুনসুর আহমেদ-এঁর সাথে অশোভন আচরসহ অপ্রীতিকর ঘটনার কারনে শফিউজ্জামান রানা নামে এক যুবকের সুষ্ঠু বিচার চেয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরের দিকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক আয়োজিত মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, সার বীজ ডিলার এসোসিয়েশন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ, উপজেলা শ্রমিক ফেডারেশন, শেরপুর সড়ক পরিবহণ ইউনিয়ন নকলা শাখাসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠন এবং উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে ব্যানার নিয়ে একত্বতা ঘোষণা করা হয়। আগের দিন উপজেলা প্রশাসনের সকল অনুষ্ঠান বয়কট করে পরের দিনই অফিসে গিয়ে সরকারি অফিসে অনুপ্রবেশ করে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল তছনছ করে ফাইল ছিড়াসহ বিভিন্ন ফাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে হট্টগোল করা, সরকারি কাজে অন্যায়ভাবে বাধাদান করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি ও অসদাচরণ করা এমনকি একজন নারী কর্মচারীকে উত্যক্ত করা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত সকলকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার ও ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী, জেলা পরিষদের সদস্য সানোয়ার হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান সুজা, দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সোহেল, সার বীজ ডিলার সমিতির সভাপতি জয়েন উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বিদ্যুৎ, নকলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সরকার বাবু, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মো. খোরশেদ করিম শ্যামল, শেরপুর সড়ক পরিবহণ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর ওয়ার্ড কান্সিলর জরিফ হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, যাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে আমার স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক এমন একজন মুক্তিযোদ্ধার গায়ে হাত দেওয়া মানে সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের গায়ে হাত দেওয়া। আর একজন মুক্তিযোদ্ধার গায়ে হাত দেওয়া মানে এখনো স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি মাথা উঁচু করে চলার চেষ্টা করছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সময় সুযোগে স্বাধীনতাকে পদদলিত করতেও  কার্পণ্য করেনা!
স্বাধীনতার বীর সৈনিরকদের গায়ে হাত দেওয়া, সরকারি অফিসে অনুপ্রবেশ করে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল তছনছ করে ফাইল ছিড়াসহ বিভিন্ন ফাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে হট্টগোল করা, সরকারি কাজে অন্যায়ভাবে বাধাদান করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি ও অসদাচরণ করা এমনকি একজন নারী কর্মচারীকে উত্যক্ত করা এবং  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত সকলকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করার বিচার আরো কঠিন হওয়া উচিত ছিলো। তার ৬ মাসের সাঁজা কম হয়েছে; ৬ বছরের সাঁজা হলেও জাতির এই কলঙ্ক মুছা যাবে না বলে মুক্তিযোদ্ধাগন তাদের বক্তব্যে মন্তব্য করেন।
তারা বলেন ‘রানা সর্বজন চিহৃত একজন চাঁদাবাজ। সে কখনোই সংবাদ মাধ্যমে খবর করে না। সে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মুখ খোলতে সবাই পায়। রানা কিভাবে সাংবাদিক হলেন এমন কিছু তথ্যও তারা উত্থাপন করেন। তারা বলেন-  রানা এসএসসি পাশের সনদপত্র অনুযায়ী রানার জন্ম তারখি দুইটি। সে প্রথমে এসএসসি পাশ করে বাংলাদেশ সেনাবহিনীতে যোগদেন। অসদাচরনের দায়ে সেখান থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরে এলাকায় এসে নকলা হাসপাতাল রোডে ঘর ভাড়া নিয়ে ঔষুধ বিক্রির দোকান দেন। সেখানে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ রোগী দেখছেন। এই ফাঁকে পুনরায় চাকরির আশায় শফিউজ্জামান রানা তার নাম ও বয়স পরিবর্তন করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে। এটা সরকারের কাছে তথ্য গোপনের অপরাধের সামিল, যা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে তিনি মনে করেন। রানা এখন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারের সাথেও প্রতারণা করছে বলে তারা মনে করছেন। তারা জানান, রানার সাঁজা হওয়াতে নকলাবাসী খুব খুশি। সে প্রেফতার হওয়ার পরে সেলুন কর্মীসহ মুদির দোকানদার ও শাক-সবজি বিক্রেতাসহ অনেকেই নকলা বাজারে মিষ্টি বিতরণ করছেন। এতেই বুঝযায় রানা জেলে থাকায় নকলাবাসী স্বস্তি পেয়েছেন। তবে তার এই সাজাটা আরো আগে হওয়া উচিত ছিলো, তাতে নকলাবাসী আগেই স্বস্তি পেতেন। প্রমান হিসেবে তিনি বলেন- রানার কারাদন্ড হওয়ায় নকলার কেউ সহমর্মিতা জানিয়েও কোন প্রকার কিছু বলছেননা; বরং অনেকে প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেইসবুকে স্বস্তির পোস্ট দিয়েছেন।
অনেকে জানান, রানা সম্মানী লোকদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও তাদের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে নানান অপপ্রচার চালায় কথিত সাংবাদিক রানা। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগও রয়েছে। রানা প্রায়ই কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সম্মানি লোকজনের নামে ফেইসবুকে ছোট্ট একটা বার্তায় জানান দেয়- বিস্তারিত আসিতেছে, কিন্তু অজ্ঞাত কারনে পরে আর কিছু আসে না; বরং তার টাইম লাইন থেকে আসিতেছে নামক ওই রহস্য জনক পোস্টটি ডিলিট করে দেয়। মানুষকে ব্ল্যাকমেইল ও হয়রানি করার অপকৌশলের বিষয়টি সবাই এখন বুঝে গেছেন বলেও তারা মন্তব্য করেন। সাংবাদিক রানার কাজকর্ম সবসময় সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সারাক্ষণ কাউকে না কাউকে নিয়ে বাজে ও অসত্য হীন মন্তব্য করাই যেন রানার কাজ। মিথ্যা ভূতুরে কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সম্মানি লোকজনের নামে ফেইসবুকে লেখালিখে করে সবসময় হয়রানী করা তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে। এসব প্রতিহত করতে সুশীল ও বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান বক্তারা।
নকলায় এমন হলুদ ও চাঁদাবাজ সাংবাদিকের প্রয়োজন নেই। যে বা যারা দেশ ও জাতির উন্নয়নে সাংবাদিকতা করবেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে সবসময় তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করার আশাব্যক্ত করেন তারা।
দেশ-বিদেশের সকল সাংবাদিকদের কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়ে বক্তারা বলেন- আপনারা প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরুন। আংশিক বা কোন বিকৃত ঘটনা দিয়ে খবর করে দেশ ও জাতিকে কলঙ্কিত করবেন না। শুধুমাত্র কথিত সাংবাদিক রানা ও তার পরিবারের লোকজনের দেওয়া তথ্য দিয়ে খবর প্রচার প্রকাশ না করতে অনুরুধ করা হয়। তারা বলেন কয়েকটি খবর ছাড়া এপর্যন্ত যেসকল বিব্রতকর শিরোনামে খবর এসেছে তা সত্যিই দুঃখ জনক। এমন শিরোনামে খবর প্রচার করা হলে স্বাভাবিক কারনেই সকল সাংবাদিকের মনে আঘাত লাগবে। তাই চটকদার খবরের আশায় বিব্রতকর শিরোনামে খবর করার আগে প্রকৃত ঘটনা জেনে নিতে সকল গণমাধ্যম কর্মীদের অনুরোধ জানানো হয় এই মানববন্ধন থেকে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাগন এটাও বলেন, সাংবাদিকতার ন্যুনতম যোগ্যতা না থাকায় ও বরাবর কাউকে না কাউকে হেয় করার উদ্দেশ্যে অসংলগ্ন খবর পাঠিয়ে তা ছাপাতে একের পর এক অনুরোধ করায় স্থানীয় আজকের বাংলাদেশ পত্রিকা থেকে বহিস্কৃত রানার যদি উপযুক্ত বিচার না হয় তাহলে দেশব্যাপি কঠিন আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। এছাড়া সত্য ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করলে সেক্ষেত্রেও কঠিন কর্মসূচি আসবে বলে বক্তারা সাফ জানিয়েদেন। তারা বলেন- একটি সত্য ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে মূল ঘটনাকে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করা ও নির্দোষ কারো উপর দায় চাপানো হলে এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া হবেনা। তাহলে অপরাধীরা অপরাধের মাত্রা এবেড়ে যাবে এবং অন্যরা অপরাধে উৎসাহি হবেন বলে তারা মনে করেন।
লোকিত প্রতিদিন/এপি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here