ম্যাচ হারে অপেক্ষা বাড়লো বাংলাদেশের

0
317
ম্যাচ হারে অপেক্ষা বাড়লো বাংলাদেশের
ম্যাচ হারে অপেক্ষা বাড়লো বাংলাদেশের

ক্রীড়া ডেস্ক:

আক্ষেপ নিয়েই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মাঠ ছাড়তে হলো। তাওহীদ হৃদয়ের এমন দুর্দান্ত ইনিংসের পর শুরুতেই লঙ্কানদের ব্যাটিং লাইনআপকে ধসিয়ে পেসাররা আশা জাগিয়েছিলেন। শেষটা জমিয়ে দিলেও সিরিজ জিততে না পারার আক্ষেপ রয়ে গেল! দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৭ বল আগে ৩ উইকেটে লঙ্কানদের এই জয় বাংলদেশকে অপেক্ষাতেও রাখলো। এখন সিরিজের শেষ ম্যাচটি রূপ নিয়েছে অলিখিত ফাইনালে। ওই ম্যাচে যারা জিতবে, তাদের ঘরেই যাবে ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের দেওয়া লক্ষ্যটা খুব সহজ ছিল না। ৪৩ রানে তিন উইকেট তুলে দারুণ সূচনাও পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে চারিথ আসালাঙ্কা ও পাথুম নিসাঙ্কা মিলে বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচটি এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়েছেন। তাদের ১৮৩ বলে ১৮৫ রানের জুটির ওপর দাঁড়িয়েই শ্রীলঙ্কা পৌঁছে যায় ২২৮ রানে। এমন ম্যাচে হতাশার ফিল্ডিংও দায়ী বলতে হবে। জমে যাওয়া আসালাঙ্কা ৬ রানেই ফিরে যেতে পারতেন! কিন্তু লিটনের পিচ্ছিল হাত তার ক্যাচ নিতে পারেনি। তাসকিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বল আসালাঙ্কা দূর থেকেই খেলেছিলেন। যা ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে চলে যায় গালিতে। কিছুটা কঠিন হলেও সেই ক্যাচটি লিটন নিতে পারেননি। আর জীবন পেয়ে আসালাঙ্কা উপহার দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ৯১ রানের ইনিংস। ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরেছেন পাথুম নিসাঙ্কা। লঙ্কান এই ওপেনার পেয়েছেন ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরি। ৭৩ রানে জীবন পেয়েছিলেন লঙ্কান এই ওপেনারও। পরে সুযোগটা বেশ ভালো ভাবে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটি ভেঙেছেন মিরাজ। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে লিটনকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন। মিরাজের বলে আউট হওয়ার আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে লঙ্কানদের সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়তেও অবদান রাখেন তিনি। ১৯৯০ সালে আরভিন্দ ডি সিলভা ও আর্জুনা রানাতুঙ্গার ১৩৯ রানের জুটি ছিল এতদিন চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ। রেকর্ড জুটি গড়া নিসাঙ্কা ১১৩ বলে ১৩ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৪ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন। এরপর সঙ্গীকে হারিয়ে সেঞ্চুরির খুব কাছে থাকা আসালাঙ্কাও সাজঘরে ফিরলে ছন্দপতন ঘটে ইনিংসে। তাকে ফিরিয়েই ওয়ানডে ক্রিকেটে শততম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন তাসকিন। ৬ রানে জীবন পাওয়া আসালাঙ্কা শেষ পর্যন্ত ৯৩ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৯১ রানের ইনিংস খেলেছেন। দুই সেট ব্যাটারকে ফেরাতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। লিয়ানাগেকে তানজিম হাসান আউট করলে লঙ্কানদের বিপদ বাড়ে আরও। কিন্তু ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও দুনিথ ভেল্লালাগে ঠাণ্ডা মাথায় খেলে শ্রীলঙ্কাকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন। জয় থেকে দুই রান দূরে থাকতে হাসারাঙ্গা ১৬ বলে ২৫ রান করে আউট হলেও ভেল্লালাগে অপরাজিত থাকেন ১৫ রানে। তাদের ব্যাটেই শ্রীলঙ্কা ১৭ বল আগে ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচটি জিতে নিয়েছে। অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ে সহায়তা করেছিল শিশির!  প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আগের ম্যাচে লঙ্কানরা ভুগেছে, আজ ভুগেছে বাংলাদেশ। তারপরও বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং সুযোগ তৈরি করেছিল। ফিল্ডাররা সুযোগগুলো নিতে পারলে ম্যাচটি জেতা সম্ভব হতো। শরিফুল ও তাসকিন দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। মিরাজ, তাইজুল ও জুনিয়র সাকিব নিয়েছেন একটি করে উইকেট।আগের ম্যাচে গোল্ডেন ডাকে ফিরিছেন লিটন। ২য় ম্যাচে  রান করতে পারেননি তিনি। রানে ফিরতে মরিয়া হয়ে থাকা লিটন ম্যাচ শুরুর আগে প্রেসবক্স প্রান্তের নেটে বেশ খানিকক্ষণ অনুশীলন করেছিলেন। তার পরেও ভাগ্য বদলালো না। প্রথম ওভারেই রানের খাতা না খুলে আউট হন তিনি। তার উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ অস্বস্তিতেও পড়ে যায়। সেখান থেকে নাজমুল হোসেন শান্ত এবং সৌম্য সরকার মিলে প্রতিরোধ গড়েছেন। তাদের ৭২ বলে ৭৫ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। শান্ত দুইবার জীবন পেয়ে খেলেছেন ৪০ রানের ইনিংস। ৩৯ বলে ৬ চারে শান্ত তার ইনিংসটি সাজিয়েছেন। শান্তর আউটের পর তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন সৌম্য। তবে ৫৪ বলে ৫৫ রানের জুটির পর হাসারাঙ্গাকে রিভার্স সুইভ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বাঁহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটার। তার আগে অবশ্য দ্রুততম দুই হাজার রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেন তিনি। সৌম্য ৬৪ ইনিংসে এই ক্লাবে প্রবেশ করেছেন। বাংলাদেশের আর কোনও ব্যাটার এত কম ইনিংসে ২ হাজার রান করতে পারেননি। পরে ৬৬ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৬৮ রানের ইনিংস খেলে তিনি আউট হয়েছেন। একই ওভারে মাহমুদউল্লাহকেও ফেরান হাসারাঙ্গা। লঙ্কান এই লেগ স্পিনারকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাট-বলের সংযোগ না হওয়ায় রানের খাতা না খুলেই ফিরতে হয় তাকে। পরে মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে তাওহীদ হৃদয় এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ৫৭ বলে ৪৩ রানের জুটি হতেই হাসারাঙ্গার বলে কাটা পড়েন মুশফিক। অথচ আগের ম্যাচে লঙ্কান এই লেগস্পিনারকে সুযোগই দেননি তিনি। আজ ৮ রানে জীবন পাওয়ার পর ২৫ রানের মাথায় হাসারাঙ্গার ফুল লেংথ ডেলিভারি সুইপ করতে গিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। তাওহীদ তখনও এক প্রান্ত আগলে খেলে গেছেন। প্রথমে মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ২৮ বলে ১৬ এবং তানজিম হাসান সাকিবের সঙ্গে ৬২ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েছেন। এই জুটিতে রান কিছুটা কম হওয়ায় চাপ বেড়ে যায় তাওহীদের ওপর। তবে তাসকিনকে নিয়ে তার ২৩ বলে ৫০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিটাই দলের স্কোরকে ২৮৬ রানে নিয়ে গেছে। তাসকিন ২ চার ও ১ ছক্কায় ১০ বলে ১৮ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন। তাওহীদ অল্পের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছেন। ১০২ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

আলোকিত প্রতিদিন/১৬ মার্চ-২৪ /মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here