মোঃ আবদুল ওয়াদুদ, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বর্তমানে ১৫০ জন দালাল সক্রিয় রয়েছেন। তারা মেডিকেলের মেইন গেট ও পূর্ব গেটে ৭৫টি দোকানের হয়ে কাজ করেন। এসব দালালদের কেউই কোনো দোকানের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী নন। রোগীর স্লিপ এনে দিলেই কয়েক গুণ বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করেন দোকান মালিকরা। আর বিনিময়ে দালালদের দেন কমিশন। আর এসব টাকার ভাগ যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের কতিপয় নেতাদের পকেটেও। এসব দালালদের নিয়ন্ত্রণের নেপথ্যে রয়েছে এসব নেতাদের সুনজর। এতে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও দালাল নির্মূলে নেই কার্যকরী পদক্ষেপ। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের মেইন গেট ও পূর্ব গেটে অন্তত ১০০টি দোকান আছে। এর মধ্যে ৭৫টি দোকানে দালাল দিয়ে স্লিপ ব্যবসা করা হয়। রোগীর স্বজন সেজে এসব দালালরা অন্যান্য রোগীর স্লিপ নিয়ে নেন কৌশলে। পরে ওষুধের স্লিপ এনে দিলে সেটি তিন-চার গুণ বেশি দামে বিক্রি করেন দোকান মালিকরা। এরপর সেই টাকা থেকে ভাগ পান দালালরাও। অপরদিকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে দালালদের পরিচিত ওয়ার্ডবয় এবং সর্দার থাকেন। তারাও এই বিক্রির একটি ভাগ পান। অভিযোগ উঠেছে- প্রতি বৃহস্পতিবার এসব দোকান থেকে ২ হাজার করে তোলাবাজি করা হয়। সেই হিসেবে প্রতি মাসে ৬ লাখ টাকার তোলাবাজি চলে। কতিপয় নেতাদের সুনজরের কারণে হাসপাতালকে স্থায়ীভাবে দালালমুক্ত করতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। ১৩১৩ শয্যার চট্টগ্রাম মেডিকেলে দিনে অন্তত তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ড থেকে অস্ত্রোপচার হয় ২০০ থেকে ২৫০টি। আবার হাসপাতালের ভেতরে টাকার বিনিময়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দালাল না ধরলে রোগীর জন্য ভালো সিটও পাওয়া যায়না। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাহেনা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি হাসপাতালে সিজার করতে সাধারণত তিন থেকে চার হাজার টাকার ওষুধ লাগে। অনেক ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়। এরপরও কিছু ওষুধ বাইরে থেকে রোগীদের কিনতে বলা হয়। কিন্তু সেটার বিল আসে কখনও চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও বাইরে ল্যাবে নিয়ে গিয়ে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নবজাতকের কানে আযান দেওয়া, রোগী-স্বজনদেরকে ওয়ার্ডের ভেতর যেতে দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে সংঘবদ্ধ দালালরা কাজ করেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ নেতা অভিজিৎ দাশ বলেন, আগের পরিচালককে আমরা দালালদের দৌরাত্ম্য দমনে স্মারকলিপিও দিয়েছিলাম। আমরা চাই মেডিকেল থেকে দালাল নির্মূল হোক। মুলত দালালদের নিয়ন্ত্রণ করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কনক দেবনাথ বলেন, একাধিকবার আমরা হাসপাতাল পরিচালককে দালাল দমনের জন্য স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। তখন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা নাখোশ হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, র্যাবের ঝটিকা অভিযানে সম্প্রতি ৩৯ জন দালাল আটক হয়েছেন। তারা সবাই হাসপাতালের বাইরের। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দালাল যাতে হাসপাতালে প্রবেশ করতে না পারে, সেই উদ্যোগ নিয়েছি।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি