সংরক্ষিত বনভূমি দখল করতে মরিয়া পাহাড় খেকো চক্র

0
264
সংরক্ষিত বনভূমি দখল করতে মরিয়া পাহাড় খেকো চক্র
সংরক্ষিত বনভূমি দখল করতে মরিয়া পাহাড় খেকো চক্র
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন কক্সবাজারের পেকুয়ায় বনবিভাগের জনবল সংকটকে কাজে লাগিয়ে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তুলছেন  কয়েকটি পাহাড় খেকো চক্র। একের পর এক সফল অভিযান পরিচালনা করে বারবাকিয়া রেঞ্জ।  চৌকস, সৎ নিষ্ঠাবান বনবিভাগের অতন্দ্র প্রহরী রেঞ্জ কর্মকর্তা  মোঃ হাবিবুল হকের নেতৃত্বে এসব  অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপও নেন।পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলনের  বিরুদ্ধে সোচ্চারও তিনি। এবার  এ অভিযান ঠেকাতে তার বিরুদ্ধে গভীর  ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে পাহাড় খেকো  চক্র। খতিয়ান ভুক্ত বনভূমিতে বসতি স্থাপনা করলে ও সেটি সরকারি জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করছে  বলে মিথ্যা  অপপ্রচার, ষড়যন্ত্র সহ নানা ধরনের ঘৃণ্যতম প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে ওই চক্র।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, টইটং বিটের ডেনারছড়ার এলাকাটি ছোট বড় টিলায় বেষ্টিত। যার পাশে রয়েছে ২০০৫-০৬ অর্থবছরের সামাজিক বনায়নের সৃজিত বাগান। সেখানে পাহাড় কাটার নেই কোন চিহ্ন।একইভাবে বারবাকিয়া বিটের পাহাড়িয়াখালী, নাপিতের চিতা, লম্বাঘোনা এসব জায়গায় রিজার্ভের ভিতর কোন পাহাড় কাটা নাই। সরেজমিন  অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, এ সকল জায়গায় যে সকল পাহাড় কাটা দেখা যায় তা সবই মালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জায়গা।

এদিকে পাহাড়িয়াখালিতে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই এলাকার বাসিন্দা মঞ্জুর, সৈয়দ আলম ও এজাহার তাদের খতিয়ানি জায়গা হতে মাটি কেটেছে বলে জানান। এছাড়াও ভারুয়ালির কবির আহাং তার খতিয়ানভুক্ত বি,এস দাগ নং-২৫২৯৩ এর জমির উপরের অংশের মাটি কেটেছে। কিন্তু পাহাড়খেকোরা মিথ্যা  তথ্য দিয়েছে কবির আহমদ রিজার্ভের পাহাড় কেটেছে।অপর একটি জায়গার মাটি কাটা হয়েছে যার বি,এস দাগ নং-১৫২০০। অনুসন্ধানে দেখা যায়, রমিজপাড়ায় খতিয়ানভুক্ত ১৭৫৫ ও ১৭৫৬ বি,এস দাগের জায়গায় মাটি কাটা হয়েছে। সেখানেও রিজার্ভের কোন পাহাড় কাটা হয় নাই। কিন্তু পাহাড় খেকো চক্র রিজার্ভ ফরেস্টের মাটি কাটছে বলে গুজব ছড়িয়েছে। স্থানীয়  জমির মালিক গিয়াস উদ্দীন বলেন, আমি আমার খতিয়ানভূক্ত জায়গার মাটি সমান করে ঘর নির্মান করার জন্য কিছু মাটি সরিয়ে তা মসজিদের উন্নয়নের জন্য দান করেছি। খতিয়ান ভুক্ত জায়গায় মাটি কেটেছি  এখানে রিজার্ভের পাহাড় কাটার কোন প্রশ্নই আসে না।

পাহাড় খেকোরা বলছেন রেঞ্জ কর্মকর্তাকে টাকা দিলেই পাহাড় কাটা অনুমতি মেলে। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন বনবিভাগের নাম বিক্রি করে পাহাড় খেকোরা অর্থের মাধ্যমে নানা অবৈধ স্থাপন করে যাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে হেডম্যানকে দেওয়া হয় প্রাণনাশের হুমকি।  সরেজমিনে দেখা গেছে, জুমপাড়ার যে অংশের পাহাড় কাটার কথা। তা টইটং বিট তথা বারবাকিয়া রেঞ্জের আওতাধীন নয়। সেখানেও দেখা গেছে অনেক পুরাতন পাহাড় কাটার আলামত। এভাবে কাজল সওদাগর ও আব্দুস শুক্কুর ব্যাক্তিদের নাম জড়িয়েছে ওই পাহাড় খেকোরা। আব্দুস শুক্কুর প্রায় ৬ মাস যাবত দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং কাজল সওদাগর টইটং বাজারের একজন ব্যবসায়ী। কাজল সওদাগর বলেন,”আমি দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত টৈটং বাজারে ব্যবসা করি, আমার নামে বেশ কয়েকটি নিউজ হয়েছে যে আমি গাছ কাটি, মাটি কাটি যার কোন সত্যতা নেই। আমাকে দিয়ে বনবিভাগ কে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল বলেন, দক্ষিণ জুম এলাকায় পাহাড় কাটার বিষয়ে আমার প্রতিপক্ষ আমাকে জড়িয়ে চিহ্নিত গুটিকয়েক বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। তারাবুনিয়া পাড়ার আব্দুল হক ও সবুজপাড়ার জাহাঙ্গীর নামের ব্যাক্তির বাড়িতে গিয়ে কোন পাহাড় কাটার আলামত পাওয়া যায় নাই। মাঝেরঘোনা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় একটি পাহাড় ভেঙে  পড়ে থাকার চিত্র। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, ৩/৪ বছর পূর্বে পাহাড়টি ভেঙ্গে পড়ে। এখান থেকে এতদিন হয়ে গেলো কেউ একমুটো মাটিও নিতে পারে নাই। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,একটি বালু খেকো চক্র, মধুখালীর বালি বের করতে না পেরে, তাদের ফায়দা হাসিল করতে না পেরে  বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল হক কে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মনগড়া কল্প কাহিনি সাজানো হয়েছে। আদৌ এর কোন বিন্দু পরিমাণ সত্যতা নেই।

এদিকে বারবাকিয়া বন কর্মকর্তাদের দাবি মোশাররফ ও আক্তার নামের যে ব্যাক্তিদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে তারা এলাকার চিহ্নিত বালু ও মাটি পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ও বিভিন্ন  বন মামলার আসামী। তাদের সুযোগ সুবিধা বিঘ্নিত হওয়ায় এ রকম মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা  ছড়িয়ে তাদের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টাই মেতে উঠেছে ।

পাহাড়িয়াখালির মইদুর বলেন,খতিয়ান ভুক্ত জায়গায় যাদের জায়গা তারা কেটে পরিষ্কার করে  ঘর নির্মাণ করেছে। এখানে রেঞ্জারের কাজ কি?যে পাহাড়গুলো কাটা হয়েছে তা সম্পূর্ণ  খতিয়ান ভুক্ত। এ নিয়ে টইটং বিট কর্মকর্তা জমির উদ্দিন বলেন, টইটং বিট বারবাকিয়া রেঞ্জের অধীনে। বনবিভাগে জনবল সংকট রয়েছে। এ সুযোগে বনখেকোরা এসব অপকর্ম করছে। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি   এ অপকর্ম রূখে দেওয়ার। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বনবিভাগের রাত্রিকালীন টহলও জোরদার করা হয়েছে। পাহাড় কাটার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের  আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণও করা হয়েছে।

বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ  হাবিবুল হক বলেন, বালুখেকো একটি সিন্ডিকেট রিজার্ভ ফরেস্টের বালু বের করতে না পেরে কিছুদিন পুর্ব হতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে। আমি আদালতের শরণপন্ন হয়েছি। এখন আমি বিজ্ঞ আদালতের বিচারের অপেক্ষায়। এ বালু কোর্ট যা নির্ধারণ করে তাই হবে।কিন্তু পাহাড় ও বালু খেকো সিন্ডিকেট তাদের সুযোগ সুবিধা বন্ধ হওয়ায় আমার উপর উঠেপড়ে লেগেছে। এখন আমার সামাজিক মর্যাদা নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। এমনকি তারা এতোটা ঘৃণ্যতম অপপ্রচার মিথ্যা  প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে আমার চাকরি জীবনে এমন পরিস্থিতির শিকার হয় নি। পাহাড় ও বালু খেকো সিন্ডিকেট প্রায়শই বলে তাদের দাবি অনুযায়ী ইচ্ছা পূরণ না করলে নাকি আমাকে এখানে থাকতে দাবি না এমনকি  আমার চাকরিও থাকবে না। তিনি আরো বলেন, আমি এসব মিথ্যা অপপ্রচার এবং হুমকিতে মোটেও বিচলিত নয়। প্রজাতন্ত্রের একনিষ্ঠ কর্মচারী হিসেবে বন ও বনজ সম্পদ রক্ষায় কাজ করবো। আমি যোগদানের পর থেকে গতো আড়াই বছরে  বন অপরাধ এ জড়িত থাকায় ১৪৩ টি বন মামলা দায়ের করে ১২০ জন অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ  করেছি। প্রায় ৪০০০ ঘনফুট কাঠ ও ৫ লক্ষ ঘনফুট বালু জব্দ করে আইনের আওতায় নিয়ে আসি।এ সকল অপরাধে জড়িত পরিবহনকালে নিয়োজিত   ৪০ যানবাহন আটক করে আইন গত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে সাধ্য অনুযায়ী প্রাত্যহিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আলোকিত প্রতিদিন /০৬ মে-২০২৪ /মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here