সাতক্ষীরায় নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন : প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ 

0
291

মোঃ ইব্রাহিম খলিল: সাতক্ষীরা আশাশুনিতে নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে দেদারসে চলছে বালু উত্তোলনের হিড়িক। ফলে যে কোন সময় ভূমি ধ্বসের সৃষ্টি হয়ে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে বিস্তৃর্ণ এলাকা। আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নুর কে গত ২৪মে শুক্রবার বালু উত্তোলন করার ব্যাপারে অবহিত করা হয়। এর প্রেক্ষিতে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখনো দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় ঝুঁকির মুখে রয়েছে বিস্তৃর্ণ এলাকা। জানা গেছে, আশাশুনি  উপজেলার ৭ নং শ্রীউলা ইউনিয়ন এর কলিমাখালী মাঠপাড়া মাদ্রাসা মোড় নামক এলাকার খোলপেটুয়া নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে বালু উত্তোলন করছে মনিরুল ইসলাম মনি।
মনিরুল ৫ টাকা ফুট চুক্তিতে কলিমাখালী মাঠপাড়া গ্রামের জয়নাল সরদার এর ছেলে সুমন এর পুকুর  বালু ভরাট দিচ্ছে। বালু খাদক মনিরুল ইসলাম কলিমাখালী গ্রামের মাহমুদ আলী মিস্ত্রির ছেলে। নদীর ভূ-গর্ভস্থ থেকে বিধিবহির্ভূত ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে যে কোন সময় ভূমি ধ্বসের সৃষ্টি হতে পারে। ভূমি ধ্বসের কারণে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান আছে। গত ২৪মে সকাল থেকে বিরামহীন ভাবে নদীর ভূ-গর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে বালু খাদক মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপি প্রত্যন্ত অঞ্চলের নদী এবং ফসলি জমির ভূ-গর্ভস্থ থেকে প্রতিনিয়ত  আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করছে। মনিরুল ইসলাম ইতিপূর্বে আশাশুনি উপজেলা তথা সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপি  বালু খাদক নামে ব্যাপকভাবে পরিচিতি। এদিকে বালু খাদক মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ইউএনও, ওসি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আমার পকেটে আছে আমাকে কেউ কিছু বলবে না।
ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে, অধিক মাত্রায় ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে ফসলি জমি, জনবসতি এমনকি নদ নদীর ভূ-গর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণী কুলে নেতিবাচক পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ  পানি,বায়ু দূষণ, প্রাকৃতিক বৈচিত্র নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ভূমি ধ্বসের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে এসব নেতিবাচক প্রভাবের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ দিনকেদিন বিপন্নের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
যত্রতত্র ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনে সৃষ্ট বায়ু দূষণে প্রতিনিয়ত মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে উদ্ভিদ ও প্রানী কুলের মধ্যে পরিবর্তন হওয়ার কারনে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি তাদের খাদ্যের উৎসও ধ্বংস হচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে মৎস্য প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যপক হারে পাল্টে যাচ্ছে। নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পানি দূষণ ও নদী গর্ভের গঠন প্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে।
যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন নদ- নদী ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। অবাধে বালু উত্তোলনের নিকটবর্তী স্থানে মাটির ক্ষয় হওয়ার পাশাপাশি মাটির গুনাগুন নষ্ট হচ্ছে। বালু উত্তোলনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার ফলে নলকূপের পানি পাওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠেছে। বালু উত্তোলনের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে ব্যপক হারে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে যা আগামী প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
এ বিষয় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির মুঠো ফোনে আলাপকালে বলেন, জনস্বার্থে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে বলে দিচ্ছি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
এদিকে, নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে মনিরুল ইসলাম বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখায় স্থানীয়রা ক্ষোভে ফুসে উঠেছে। এ ব্যাপারে তারা জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

আলোকিত/২৬/০৫/২০২৪/আকাশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here