অস্ট্রেলিয়ার কাছে ব্যর্থ হয়েছেন পেস বোলাররা

0
197
অস্ট্রেলিয়ার কাছে ব্যর্থ হয়েছেন পেস বোলাররা
অস্ট্রেলিয়ার কাছে ব্যর্থ হয়েছেন পেস বোলাররা

ক্রীড়া ডেস্ক:

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশকে জয় এনে দিতে ভূমিকা রেখেছিল বোলিং বিভাগ। বিশেষ করে তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব এবং মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিংয়ে তিনটি জয় নিয়ে সুপার এইটে উঠার কৃতিত্ব তাদেরই। শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে উঠার লড়াইয়ে প্রথম ম্যাচে পেসারদের সেই দাপট দেখা যায়নি। আগের ম্যাচগুলোতে ব্যাটাররা ব্যর্থ হলেও বোলাররা জয় এনে দিয়েছেন। কিন্তু এই ম্যাচে ব্যাটারদের সঙ্গে বোলাররাও হয়েছেন ব্যর্থ। যে কারণে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতি (ডি/এল) মেথডে বাংলাদেশ দল ২৮ রানের ব্যবধানে হেরে সুপার এইট শুরু করেছে।  অনেকটা মিরপুরের মতো উইকেটে খেলতে নেমে ব্যাটাররা ব্যর্থ হলেও বোলারদের পারফরম্যান্সে জয় পেতে সমস্যা হয়নি। কিন্তু অ্যান্টিগায় স্পোর্টিং উইকেটে ফিরতেই বোলাররা যেন খেই হারালেন। আগের মতো সেই স্লো উইকেট নেই। তার মধ্যে  টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলদের তাণ্ডবে পেসাররা রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়েন। কয়েক দফা বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই বৃষ্টি বাংলাদেশকে বাঁচাতে পারেনি।

অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সুপার লিগ পর্বে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া দুই দলই তাদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামে। টস জিতে অজি অধিনায়ক মিচেল মার্শ বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাঠান। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে ঠিকঠাক পাওয়ার প্লে ব্যবহার করতে পারেনি তারা। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থ ছিল ওপেনিং জুটি। এখন অব্দি কোনও ম্যাচে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেনি। আজও সুপার এইটে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সেই ব্যর্থতা অব্যাহত থেকেছে। ইনিংসের তৃতীয় বলে রানের খাতা না খুলেই সাজঘরে ফেরেন তানজিদ তামিম (০)। আগের ম্যাচেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করেছেন। অবশ্য লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে প্রতিরোধ গড়েন। অজি বোলিং লাইনআপের সামনে বুক চিতিয়ে পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে দুজনে যোগ করেন ৩৯ রান। অনেকদিন পর বাংলাদেশের অধিনায়ক শান্ত দারুণ ব্যাটিং করেছেন। প্রথম বল থেকেই স্ট্রাইকরোটেট করে খেলার চেষ্টা করেছেন তিনি। যদিও লিটন ছিলেন সতর্ক, করেছেন মন্থর ব্যাটিং। দু’জনই আউট হয়েছেন থিতু হয়ে। নবম ওভারে অ্যাডাম জাম্পার বলে বোল্ড হওয়ার আগে ২৫ বলে ১৬ রান করে আউট হন লিটন। শান্ত-লিটনের এই জুটিতে বাংলাদেশ তোলে ৫৮ রান। পরিকল্পনায় বদল এনে রিশাদকে প্রমোশন দিয়ে পাঠানো হয় চার নম্বরে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৪ বলে ২ রান করে। নিজের পরের ওভারে জাম্পা তুলে নেন শান্তর উইকেটও। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ বলে ৪১ রান করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। অথচ গ্রুপ পর্বের কোন ম্যাচেই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার।  এরপর সাকিব ক্রিজে নামলেও প্রথম বল থেকেই অস্বস্তি নিয়ে ব্যাটিং করেছেন। মার্কাস স্টয়নিসের বলে সাকিবও কাটা পড়েন ১০ বলে ৮ রানে। ১৮ তম ওভারের শেষ দুই বলে পরপর দুই বলে মাহমুদউল্লাহ (২) ও শেখ মেহেদী হাসানকে (০) ফেরান প্যাট কামিন্স। এরপর ২০তম ওভারের প্রথম বলে হৃদয়কে বিদায় দিয়ে পূরণ করেছেন হ্যাটট্রিক। তাওহীদ শেষ বল পর্যন্ত টিকে থাকতে পারলে স্কোরবোর্ডে আরও কিছু রান আসতো। কিন্তু ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৮ বলে ৪০ রান করে ক্যামিন্সের হ্যাটট্রিকের শিকার হন তিনি। তাওহীদের মতো শান্তও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আউট হয়েছেন। অনেকদিন পর রানে ফেরা শান্ত সাবলীল ব্যাটিংই করছিলেন। কিছুটা আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন বাংলাদেশর অধিনায়ক। অন্তত আরও কয়েকটি ওভার টিকে থাকতে পারলে দলের রানটা আরও কিছু বাড়তো। শেষ দিকে তাসকিনের গুরুত্বপূর্ণ ১৩ রানের ইনিংসের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ কোনওমতে ১৪০ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে।

হ্যাটট্রিক ম্যান কামিন্স ছাড়াও অ্যাডাম জাম্পা বাংলাদেশের ব্যাটারদের চাপে রাখতে পেরেছিলেন। ২৯ রানে তিন উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার কামিন্স। বিশ্বকাপের সেরা বোলারদের তালিকার দুই নম্বরে থাকা জাম্পা নেন দুটি উইকেট। এছাড়া স্টয়নিস, স্টার্ক ও ম্যাক্সওয়েল নেন একটি করে উইকেট। ১৪১ রানের জবাবে খেলতে নামা অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারাদের বিপক্ষে পরিকল্পনা মতো বোলিং করতে পারেনি বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে বোলারদের বেধড়ক পিটিয়েছেন দুই ওপেনার ওয়ার্নার ও হেড। দুজনে তুলেছেন ৫৯ রান। এই সময় বাংলাদেশের চার বোলার মেহেদী, তানজিম সাকিব, মোস্তাফিজ, তাসকিনকে ব্যবহার করেও শান্ত সাফল্য পাননি। সপ্তম ওভারে লেগ স্পিনার রিশাদের হাতে বল তুলে দিলে বদলায় দৃশ্যপট। প্রথম দুই বলে ৫ রান দেওয়ার পর হুট করে বৃষ্টির বাঁধায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। আধাঘণ্টা পর খেলা গড়ালে ওই ওভারের পঞ্চম বলেই জুটি ভাঙেন রিশাদ। ২১ বলে ৩১ রান করা হেডকে ফিরিয়ে সাফল্য এনে দেন এই লেগ স্পিনার। পরেই অধিনায়ক মার্শকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রিশাদ। ১০ রানে দ্রুত দুই উইকেট তুলে নিলেও ম্যাচে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। কেননা জুটি ভাঙতে  বড্ড দেরি করে ফেলেছে বাংলাদেশ। এরপর ওয়ার্নার ও ম্যাক্সওয়েল আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। ১১.২ ওভারে ২ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১০০ রান উঠতেই মুষলধারে বৃষ্টি নামে। সেই বৃষ্টিতে ডি/এল মেথডে ২৮ রানের জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নার ৩৫ বলে ৫৩ এবং ম্যাক্সি ৬ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে রিশাদ ছাড়া কেউই অজি ব্যাটারদের কাছ থেকে সমীহ আদায় করে নিতে পারেননি। যে সাকিব-মোস্তাফিজ গ্রুপ পর্বে ত্রাস ছড়িয়েছিলেন, তাদের নিয়ে ছেলে খেলায় মেতে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা। মোস্তাফিজ ২ ওভারে দিয়েছেন ২৩ রান। তাসকিন ১.২ ওভারে খরচ করেছেন ২২ রান। জুনিয়র সাকিব ১ ওভারে ৯ রান দিয়েছেন। কেবল রিশাদই ৩ ওভার বোলিং করে ২৩ রান খরচ করে নিয়েছেন দুটি উইকেট। চলতি বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে নামা শেখ মেহেদী ব্যাট ও বল হাতে দলে অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর দেশের সেরা ক্রিকেটার সাকিব ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়ার পর বল হাতেই নেননি!

আলোকিত প্রতিদিন /২১ জুন-২০২৪ /মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here