রানা ইস্কান্দার রহমান:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। প্রমত্তা তিস্তার পানি কমতে শুরু করলেও ভাঙন তীব্র আকার ধারন করছে। পানি কমতে শুরু করায় বিভিন্ন চরে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে চরবাসী। গত ১৫দিনের ব্যবধানে উপজেলার কাপাশিয়া, হরিপুর , শ্রীপুর ও চন্ডিপুর ইউনিয়নে ৫০টি বসতবাড়িসহ ৩’শ বিঘা ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীনন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে হাজারও পরিবার তাদের বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কাটছেনা চরবাসীর।
উপজেলার তারাপুর, বেলকা , হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিতো প্রমত্তা তিস্তা নদী। প্রতিবছর তিস্তায় পানি বাড়ার সাথে সাথে বা বন্যা আসলেই শুরু হয় নদী ভাঙন। চলতে থাকে বছর ব্যাপী। নদী পাড়ের মানুষের দাবি, স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ দিনেও স্থায়ী ভাবে নদী ভাঙন রোধ, ড্রেজিং, নদী খনন, ও সংস্কারের উদ্যোগ আজও গ্রহন করা হয়নি। যে কারনে প্রতি বছর পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি, হাজারও একর ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটির চর গ্রামের আলম মিয়া জানান, নদীর ভাঙ্গনের মুখে তার বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। সেই সাথে তার ২ বিঘা জমিসহ উঠতি তোষাপাট এখন নদীগর্ভে। ভাঙনের মুখে শতাধিক বসতবাড়ি ও পাঁচ শতাধিক বিঘা ফসলি জমি। নদীতে পানি বাড়লে এবং বন্যা আসলে তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না।
হরিপুরের লখিয়ার পাড়া গ্রামের জরিপ মিয়া বলেন, প্রতিবছর নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি, আবাদী জমি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। একজন চরবাসিকে মৌসুমে কমপক্ষে ৩ হতে ৪ বার ঘরবাড়ি সরাতে হচ্ছে। কিন্তু আজও স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধের কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না।
হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলামের দাবি নদী খনন, ড্রেজিং স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ কল্পে বহুবার চাহিদা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু আজও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শুধুমাত্র ভাঙন রোধে প্রাথমিক ভাবে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী ভাবে ভাঙন ঠেকানো না হলে চরবাসীরর দুঃখ কোন দিনও দুর হবে না। ভাঙনে প্রতিবছর পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি এবং হাজারও একর ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে তার ইউনিয়নের ২০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে হাজারও বসতবাড়ি। অনেকে ভাঙ্গন আতঙ্কে তাদের বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ মন্ডল জানান, পানি কমতে শুরু করায় তারাপুর, বেলকা, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া ও হরিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে ভাঙন শুরু হয়েছে। চেয়ারম্যানদের তথ্যের আলোকে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ৫০টির বেশি পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে আরও হাজারও পরিবার। অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা পাঠানো হয়েছে বরাদ্দ পেলে বিতরণ করা হবে।
আলোকিত প্রতিদিন /২৪ জুন-২০২৪ /মওম