মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

0
1933

সাজন মিয়া: মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশীষ দেবনাথের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে কমিটির অনুমোদন, স্বজনপ্রীতি ও শিক্ষক-কর্মচারীর সাথে করা অনিয়মসহ র্নীতির নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
২০২২ সালে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন অত্র কলেজের দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক দেবাশীষ দেবনাথ। হঠাৎ করে তার অধ্যক্ষ হয়ে যাওয়াতে কলেজের শিক্ষক – শিক্ষার্থী, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মনে প্রশ্ন জাগে তার থেকে জৈষ্ঠ্য ও দক্ষ শিক্ষক থাকার পরও তাদেরকে না দিয়ে কেন দেবাশীষ দেবনাথকে বসানো হয়েছিল অধ্যক্ষের চেয়ারে। তবে সেই প্রশ্নের উত্তর তারা পেয়েছিলেন যখন তিনি অধ্যক্ষ হওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারির বাসায় গিয়ে পা ধরে প্রণাম করে এসেছিলেন। অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর তিনি তার রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজে হাত দেন। তার অনুসারী, সরকার দলীয় শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ ও কমিটিতে স্থান দেন। টাকার বিনিময়ে অনুমোদন করেন প্রতিটি কমিটি। শুরু করেন টেবিলের নিচে লেনদেন।
২% কমিশনের বিনিময়ে অনুমোদন করেন কলেজের প্রত্যেকটি অভ্যন্তরীণ কমিটি। কলেজের নির্মাণ খাতের বাজেট থেকে কমিশন নেন ১০%। যার নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার সাথে সরাসরি কাজ করেছেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শরিফুর রহমান, শরীরচর্চা বিভাগের শিক্ষিকা মোছাঃ নুরুন্নাহার ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক বোরহান উদ্দীন।

★ টাকার বিনিময়ে অনুমোদন করেন প্রত্যেকটি কমিটি
★ অভ্যন্তরীণ প্রত্যেকটি কমিটি থেকে নেন ২%।
★ উন্নয়ন খাতের বাজেট থেকে ১০%।
★কাছের লোকদের রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে।
★শিক্ষক -কর্মচারীকে দিয়ে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অত্র কলেজের এক বিভাগীয় প্রধান বলেন, উনি প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে কলেজের মধ্যে একটা অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তিনি যত কমিটি করেন সকল কমিটি থেকে ২% করে অতিরিক্ত নেন এবং কলেজের নির্মাণ ও অন্যান্য উন্নয়ন খাত থেকে ১০% নেন। এমনকি কলজের বিভিন্ন আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র ক্রয় করার সময় যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় তা থেকে প্রথমেই ১০% সরিয়ে প্রিন্সিপালের নামে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে আসবাবপত্র কেনার পর যে টাকা অবশিষ্ট থাকে সেই টাকাটাও প্রিন্সিপাল নিয়ে নেয়। তিনি এই চেয়ারে বসার পর তার কাছের মানুষকে বড় বড় জায়গায় বসিয়েছেন। বিশেষ করে যারা হিন্দু সম্প্রদায়ের আছে তাদেরকে অধিক প্রায়োরিটি দেওয়া হচ্ছে এবং আমাদেরকে প্রতিনিয়ত অবহেলা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষক বলেন, “বর্তমান প্রিন্সিপাল সম্পর্কে আসলে তার দুর্নীতির কোন খাত রেখে কোনটি বলব আমার বুঝে আসছে না। তিনি কলেজের সকল সেক্টরকে দুর্নীতির আতুরঘরে পরিণত করেছেন, কেউ এর প্রতিবাদ করতে পারছে না, প্রতিবাদ করলেও বিভিন্ন ট্যাগ দেওয়া হতো। তবে তিনি এসব কাজ একা একা করছেন না; তার কিছু সহযোগীদের নিয়ে এগুলো করছেন, তার অন্যতম সহযোগীর মধ্যে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শরিফুর রহমান, উপাধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক বিষ্ণুপদ রায়, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাশিয়ার বোরহান উদ্দীন, জিয়াউর রহমান জিয়া, নুরুন্নাহার,পিংকু ও পংকজ । সহজ কথা তিনি বিগত ২০ বছর চাকরি করে যত টাকার মালিক হয়েছেন বিগত ২ বছরে তা তার কয়েকগুণ হবে।
কলেজের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার জসীম উদ্দীন বলেন, আমি আজ গত ২ বছর ধরে প্রিন্সিপাল কর্তৃক নানা নির্যাতনের শিকার। আমি পূর্বে রসায়ন বিভাগের দক্ষ বেয়ারার ছিলাম। গত ৮মাস আগে আমাকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু আমাকে আজ অবধি আমার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয় নাই, অথচ বহু আগে রিটায়ার্ড হয়ে গেছেন এমন কর্মচারীকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। ২০তম গ্রেডের কর্মচারীকে বসানো হচ্ছে ১৬ তম গ্রেডের চেয়ারে।
ক্যাশিয়ার আরিফুল ইসলাম বলেন, বিগত আট মাস পূর্বে বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের শূন্য পদে ১৬তম গ্রেডের ৪জন কর্মচারীকে পদায়ন করা হয়েছে। ১. শঙ্কু রন্জন দে, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর ২. মোহাম্মদ জসীম উদদীন, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর ৩. দয়াময় গোস্বামী, হিসাব সহকারী ৪. আরিফুল ইসলাম, ক্যাশিয়ার বলেন তিনজন কর্মচারীকে চেয়ার টেবিল দিলেও আজ পর্যন্ত আমাকে কোনো বসার স্থান দেয়া হয়নিনা। কিন্তু নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের চেয়ার টেবিলে অফিসে বসিয়ে রেখেছেন। আমি অফিসিয়ালি এই কলেজে যোগদান করি অথচ এখন পর্যন্ত আমাকে কোনো দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয় নাই। আমার জন্য নির্ধারিত কোনো অফিস নাই, আমি কলেজে আসি, সাক্ষর করি, অতঃপর কলেজে ঘুরাঘুরি করে চলে যাই। এর বাইরে আমার কোনো কাজ নাই। বর্তমানে ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে কে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক বোরহানউদ্দিন ও হিসাব সহকারী আবুল বাশারকে তিনি প্রিন্সিপালের খুব কাছের মানুষ হওয়ায় তাদেরকে এই জাগায় বহাল রেখেছে। যদিও তারা অফিসিয়ালি ২ বছর আগে অবসর নিয়েছে। কিন্তু তিনি কোন অবস্থায়, কেন, কিভাবে এখনো এখানে কর্মরত আছেন সেটা আমাদের জানা নাই। এ বিষয়ে হিসাব সহকারী আবুল বাশারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন আমি অবসর নিয়েছি এটা ঠিক, কিন্ত আমি মাস্টাররুলে এখনো চাকরি করছি।
অধ্যক্ষ দেবাশীষ দেবনাথকে মুঠোফোনে তার কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন; “আসলে অভিযোগের তো শেষ নেই, আপনি যেগুলো বলছেন এরকম কত অভিযোগ আছে। গত ২ বছর কোনো অভিযোগ ছিল না কিন্তু হঠাৎ করে এত অভিযোগ!! আমরা সবকিছুই জানি কারা এসব অভিযোগ করেছে। আপনি সামনাসামনি আমার অফিসে আসেন, বসে আলোচনা করব।ফোনে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আমি আগ্রহী নই।”
আলোকিত/১৫/০৮/২০২৪/আকাশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here