আবু বকর সিদ্দিক:
মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া নামে পুলিশের এক ওসির বিরুদ্ধে জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নাজিরহাট হাইওয়ে থানায় কর্মরত আছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কুমিল্লা নগরীর দক্ষিণ চর্থা এলাকায় জায়গা কিনে আধুনিক সুযোগ সুবিধাদিসহ ‘ভূইয়া বাড়ি’ নামে ৮ তলা বহুতল ভবন, দেবিদ্বার উপজেলা সদরে ৫তলা বহুতল ভবন ও ভূইয়া কমিউনিটি সেন্টারের সন্ধান পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়ার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায়। তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে যোগদান করে পর্যায়ক্রমে পদন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টর হন। ২০১৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানায় তদন্ত ওসি হিসেবে যোগদানের পর ২০১৪ সালের ২০শে ডিসেম্বর তৎকালিন সময়ের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানের নিদেশনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থেকে আখাউড়া থানায় ওসি হিসেবে পদায়ন হন তিনি। এরপর ২০১৭ সালের ২৮শে অক্টোবর কসবা থানা থেকে জেলার সরাইল থানায়, ২০২২ সালের আগষ্টে লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানায় এবং ২০২৪ সালের ৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নাজিরহাট হাইওয়ে থানায় যোগদান করেন তিনি। জানা যায় তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেছেন। সেই আয় থেকে তিনি প্রায় ৪/৫ বছর আগে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকাধীন দক্ষিণ চর্থা এলাকায় ভূইয়া বাড়ি নামে ৮ তলা বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। প্রতিটি ভবনে রয়েছে ৩টি করে মোট ২৪টি ইউনিট। ৮ তলার ছাদে রয়েছে আরও একটি ইউনিট। অথাৎ পুরো ভবনটিতে রয়েছে ২৫টি ইউনিট। এছাড়াও ভবনটিতে রয়েছে আধুনিক সুযোগ সুবিধাদিসহ লিফটের ও ভাড়াটিয়াদের গাড়ি পাকিংয়ের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় নগরীর দক্ষিণ চর্থা এলাকায় রাস্তার উপরে গড়ে তোলা হয়েছে ওসি মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়ার “ভূঁইয়া বাড়ি” নামে আধুনিক ডিজাইনের ৮তলা বহুতল ভবন। কথা হয় ওই বাড়ির কেয়ারটেকারের সঙ্গে আমাদের। কেয়ারটেকার জানান, ২য় তলার ১টি ইউনিটে ওসি স্যার (মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া) পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। স্যার চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে পুলিশের চাকরী করেন। ১০-১৫ দিন পর মাঝেমধ্যে তিনি এখানে আসেন। ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ১ বছর থেকে কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করছি। যতটুকু জানি জায়গা কিনে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে বছর ৪/৫ আগে। এদিকে ভবনটিতে TO LET দেখে আমরা আমাদের পরিচয় গোপন রেখে ভাড়াটিয়া সেজে ১টি ইউনিট ভাড়া নিতে গেলে কেয়ারটেকার ভবনটির ৭ম তলার ১টি ইউনিট ঘুরে দেখান আমাদের। পরে আমাদের পছন্দ হলে ২য় তলায় বসবাসরত বহুতল ভবনটির একমাত্র মালিক ওসি মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়ার স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় আমাদের। আলোচনার এক পর্যায়ে মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়ার স্ত্রী আমাদের জানান তার স্বামীর গ্রামের বাড়ি হচ্ছে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায়। দেবিদ্বার উপজেলা সদরে তাদের রয়েছে ৫তলা আরও একটি বহুতল ভবন ও ভূঁইয়া কমিউনিটি সেন্টার। এছাড়াও ওসির ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ভবনের নিচে পাকিংয়ের স্থানে রাখা সাদা রংয়ের (ঢাকা মেট্রো-চ ৫৩-১৯১২) এবং তার স্ত্রীর ব্যবহারের জন্য পুলিশের স্টিকার যুক্ত কালো রংয়ের প্রাইভেট কার(চট্টগ্রাম মেট্রো-গ ১৩-৫৫৯৬) দেখতে পাওয়া যায়। জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে ওসি মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়াকে ফোন দিয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার তো ফাইল আছে, আমার ৬০ লক্ষ টাকা লোন নেওয়া আছে। এসময় তিনি দেবিদ্বার উপজেলা সদরে অবস্থিত ৫তলা বহুতল ভবনটি তার পৈতিক সম্পত্তি বলে জানালেও ভূঁইয়া কমিউনিটি সেন্টার নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি তিনি। এছাড়াও (ঢাকা মেট্রো-চ ৫৩-১৯১২) গাড়িটি হেলাল নামে এক ব্যক্তির জানালেও (চট্টগ্রাম মেট্রো-গ ১৩-৫৫৯৬) গাড়ির বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। এসময় তিনি তার এক কথিত সাংবাদিক বন্ধুর নাম নিয়ে আমাদের জিজ্ঞেস করেন আমরা তাকে চিনি কি না? আমরা ওই ব্যক্তিকে চিনি না জানালে, তিনি তখন আমাদের জানান যে, আপনি তো আমার দেশি লোক, আমি এবার কুমিল্লায় আসলে আপনার সাথে কথা বলবো।
আলোকিত প্রতিদিন/২১ আগস্ট-২০২৪ /মওম
- Advertisement -