প্রতিনিধি,নোয়াখালী:
ভারতের ছেড়ে দেওয়া বানের জলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত নোয়াখালী জেলা পরিদর্শনে আসেন যুব ও ক্রীড়া, শ্রম ও কর্মসংস্হান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। গতকাল শুক্রবার রাত ৮ টায় নোয়াখালী জেলা প্রশাসন কক্ষে বন্যার সর্বশেষ অবস্থা জানতে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মোঃ আশরাফ উদ্দিন, নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান,নোয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখিনূর জাহান নীলা,পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমীর ফয়সাল,রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহকারী পরিচালক নূরুল করিম,নোয়াখালী জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের মঞ্জু,জেলা স্কাউটের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ হোসেন জাতীয় ভোক্তার সহকারী পরিচালক কায়ছার মিয়া,এলজিইডির নোয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আজহারুল ইসলাম,জেলা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধিসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের জেলা প্রধানগণসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালীর সমন্বয়কসহ ছাত্রনেতারা।
নোয়াখালী জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমীর ফয়সাল নোয়াখালীর গত কিছুদিনের অতিবৃষ্টির বর্ণনা দিয়ে বলেন,পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলাব্যাপী সর্বমোট ৪ হাজার কিঃমিঃ বাধের কথা উল্লেখ করেন এবং নোয়াখালী খাল দিয়ে আগত বৃষ্টির পানি নামতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করেন।
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা বিগত দিনে সাড়ে ৩শত কোটি টাকা ব্যায়ে নোয়াখালী খালের সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুললে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান,খালটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সংস্কার হয়েছে।বিষয়টি তারাই বলতে পারবে।এরপর বন্যার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে দ্রব্যমূল্যের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে আসে।শুকনো খাবর, যেমন চিড়া,মুড়ি,গ্যাস সিলিন্ডারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দ্বিগুণ তিনগুণ দামে বিক্রির অভিযোগ আসলে সভাপতি জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জাতীয় ভোক্তার সহকারী পরিচালক কাওছার মিয়াকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে বলেন।ফ্লোর নিয়ে কাওছার মিয়া জানান লোকবল সংকটের কারণে তিনি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।পরে তিনি লোকবল সংকট মোকাবেলায় প্রতিটি উপজেলায় জাতীয় ভোক্তার পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রকৃত সত্য ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা চালান।এসময় উপস্থিত এ প্রতিবেদক উপদেষ্টার কাছে জাতীয় ভোক্তার সহকারী পরিচালক কাওছার মিয়ার বিভিন্ন অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে তদন্ত দাবী করেন।সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর জানান,জেলার মোট ২০ লক্ষাধিক মানুষ সরাসরি বন্যায় আক্রান্ত। তারমধ্যে ৭৬ হাজার মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্হান করছেন। তিনি এসময় জানান,সরকারি ত্রান তারাই পাচ্ছে যাঁরা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্হান করছেন। এর বাহিরে বিরাট একটি জনগোষ্ঠী সরকারের সহায়তার বাহিরে আছে বলে জানান। এরপর প্রধান অতিথি তার বক্তব্য আরম্ভ করেন। তিনি বলেন,”ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আমরা একটি ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় দিয়েছি ক্ষমতার পালাবদলের জন্য নয়”।তিনি বলেন,”ফেনী,নোয়াখালী, লক্ষীপুর জেলা বরেন্দ্র অঞ্চলের উপকূলীয় অংশ। এসব জেলার মানুষ বন্যা দেখে অভ্যস্ত নয়। এ অঞ্চলের বন্যা কৃত্রিম”।
ভারত বাংলাদেশকে না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে ত্রিপুরার ডুম্বুর গেইট ও জল ডোবা বাঁধের গেইট হঠাৎ করে খুলে দিয়ে কৃত্রিম বন্যা সৃষ্টি করছে। আমরা বন্যার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করে তাদের কাছে জানতে চাইবো।এসময় তিনি বলেন,ফ্যাসিস্ট সরকার রাষ্ট্রের ১৮ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে।সরকারের প্রতিটি সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে।কাওছার মিয়ার অনিয়ম নিয়ে তিনি বলেন,ব্যাক্তির দোষের আগে আমরা তাদের উর্দ্ধতন কুশীলবদের মূলোৎপাটন করতে চাই। কেননা তারা দেখেছে তাদের মনিটর যারা করবে তারাই কাজ করে না।এজন্যই আমাদের আন্দোলনই ছিলো রাষ্ট্রের রিফর্মেশন করা।আমরা সিস্টেমে বদল আনতে চাই।এজন্য আমাদের সময় দিতে হবে।তার আগমনে নোয়াখালী জেলার উপস্থিত সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন,আপনাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে আপনাদের মনের ভাষা,অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে মানুষ এখন আরো ঐক্যবদ্ধ। বন্যার্তদের সহায়তার জন্য তিনি তার একমাসের বেতন দানের কথা জানান।সেই সাথে তার দপ্তর ও সেনাবাহিনী নৌবাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা একদিনের বেতন প্রধান উপদেষ্টার ত্রান তহবিলে দান করেছেন বলেও জানান।তিনি জেলার বন্যার্তদের সহায়তার পাশাপাশি বাজারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের পাশাপাশি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতৃত্ব এবং সাংবাদিকদের সমন্বয়ে কাজ করার আহবান জানান। এর আগে তিনি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুলের আশ্রয়রত মানুষদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজ খবর নেন।