আলোকিত প্রতিবেদক:
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের অবৈধ নিয়োগের ফসল ঢাকা জেলার ধানমন্ডি সাব রেজিস্ট্রার অফিসের উমেদার মো: রানা চৌধুরী, মো: আশিক উদ্দিন এবং মোঃ সাদ্দাম হোসেন এর বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের পাহাড়সম অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, ঢাকা জেলার ধানমন্ডি সাব রেজিস্ট্রার অফিসে একজন পিয়ন থাকা সত্ত্বেও দৈনিক ৬০টাকা মজুরি ভিত্তিতে অতিরিক্ত ও অকর্মা ৯ জন উমেদারের আনাগোনা দেখা যায় মূলত দলিলের পিছনে ছুটে ছুটে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার ও সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে। লেজুরবৃত্তি ও দালালির অপকর্মের কারণে সেবা গ্রহীতা সাধারণ জনগণ তাদের কুটকৌশলের কাছে নিরুপায় হয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে। অনুসন্ধানের গভীরে গেলেই প্রতীয়মাণ হয়, প্রতিটি দলিলে উমেদার রানা এবং আশিক কর্তৃক চিহ্নিত দাগ না দিলে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয় না। ফলে সেবা গ্রহীতা অসহায় জনগণ পড়ে অত্যাচার ও নিপীড়নের ফাঁদে।
এহেন অপকর্মের যোগসাজেকে গত ০৯/০৫/২০১৮খ্রি: তারিখে অতিরিক্ত ঘুষ বাণিজ্য, দুর্ব্যবহার এবং পে-অর্ডার ভেঙ্গে খাওয়ার মত জঘন্য অপরাধে উমেদার মোঃ রানা চৌধুরীকে প্রথমে আশুলিয়া বদলি করা হয়। কিন্তু, তৎকালীন জেলা রেজিস্ট্রার ১৫,০০,০০০/- (পনের লক্ষ) টাকার বিনিময়ে কয়েক মাস পরে তাকে ধানমন্ডি রেজিষ্ট্রি অফিসে ফেরত নিয়ে আসেন ।
তবে চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী- এক অপকর্মের রেশ কাটতে না কাটতে রানা চৌধুরী ও তার সহযোগী মো: আশিক উদ্দিন এবং মোঃ সাদ্দাম হোসেন জড়িয়ে পড়ে আরেক জঘন্যতম অপকর্মে। গত ০৯/১১/২০২০খ্রি: তারিখে চারটি দলিল রেজিস্ট্রি সম্পাদনে বিভিন্ন অনিয়ম এবং ঘুষ, দুর্নীতির অপরাধ করে রানা চক্র। [যাহার দলিল নাম্বার যথাক্রমে ২৮১৯, ২৮২০, ২৮২১ এবং ২৮২২, দাতার নাম শহীদ সারোয়ার নিজাম গং ]
রানা চক্রের অনিয়ম নজরে আসলে তদন্তের জন্য তৎকালীন সাব রেজিস্ট্রার, গুলশান, ঢাকাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
তদন্তে উঠে আসে উক্ত দলিল বাবদ কোন ভ্যাট ও এফ এফ ৫৩ দেওয়া হয় নাই। ফলে সরকারি কোষাগারে প্রায় ১৪,০০,০০০/- (চৌদ্দ লক্ষ) টাকার রাজস্ব আদায় ব্যহত হয়। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৪/১২/২০২০ খ্রি: তারিখের ৬৮৪ সংখ্যক স্মারকে উমেদার রানা চৌধুরীকে কালামপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বদলী করা হয় এবং মোঃ আশিককে শ্যামপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিস ও জনাব মোঃ সাদ্দাম হোসেনকে ডেমরা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বদলি করা হয়।
কিন্তু, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পালা নেতারা তদবির করে পুনরায় ২৫ (পচিশ লক্ষ) টাকার বিনিময়ে উমেদার মো: রানা চৌধুরী,টমো: আশিক এবং মো: সাদ্দাম হোসেন তিনজনই আবারও ধানমন্ডি সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে ফিরে আসেন। ধানমন্ডি সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে বদলি হয়ে আসার পর থেকে তারা পূর্বের চেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এই প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে বেপরোয়ার প্রতিচ্ছবি। গত ৩০-৪- ২০২৪ তারিখে রানা চক্র দলিল নং ১৫০৬ এর ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করেন ২,৫৩,০০০/- (দুই লক্ষ তিপান্ন হাজার টাকা । সাব-রেজিস্ট্রারের বিশ্বাস ও সরলতার সুযোগ নিয় রানা চক্র এই কাজগুলি করে থাকেন। যার কারণে তাদেরকে আগেও একাধিকবার বদলি করা হয়েছিল পে- অর্ডার মেরে খাওয়ার অপরাধে।
বেপরোয়া ও অনিয়মের চরম শিখরে পৌঁছে রানা চক্র প্রতি দলিলের জন্য টাকা প্রদান না করলে দলিল লেখকদের সাথে ঝগড়াঝাঁটি ও শাসানোর ঘটনায় লিপ্ত হয় ।
ধানমন্ডি সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে এদের দুর্নীতির জাদুর কাঠির ইশারায় লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া রানা চক্র তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও জনগণের আমানত বিনষ্ট করে এতটাই বেপরোয়া হয়ে পড়েছে যে সেবা গ্রহীতা কিংবা সাব- রেজিস্টার ও দলিল লেখক তাদের কাছে জিম্মি ।
প্রায়শই রানা চক্রের বলতে শোনা যায়- আমরা টাকা হলে সব করতে পারি, টাকা দিয়ে বদলি হয়ে আসছি। ডিআর, আইজিআর সচিব ও সাব রেজিস্ট্রার আমাদেরকে কিছুই করতে পারবে না। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পালা নেতাসহ সবাই আমাদের কাছ থেকে টাকা খায়। এমনকি প্রশাসন আমাদের পকেটের লোক বলে হুমকি ধামকি প্রদান করেন প্রতিনিয়ত।
অনুসন্ধানে উঠে আসে- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত উমেদার রানা চৌধুরীর অবৈধ অর্জিত সম্পদের বিবরণ:- হাতিরঝিল মহানগর হাউজিংয়ে ৩য় তলায় কেনা ১৮শ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট। একই বিল্ডিংয়ে তার আরো একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। রামপুরা বনশ্রীতে ৪তলা বিলাসবহুল বাড়ি, ঢাকা আফতাবনগর সেক্টর-১, রোড নং- ৫ এ একটি ফ্ল্যাট, ঢাকার বাসাবো ৫ (পাঁচ) কাঠা জমি ও তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভুইয়ায় কিনেছেন প্রায় ৩০ একর জমি ও ৫টি দোকান। শুধু তাই নয় ৩টি হাইয়েছ মাইক্রো কিনে রেন্ট এ কার’এ ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। নিজে বিলাসবহুল প্রাইভেট কারেও চলাফেরা করে থাকেন। এমনকি বসত ভিটায় ৫ তলা ফাউন্ডেশনের লক্ষ্যমাত্রা রেখে ৩ তলা পর্যন্ত বিল্ডিং সম্পূর্ণ করা, যার নির্মাণ খরচ ২,২০,০০,০০০ (দুই কোটি বিশ লক্ষ টাকা)। এছাড়াও নিজ গ্রামে নামে বেনামে অগাধ সম্পত্তি খরিদ করেন। রানা চোধুরী এসব সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন ধানমণ্ডি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে যোগদানের মাত্র ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে।
অনুসন্ধানের প্রয়োজনে রানা চৌধুরীর গ্রামে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, শুনেছি রানায় নাকি ৬০ টাকা দৈনিক মজুরিতে চাকরি করে তার মানে মাসে ১৩২০ টাকা পায় ! তবে এই ৫/৬ বছরে কেমনে বাড়িতে ৩ তলা আলিসান বিল্ডিং বানাইলো? দেহেন, যার বাড়িতেই ৩ তলা বিল্ডিং তার ঢাহা শহরে কত সম্পদ থাকতে পারে আপনারাই অনুমান করেন!
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৭/৮বৎসর পূর্বে এই রানা রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে ফুটপাতে চায়ের দোকানে কাজ করতো।
এ ব্যাপারে ওমেদার রানার সাথে এ প্রতিবেদকের মোবাইলে আলাপ কালে তিনি বলেন চা বিক্রেতা থেকেওতো কেউ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আমি ওমেদার হলে দোষের কি?
এদিকে আলোকিত প্রতিদিনের হাতে রয়েছে- উমেদার সাদ্দাম হোসেন অবৈধ সম্পত্তির বিস্তর বিবরণ। উত্তরার দিয়াবাড়িতে ১০ কাঠার প্লট, রামপুরা-বনশ্রীতে রয়েছে সম্রাট ডেভেলপার লিমিটেডের কাছ থেকে কেনা একটি ফ্লাট। নারায়ণগঞ্জে ৮ কাঠার একটি প্লট, তেজগাঁও কুনিপাড়ায় লিজ নেওয়া ১০ কাঠার একটি প্লট।
অনুসন্ধানে উমেদার আশিকও বাদ যায়নি অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাহাড়সম অপরাধ থেকে। জানা যায়, আশিকও কোটি কোটি টাকা ও ধনসম্পত্তির মালিক।
উল্লেখ্য, রানা চক্রের নামে একাধিকবার তদন্ত আসলেও তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ফলে অর্থের জোরে বারবারই পার পেয়ে যায় রানা চক্র। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, যে কর্মকর্তাদের তদন্ত ভার দেওয়া হয় তাদেরকেই ম্যানেজ করে ফেলে রানা চক্র।
আলোকিত প্রতিদিন / ২৫ আগস্ট ২০২৪/ তাওয়া