এম. আর. কমল: দেশের সকল খ্রিষ্টান ক্রেডিট ইউনিয়নের সমন্বয়কারী সংস্থা দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ। যাকে সংক্ষেপে বলা হয় ‘কাল্ব’। এছাড়াও খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি নামে রয়েছে আরো একটি সংস্থা। দুটি সংস্থারই চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আগষ্টিন পিউরীফিকেশন। সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খ্রিষ্টান সম্প্রদায় ও তাদের দ্বারা গঠিত বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংগঠনগুলোর অর্থনৈতিক ও আবাসন সুবিধা সার্বিক সহযোগিতা করার লক্ষ্য নিয়েই সংস্থা দুটির জন্ম। সংস্থা দুটির সেবামূলক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করলেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
পরিতাপের বিষয় হলো- বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের আমলে সংস্থাটির সাবেক নির্বাহী কমিটির কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা দুর্নীতি করে সংস্থার অনেক ক্ষতি সাধন করে। সেই সাথে তারা স্বৈরাচারী সরকারের ক্যাডার বাহিনীর সাথে যোগসাজসে নিজেরাও সামাজিক অনেক অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে। যারফলে সরকার পতনের সাথে সাথেই তারা নিজেদের পীঠ বাঁচাতে আওয়ামী দলীয় নেতাকর্মীদের মতো আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থেকেই তারা ‘কাল্ব’র বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র করতে থাকে। অনেক মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে ‘কাল্ব’র সদস্য ও সাধারণ মানুষের মনে ভ্রান্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির পায়তারা করে। কিন্তু সংস্থার বর্তমান নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন একজন যোগ্য, দক্ষ ও সৎ ব্যক্তি হওয়ায় ওইসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় বদ্ধপরিকর।
এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘কাল্ব’র বর্তমান নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে তারা অসত্য তথ্য পরিবেশনের তীব্র প্রতিবাদ জানান। খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং ও কাল্বকে ঘিরে গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলেও তারা উল্লেখ করেন। তারা আরো বলেন একটি চিহ্নিত চক্র দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি নিয়ে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় দেশের সকল খ্রিষ্টান ক্রেডিট ইউনিয়নের সমন্বয়কারী সংস্থা দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ (কাল্ব) ঘিরেও ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবী জানিয়েছেন বক্তারা। রাজধানীর মনিপুরীপাড়ায় আর্চবিশপ মাইকেল ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ (কালব) এবং দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন। এ সময়ে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ফাদার তপন ডি. রোজারিও, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান পরিষদের সভাপতি মি. নির্মল রোজারিও, হাউজিং সোসাইটির সেক্রেটারি মি. ইমানুয়েল বাপ্পী মণ্ডল, কালবের সেক্রেটারি আতিকুল্লাহ সরকার, কালবের ট্রেজারার মি. নরেশ চন্দ্র বিশ্বাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা জোনাস গমেজ, ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. ব্রায়েন, মি. প্রভাত ডি. রোজারিও।
সংবাদ সম্মেলনে দুই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন বলেন, ‘কাল্ব’র সাবেক বোর্ডের কিছু অসাধু পরিচালক দায়িত্ব পালনকালে স্থাপনা নির্মাণ এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট করেছেন। সাধারণ সদস্যদের দাবীর মুখে বর্তমান কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আভ্যন্তরীণ তদন্ত করে। ওই চক্রের কেউ কেউ বর্তমান কমিটিতেও ছিলেন। অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় আইনী পদক্ষেপ নেয়া শুরু হলে; তারা পদত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যান। তদন্তে সাবেক কমিটির জমি ক্রয় এবং কাল্ব রিসোর্টে বার অনুমোদনের লাইসেন্স বাবদ বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ ধরা পরে। ওই চক্রটি পুনরায় কাল্বকে গ্রাস করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের প্ররোচনায় প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে অসত্য, বানোয়াট সম্মানহানীকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন জানান, আগের নির্বাহী বোর্ডের বেপরোয়া লুটপাটের কারণে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে কাল্ব-এর মোট লোকসান ছিল ৩৮ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পরের অর্থ বছরে তা ৪৬ কোটি ৮৪ লক্ষ ৬১ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। ওই অবস্থায় ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর বর্তমান কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করে। তখন কাল্বের মূলধন ছিল ১০৪০ কোটির কিছু উপরে। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে তা বেড়ে ১২৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ সময় লোকসান কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ কোটি ৯৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকায়। আগামী অর্থ বছরের লোকসান কাটিয়ে সদস্যদের লভ্যাংশ দিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে বর্তমান কমিটি। তিনি বলেন, সংগঠনের প্রধান কার্যালয় ‘কাল্ব টাওয়ার’ নির্মাণের জন্য ভাটাড়ার মাদানী রোডে ১৩.৯৭৫ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রারম্ভিক কাজ শুরু হয়েছে। ঋণকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাল্ব রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হলকে লাভজনক করার পাশাপাশি আবাসন শিল্পে বিনিয়োগের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে আবাসন প্রকল্পের উপযোগী জমি ক্রয় করা হয়েছে। দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি সম্পর্কে আগষ্টিন পিউরীফিকেশন বলেন, বর্তমান কমিটি হাউজিং সোসাইটির দায়িত্ব গ্রহণের সময় সম্পদ-পরিসম্পদ ছিল ২২২ কোটি টাকা। বর্তমানে তা এসে দাঁড়িয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকায়। আর সোসাইটির মূলধন দৃশ্যমান আয়মূলক প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে। ১২টি ফ্ল্যাট প্রকল্প থেকে এখন ২০৩টি ফ্ল্যাট প্রকল্পে উন্নীত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪০টি বিল্ডিং নির্মাণের পাশাপাশি আরো ১৯টির কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ২৭৭ বিঘা জমি প্রকল্প থেকে এখন এক হাজার বিঘায় উন্নীত করা হয়েছে। ৭৭টি প্লট প্রকল্পকে বর্তমান কমিটি ৪৪৯০টি প্লটে রূপান্তরিত করেছে। এ ছাড়া সদস্যদের আবাসন ও আয়মূলক বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কাল্ব এবং হাউজিং সোসাইটি যখন উন্নতির শিখরে আরোহনের চেষ্টা চালাচ্ছে; ঠিক তখনই ওই চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ চক্র নিজেদের অপকর্ম ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ করে দুই প্রতিষ্ঠানের চেয়াম্যান হিসেবে আমাকে এবং প্রতিষ্ঠান জড়িয়ে নানা মিথ্যার পসরা সাজিয়ে স্যোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় অপপ্রচার চালিয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করছে। আমাকে ব্যক্তিগতভাবেও অপদস্ত করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। আগষ্টিন পিউরীফিকেশন বলেন, হাউজিং সোসাইটির সকল প্রকার কার্যক্রম সমবায় আইন ও উপবিধি যথাযথভাবে মেনে বার্ষিক অডিট ও বার্ষিক সাধারণ সভা পরিচালিত হয়। এই প্রতিষ্ঠান কারও ব্যক্তিগত কোন প্রতিষ্ঠান নয়। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরাই এর মালিক। প্রতিষ্ঠানে খ্রিষ্টান সদস্য ছাড়া ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর কোন ব্যক্তির এখানে অর্থ গচ্ছিত রাখার বিধি-বিধান নেই। সম্প্রতি প্রাক্তন একজন মন্ত্রীকে ঘিরে মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করা হয়। ওই ব্যক্তির কোন অর্থ বা সম্পদ এই প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত রাখার কোন সুযোগ নাই। এ ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের কোন প্রকার অবৈধ সম্পদও নাই।
সকল প্রকার মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য সংস্থার সকল সদস্যদের প্রতি তিনি আহবান জানিয়েছেন। কোনো প্রকার গুজব ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সংস্থার কার্যালয়ের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন। সদস্যদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়ে তিনি বলেন- “সংস্থার অফিস মানে আপনাদেরই অফিস। আপনারা নিয়মিত অফিসে আসুন। সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে সকল কাজ পরিচালনা হচ্ছে কিনা তার খোঁজখবর নিন। আমি বা আমরা তথা বর্তমান কমিটি কোনো দুর্নীতি করে থাকলে কঠোর হস্তে তার বিচার করুন। এ সংস্থা আপনাদের, সংস্থার সকল সম্পদের মালিক আপনারা। আমরা কেবলমাত্র তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত। সুতরাং আমরা অন্যায় বা দুর্নীতি করলে তার বিচার করার অধিকার আপনাদের আছে। ‘চিলে কান নিলো শুনে চিলের পিছে না দৌড়ে নিজের কানে হাত দিয়ে দেখতে হবে আমার কান ঠিক আছে কিনা’। তেমনি ভাবে আপনাদের সংগঠন সঠিক পথে চলছে কিনা সেটা নিজেরাই যাচাই করে দেখুন। কোনো প্রকার অপপ্রচার বা গুজবে কান দিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না।”
আলোকিত/৩০/০৯/২০২৪/আকাশ