নোয়াখালীতে থানায় ওসি পদে পোস্টিং নিতে বিতর্কিত পুলিশ পরিদর্শকের দৌড়ঝাঁপ

0
1160
নোয়াখালীতে থানায় ওসি পদে পোস্টিং নিতে বিতর্কিত পুলিশ পরিদর্শকের দৌড়ঝাঁপ
নোয়াখালীতে থানায় ওসি পদে পোস্টিং নিতে বিতর্কিত পুলিশ পরিদর্শকের দৌড়ঝাঁপ
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালী ডিএসবির (বিশেষ গোয়েন্দা)  শাখার বিতর্কিত পুলিশ পরিদর্শক জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুইয়া এখনো স্বপদে বহাল থেকে সদর অথবা হাতিয়া থানায় পোস্টিং নিতে ব্যাপক তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন। ৫ই আগস্টের স্বৈরশাসকের পতনের পর নোয়াখালী জেলায় পুলিশের সকল শাখায় গণহারে বদলি হলেও এই কর্মকর্তা এখনো বহাল থাকায় জেলা বাসীর কৌতূহল,কোন খুটির বলে তিনি এখনো বহাল আছেন? ফ্যাসিবাদের দোষর নিজের দাম্ভিকতা প্রকাশ করে বলেন,আমাকে বদলি করার মতো ক্ষমতা জেলার কারো নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের এপ্রিলে লক্ষীপুর জেলা থেকে নোয়াখালীতে এসে মে মাসে ডিএসবিতে যোগদান করেন। আর ডিএসবিতে যোগদান করে পাসপোর্ট ভেরিফাইয়ের কৃত্রিম সময় বৃদ্ধি করে প্রতিটি পাসপোর্ট থেকে ১২০০ টাকা হারে ঘুসের রেট নির্ধারন করেন। নির্ধারিত ঘুসের টাকা ব্যাতিত কাউকে সময়মতো পাসপোর্ট দেওয়া হতো না।ডিএসবির পাসপোর্ট শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান,১২০০ টাকা ঘুসের মধ্যে এসপি শহীদুলকে প্রতি পাসপোর্টের জন্য ৬০০ টাকা,ডিআই-১ নিতেন ৫০০ টাকা বাকি ১০০ টাকা তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও অফিসের কাগজপত্র বাবদ তিনি খরচ দেখাতেন। এরপর পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য প্রতি আবেদনের ৫০০ টাকা সংশ্লিষ্ট থালাগুলোর ওসি থেকে মাসোহারা পেতেন। এসপি শহীদুল ইসলাম বদলি হওয়ার পর এসপি মোঃ আসাদুজ্জামান এখাত থেকে মাসোহারা না নিলেও বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি।
নোয়াখালী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, গড়ে প্রায় প্রতিদিন ৪০০ টি পাসপোর্ট ভেরিফাইয়ের জন্য ডিএসবিতে যায়।মানুষ জরুরি পাসপোর্টের অর্থ পরিশোধ করলেও তাদেরকে আমরা সময়মত পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া যেতো না ডিএসবির ভেরিফাইয়ের জটিলতার কারণে । অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, তৎকালীন এসপিকে প্রতিমাসে ডিএসবি থেকে ৩৭ লক্ষ টাকা মাসোহারা হিসাবে প্রদান করতেন উক্ত ডিআই-১ জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তাঁর দায়িত্বকালীন সময়ে মোট ৩ লক্ষ ২০ হাজার পাসপোর্ট ভেরিফাই করেছেন। আর এখান থেকে প্রতিটি পাসপোর্টের ব্যক্তিগতভাবে ৫০০ টাকা ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বাবদ আরো ৫০০ টাকা  করে নিয়ে হয়েছেন কয়েকশত কোটি টাকার মালিক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার সন্তান কানাডাতে পড়াশোনা করার সুবাদে সমুদয় টাকা হুন্ডির মাধ্যমে  কানাডায় পাচার করে দিয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
নারী কেলেঙ্কারিঃ অভিযোগ আছে কোনো নারী পাসপোর্ট অথবা পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের রিপোর্ট নিতে ডিএসবির কার্যালয়ে গেলে ডিআই-১ তার রুমে ডেকে নিতেন। ডিএসবির সেই সূত্র জানায়,সুন্দরী নারী দেখলে তার মাথা ঠিক থাকে না। সেবা নিতে আসা সুন্দরী নারীদের তার রুমে ডেকে তাদের সাথে সখ্যতা গড়তে মোবাইল নম্বর আদান প্রদান করতেন।চা-কফি খাওয়াতো।
 এবিষয়ে নোয়াখালী জেলায়  ইংরেজি দৈনিকে কর্মরত এক সাংবাদিক বলেন,একবার তিনি একজন নারীর পাসপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যায় সেই নারীকে নিয়ে তাঁর কাছে গেলে তিনি বলেন,ভাই আপনি ওনাকে রেখে চলে যান আমি তার সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছি। এই ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েন সেই সাংবাদিক।
মাদক সেবনঃ তার বিরুদ্ধে আরেকটি বড়ো অভিযোগ ছিলো যে অফিস কক্ষে বসে মাদক সেবন করতেন।একদিন কোনো একটি কারণে তার কক্ষে একটি মদের বোতল ফেলে যান।আর সেই ফেলে যাওয়া  মদের বোতলের ছবি তুলে গত এসপি আসাদুজ্জামানকে দেওয়ার অপরাধে মাস্টাররোলের চাকরি থেকে অফিস পিয়ন মোঃ হারুনকে বরখাস্ত করেন ডিআই-১  জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুইয়া।জানা যায়,আরেক অফিস পিয়ন সবুজ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার রতন কৃষ্ণ পালের মাধ্যমে বিদেশি মদ সেবন করতেন এবং পুলিশের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে সরবরাহও করতেন।এবিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন  বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একজন সিনিয়র নেতা।পাশাপাশি তিনি এটাও নিশ্চিত করেন যে, বর্তমানে বেগমগঞ্জের একজন প্রভাবশালী বিএনপির নেতাকে দিয়ে জোর তদবির করছেন সদর অথবা হাতিয়া থানায় ওসি হিসাবে পোস্টিং নিতে।
ওসি হিসাবে কর্মরতঃ পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, আওয়ামীলীগের আমলে এর আগে দুই দফা বিভিন্ন থানায় ওসি হিসাবে পোস্টিং নিয়েছিলেন।কিন্তু কোথাও ৬ মাসের বেশি চাকরি করতে পারেননি।কেন পারেনি এই প্রশ্নে তিনি বলেন,তার অধস্তনদের সাথে রূঢ় আচরণ,  নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধ এবং বেপরোয়া ঘুস বাণিজ্য অন্যতম কারণ।
সরকারি গাড়ির অপব্যবহার ঃ পুলিশের চাকরি বিধানে ডিআই-১ হিসাবে গাড়ি ব্যবহারে প্রাধিকার না হওয়া সত্ত্বেও ডাবল কেবিনের একটি পুলিশ ভ্যান গত এক বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাক্তিগত গাড়ির ন্যায় ব্যবহার করে আসছেন ডিআই-১ মোস্তাফিজ ।আর এতে জ্বালানি খরচ বাবদ সরকারের কয়েক লক্ষ টাকা গর্চা দিতে হয়েছে। এদিকে ৫ই আগস্টের পর সোনাইমুড়ী ও চাটখিল থানার ওসিরা গাড়ির অভাবে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এর আগে নোয়াখালীতে কোনো ডিআই-১কে গাড়ি হাকিয়ে অফিস করতে দেখা যায় নি।
সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের এমপিদের মনোনীত প্রার্থীদের সদর উপজেলার একেএম সামছুদ্দিন জেহান,সুবর্ণচর উপজেলার এমপি পুত্র সাবাব চৌধুরী, বেগমগঞ্জের শাহরিয়ার ও সেনবাগের এমপি পুত্র দীপুকে জিতিয়ে আনতে ডিআই-১ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে সাজান।এবং তাদেরকেই  দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো যাদের তালিকা  মোস্তাফিজ দিয়েছিলেন।
৫ই আগস্টের পর ৭ আগস্টে ডিএসবি অফিসে রহস্যময় আগুন লাগার ঘটনাঃ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারাদেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি থাকলেও নোয়াখালী জেলা শহর এবং  সদর উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বভাবিক রাখতে সমর্থ হয় তৎকালীন পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান। ৫ই আগস্টের বিপ্লবে স্বৈরাচার সরকারের  পতন ঘটে।কিন্তু ৭ই আগস্ট রহস্যময় আগুনে নোয়াখালী ডিএসবি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সরকারি ল্যাপটপ,গুরুত্বপূর্ণ নথি,এবং ফটোকপি মেশিনসহ আরো অনেক কিছু পুড়ে যায়। ডিএসবি ( বিশেষ গোয়েন্দা)  শাখায় রক্ষিত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার পরও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। পুলিশের সেই সূত্র থেকে জানা যায়, বিগত সেসব মানুষ যাদের নামে মামলা ছিলো তাদের পাসপোর্ট আবেদনের ভেরিফাইয়ে নেগেটিভ রিপোর্টকে মোটা অংকের বিনিময়ে ডিআই-১ পজিটিভ রিপোর্ট,রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে করা সেইসব রিপোর্ট । এসব তথ্য ছাড়াও আরো বেশকিছু তথ্য সংরক্ষিত ছিলে ল্যাপটপসহ বিভিন্ন নথিতে।কিন্তু রহস্যজনক সেই অগ্নিকাণ্ডে সকল কিছু পুড়ে ছাই।সূত্র দাবি করে ভবিষ্যতে যাতে কোনরূপ তদন্তের মুখে পড়তে না হয় এজন্যই কৃত্রিম আগুন লাগার ঘটনা সংঘটিত হয়।  তাঁরা আগুন লাগার ঘটনা তদন্ত করার জোর দাবি জানান।
নোয়াখালীতে আসার পর হতে ডিআই-১ নিজেকে চট্রগ্রামের লোক বলে পরিচয় দিতেন।কিন্তু তার জাতীয় পরিচয় পত্রে তার বাড়ি নরসিংদী জেলায় বলে জানা যায়।পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, উক্ত মোস্তাফিজ যখন যেখানে চাকরি করেছেন সুবিধাজনক বাড়ির ঠিকানা বলেছেন।নোয়াখালী জেলায় কর্মরত নোয়াখালীস্হ চট্রগ্রাম সমিতির নেতা ট্রাফিক পুলিশের টিআই সিরাজ উদ- দৌলা বলেন,তিনি নিজেকে চট্টগ্রামের দাবি করলেও তার বাড়ি কোথায় সেটা আমি বলতে পারবো না।এর আগে নোয়াখালী জেলায় কর্মরত চট্রগ্রামের পুলিশ সদস্যদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে।আর সেই সিন্ডিকেট গঠার নেপথ্যের কারিগর সদর থানার তৎকালীন  ওসি মোঃ আনোয়ার হোসেন,ডিএসবির ডিআই-১ জিয়া মোঃ মোস্তাফিজের সিন্ডিকেট এসপিকে মাসোহারা দিয়ে রীতিমতো অন্যান্য জেলার পুলিশ কর্তাদের কোনঠাসা করার অভিযোগ আছে।আর সেই সুযোগটি নিতে ভুল করেনি ডিআই-১ জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ।সম্প্রতি এ জেলায় বদলি হয়ে আসা নবাগত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল ফারুক গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২৪তারিখে জেলার কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়েজন করেন।সেই প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত একাধিক সাংবাদিক ডিআই-১ জিয়া মোঃ মোস্তাফিজ ভুইয়ার আংশিক দূর্ণীতির চিত্র তুলে ধরে তদন্তের দাবি জানান। কিন্তু দাবি জানানোর বেশকিছুদিন পার হলেও অদৃশ্য কারণে কোনো তদন্ত কমিটি করার খবর পাওয়া যায় নি। এই বিষয়ে জানার জন্য জেলার নবাগত পুলিশ সুপার  আবদুল্লাহ আল ফারুককে ফোন দিলে তিনি জানান,দূর্গাপুজাসহ বিভিন্ন থানা পরিদর্শনে ব্যস্ত থাকায় তদন্ত কমিটি গঠন করা যায় নি।তবে তিনি এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করে বলেন,কোনো বিতর্কিত দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে থানার ওসি হিসাবে পদায়ন করা হবে না।
জানা যায়,বর্তমানে উক্ত ডিআই-১ সরকারি যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নিজেকে সাধু সাজাতে একাধিক স্টাটাস দিচ্ছেন।সরকারি ফেইসবুক নিজের ব্যাক্তিগত কাজে ব্যবহারের সুযোগ না থাকলেও সেই আইনের তোয়াক্কাই করছেন না ডিআই-১ মোস্তাফিজ। আরো জানা যায়,জেলার বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে নিজেকে বিএনপিপন্থী অফিসার দাবি করে থানার ওসির পদ ভাগিয়ে নেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন।
আলোকিত প্রতিদিন/০৪ অক্টোবর -২৪/মওম
  

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here