মো.জিয়াউল ইসলাম:
পাথরঘাটাসহ সারা দেশে আজ মধ্যে রাত থেকে শুরু ২২দিনের অবরোধ চলবে ০৩ নভেম্বর পর্যন্ত । এ সময় সকল প্রকার মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার লক্ষে ইতিমধ্যে পোষ্টারিং,ব্যানার, সচেতনতামূলক সভা ও মাইকিংয়ের কাজ সমাপ্ত করেছে এমনটা জানিয়েছেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হোক।
পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, পাথরঘাটা উপজেলাপ নিবন্ধনধারী জেলেদের সংখ্যা প্রায ১৭ হাজার জন। অবরোধ চলাকালীন সময় এই জেলেদের জন্য বরাদ্ধ সরকার প্রদত্ত ২৫ কেজি চাল ইতিমধ্যে ইউনিয়নে ও পৌরসভায় পৌঁছে গেছে। শীঘ্রই এ চাল যথাযথভাবে জেলেদের মাঝে বন্টন করা হবে। এই নিষেধাজ্ঞা পালনে উপজেলার মৎস্য পাথরঘাটার জেলেরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
অপরদিকে এই বছর ভরা মৌসুমেও সাগরে মাছের আকাল পড়েছে। ঋণের বোঝা এবং ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে জেলেরা রয়েছে চরম বিপাকে। ফলে পেশা বদলের উপক্রম এখানকার জেলেদের।
দীর্ঘদিন কর্মহীন সময় পার করবেন তারা। তবে সরকার এই ২২ দিনের অবরোধের জন্য জেলে প্রতি ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ করেছে। তা নামে মাত্র প্রহসন ছাড়া কিছুই নয় বলে জানিয়েছেন জেলেরা।
জেলে আব্দুস ছালাম বলেন, ছেলে মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এনজিওর লোন টাহার ঋণ লইয়া মানষিক দুশ্চিন্তায় আছি। আর মহাজনের দাদনের টাহা কেমনে পরিশোধ করমু। এহন হতাশ অইয়া গেছি। ২২দিনের অবরোধে মাত্র ২৫ কেজি চাল যা দিয়া এই কয়দিন সংসার চলে?
মাঝি শাহিন বলেন, ট্রলারে কাজ করে গত বছর ঋণের টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারি নি। আবার ২২ দিনের অবরোধ আসলে এই ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা ঋণের বোঝা আরো বেড়ে যাবে। অনেক জেলে অভিযোগ করে বলেন, অবরোধকালীন সময়ে প্রতিবছর ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় মাছ ধরলেও কোনো ভূমিকা দেখা যায় না প্রশাসনের। তা না হলে আমাদের জালে চাহিদানুযায়ী মাছ ধরা পড়ত। তারা আরও দাবি করে বলেন, সরকার দু’বছরের স্থলে বছরে একবার সহ ভারতের সময়সীমার সাথে যেনো নিষেধাজ্ঞা (অবরোধ) দেয়া হয়।
বাবার দোয়া ফিস নাঈম হাওলাদার জানান, সবচেয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য ঘাট পাথরঘাটা এখান থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ চালান হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে গত কয়েক বছর যাবৎ বছরে দু’বার নিষেধাজ্ঞা, বৈরি আবহাওয়া, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি। সব মিলিয়ে এই পেশা এখন হুমকির মুখে।
ট্রলারের মালিক আনসার খান জানান, ব্যাংক থেকে লোন করে ট্রলার তৈরি করেছি। এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখিনি।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতি গ্রাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সরকার সমুদ্রে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ও জেলেদের স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। তবে সেটা যদি মৎস্য পেশাকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে তাহলে অতি সম্প্রতি এই পেশায় সংকট দেখা দিবে।
পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, অবরোধ চলাকালীন সময় দু-এক জন জেলের নিয়ম ভাঙার প্রবনতা থাকে। সেক্ষেত্রে আমরা প্রশাসনের সাথে মিটিং করেছি তারা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকনুজ্জামান খান বলেন নদনদী ও সমুদ্রে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে কেউ মাছ শিকার করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।