‘কালব’র পুরাতন কমিটির সীমা, আরিফ ও জোনাস ঢাকীর দুর্নীতি বর্তমান চেয়ারম্যানের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা অব্যাহত

0
230

এম. আর. কমল: ১৯৭৯ সালের ১৪ জানুয়ারিতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ১১টি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের সমন্বয়ে তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত হয় দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অফ বাংলাদেশ লিমিটেড (কালব)। পরবর্তীতে অন্যান্য ধর্মের এবং গোষ্ঠীর সমবায়ী সংগঠনকেও সদস্যপদ দেয়া হয়। কালব বিগত সাড়ে চার দশকে সদস্যদের দারিদ্র বিমোচনে রিসোর্ট, এগ্রো প্রজেক্টসহ নানা উৎপাদনমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে।
তিন বছর অন্তর অন্তর নির্বাচনের মাধমে এখানে কমিটি পরিবর্তন হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনে চেয়ারম্যানসহ কতিপয় অসৎ ব্যক্তি নির্বাচিত হয়ে আসে। যাদের দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি অনেক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। পরবর্তী নির্বাচন তথা ২০২২ সালের নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে আগষ্টিন পিউরিফিকেশন একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হলেও আগের কমিটির কয়েকজন দুর্নীতিপরায়ন লোকও নির্বাচিত হয়। ২০২২ সালের বোর্ড অব ডিরেক্টর নির্বাচনে আগষ্টিন পিউরিফিকেশন-চেয়ারম্যান, ফাহমিদা সুলতানা সীমা-ভাইস চেয়ারম্যান ও আরিফ মিয়া সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। এদের মধ্যে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ব্যতীত অন্য দুইজনই ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত এবং এদের আরেকজন দোসর ছিলেন পরিচালক নোয়েল চার্জ গোমেজ। আগষ্টিন পিউরিফিকেশন চেয়ারম্যান হওয়ার আগে তথা আগের কমিটিতে থাকাকালী সময়ে তারা প্রতিষ্ঠানটিতে রামরাজত্ব কায়েম করে ‘কালব’কে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানটিকে পৈত্রিক সম্পত্তির মতো ব্যবহার করতেন। ভাইস চেয়ারম্যান ফাহমিদা সুলতানা সীমার নামেই ১০০ কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে ১০০ কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ উঠে আসে। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। যেখানে ভাইস চেয়ারম্যানেরই এই অবস্থা সেখানে চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারির অবস্থা আরো ভয়াবহ। হয়তো সেকারণেই ফাহমিদা সুলতানা সীমা চেয়ারম্যানের ডান হাত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তারা উন্নয়নের নামে বিভিন্ন ভাউচার ও টেন্ডারবাজি করে আদপে নিজেদের আখেরই গুছিয়েছেন। ফলে প্রতিষ্ঠানটি অন্তসারশূন্য হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘদিন ধরে তিলে তিলে গড়ে উঠা ঐতিহ্য হুমকীর মুখে পড়ে যায়।
এমতাবস্থায় ক্ষমতার পালাবদল হয়। জোনাস ঢাকীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন বর্তমান চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশন। প্রতিষ্ঠানটিকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলতেই যেনো অনেকটা স্বর্গীয় দূতের মতোই আবির্ভাব ঘটে আগষ্টিন পিউরিফিকেশনের। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ওই চার দুর্নীতিবাজের কলিজার পানি শুকাতে থাকে। জোনাস ঢাকী আগষ্টিন পিউরিফিকেশনের কাছে পরাজিত হয়ে নিজের ও তার দোসরদের দুর্নীতির দায় আগষ্টিন পিউরিফিকেশনের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা চালাতে থাকেন। লিপ্ত হয়ে যান নানা রকম ষড়যন্ত্রে। মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সম্বলিত অপপ্রচার চালাতে থাকে কিছু অসাধু ভাড়াটে মিডিয়াকর্মী নামধারিদর মাধ্যমে । যারা সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই আগষ্টিন পিউরিফিকেশনের বিরুদ্ধে কিছু সংবাদ প্রচার করে। যার আধৌ কোনো ভিত্তি নেই। কারণ, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের বাস্তবতায় উঠে আসে ভিন্ন চিত্র। অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকী পরাজিত হওয়ার পর সেক্রেটারি আরিফ মিয়া হঠাৎ পদত্যাগ করে দুজনিই গা ঢাকা দেন। এ চক্রের সদস্য হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে যাদের নাম উঠে আসে তারা হলেন ভাইস-চেয়ারম্যান ফাহমিদা সুলতানা সীমা, পরিচালক মোঃ আরিফ হাসান, পরিচালক মোঃ আঃ মন্নান লোটাস, পরিচালক নোয়েল চার্লস গোমেজ, পরিচালক মোঃ হেলালউদ্দিন ও আশীষ কুমার দাশ।
এ চক্রের বিরুদ্ধে ‘কালব রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হল’র উন্নয়নের অর্থ আত্মসাৎ, জমি ক্রয়ের নামে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, আবাসনের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, রিসোর্টের রুমভাড়া নিয়ে বিল পরিশোধ না করা, ‘কালব রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হল’কে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার এবং এর বারের লাইসেন্স বাবদ কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, তারা অত্যন্ত দূরভিসন্ধিমূলকভাবে চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশনকে হেয় প্রতিপন্ন করতে ও কালব-এর মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক উন্নতির চাকাকে শ্লথ করার অপপ্রয়াস চালান। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যয় যে, মূলত আগষ্টিন পিউরিফিকেশনের গৃহিত ইস্পাতকঠিন প্রশাসনিক পদক্ষেপের সামনে পরাজিত হওয়ার পর জোনাস ঢাকী ও তার দোসরদের দুর্নীতির খোলস উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার ভয়ে এবং প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ব্যবহারে ব্যর্থ হয়ে অন্যান্যরা পদত্যাগ করেন।
জোনাস ঢালী, সীমা, আরিফ ও নোয়েল গোমেজ গংদের দুর্নীতি অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়- ‘কালব’-এর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিস কনসোর্টিয়াম প্রকল্পে বিনিয়োগের নামে অর্থ আত্মসাত করেছেন। তাদের মেয়াদকালীন সময়ে দুর্নীতির বিষয়ে সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক সমবায় সমিতি আইন-২০০১ (সংশোধিত-২০০২ ও ২০১৩)-এর ৪৮ ধারার পরিদর্শন প্রতিবেদনের আলোকে একই আইনের ৪৯ ধারায় তদন্ত হলে সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকাশ হয়ে যেতে পারে এমন আশংকা থেকে এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির প্রতিবেদনে বিভিন্ন অনিয়ম উঠে আসা, ‘কালব’ কর্মকর্তা কর্তৃক সম্পাদিত তদন্ত কার্যক্রম উদঘাটিত, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থলোপাটের বিষয়গুলো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই মূলত উপরে উল্লেখিত ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকীর পরাজয়ের পর তার দুর্নীতির সহযোগী ৭ (সাত) জন সদস্য পদত্যাগ করেন বলে জানা যায়।
অভিযোগ রয়েছে যে, পদত্যাগকারী সেক্রেটারি আরিফ মিয়া ও পরাজিত জোনাস ঢাকী ও তাদের সহচররা নিজেদের মধ্যে যোগসাজসে ‘কালব’র সফট্ওয়ার সংক্রান্ত চুক্তিতে চরম অনিয়ম, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম, কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি, বিউটিফিকেশনের কাজ, পার্কিং, দেয়াল ও ওয়াকওয়ে তৈরি, ওয়াশিংপ্ল্যান্ট, ইনডোর গেইমজোন, বেড, ম্যাট্রেস, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ওয়াশিং মেশিনসহ নানা ক্ষেত্রেও অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। এমনকি আরিফ মিয়া কালব রিসোর্টে একটি সাজানো গোছানো রুম দিনের পর দিন নিজের নামে বরাদ্দ নিয়ে রাতযাপন করতেন। যেখানে অবৈধ কর্মকাণ্ডও সংগঠিত হতো।
আরিফ মিয়া নিজের দুর্নীতি আড়াল করতে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের অগোচরে গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক এমপি মেহের আফরোজ চুমকিকে নানাভাবে প্ররোচিত ও সন্তুষ্ট রাখতেন। আরিফ মিয়া চুমকিকে নগদ অর্থ প্রদান ছাড়াও রিসোর্ট থেকে বিনামূল্যে প্রায় ১,৭৫,০০০/= টাকা মূল্যের ৫০০ প্যাকেট খাবার সরবরাহ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় আরিফ মিয়া তার সহযোগিদের নিয়ে ‘কালব’র মাঠ ফ্রিতে ব্যবহার করতে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন করেছেন বলে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। মেহের আফরোজ চুমকি এবং তার দলবল নিয়ে কালব রিসোর্টকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩ থেকে ৪ দিন এখানে দলীয় সভা হতো।
সভা বাবদ যত খরচ হতো তার কোনটিরই কোনো বিল তারা পরিশোধ করেননি। যা আরিফ মিয়া, জোনাস ঢাকী ও সীমা নিজেরা পরিশোধ করবেন বলে ঘোষণা দিলেও কখনো সেসব বিল পরিশোধ করেননি। জানা যায় যে, জোনাস ঢাকীর পরাজয়ের পর এসব বিষয় নিয়ে যখনই প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের মাঝে তদন্তের দাবি ওঠে তখনই বহাল থাকা জোনাস ঢাকীর সহযোগিরা পদত্যাগ করেন। যাতে কমিটির কার্যক্রম থমকে যায় এবং তদন্ত করতে না পারে।
বিগত বোর্ডের সময় আরিফ মিয়া ও তার মদদপুষ্ট জোনাস ঢাকী নানা অপকর্ম ও দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিলেন। যেমন- ‘কালব রিসোর্ট’র নামে বার লাইসেন্স বাবদ ৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করে ৫ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রকৃতপক্ষে বার লাইসেন্স বাবদ সরকারি খরচ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
রিসোর্ট উন্নয়নের জন্য জাহানারা ট্রেডার্সের নামে ভুয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ১৪ কোটি টাকার কাজ প্রদান, যেখানে ৩ কোটি টাকার কাজ সম্পাদিত হয়, বাকি টাকার ভুয়া বিল বানিয়ে আত্মসাৎ করেন। রিসোর্টের নতুন ক্রয়কৃত জমিতে বালি ভরাট করার জন্য ৯ কোটি টাকা অনুমোদন করে ১-২ কোটি টাকার বালু ভরাট করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন।
রিসোর্টের সামনে এটিএম বুথ তৈরি বাবদ ২৬ লক্ষ টাকা অনুমোদন করিয়ে প্রকৃতপক্ষে ২-৩ লক্ষ টাকার খরচ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন। রিসোর্টের উন্নয়নে কিড জোন তৈরি করার জন্য ৩ কোটি টাকা অনুমোদন নিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অকেজো ও পুরনো খেলনা ক্রয় করেন।
রিসোর্টের জন্য কোটি টাকার উপরে লন্ড্রি মেশিন ক্রয় দেখানো হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে এ ধরনের লন্ড্রি মেশিন ১০ লক্ষ টাকার কমেই পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে সেই লন্ড্রি মেশিনটি ডুপ্লিকেট। যা ইতোমধ্যেই বার বার বিকল হয়ে পড়ছে।
রিসোর্টের বিভিন্ন আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয় করার জন্য ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হলেও বাস্তবিকপক্ষে তালিকায় থাকা কোন সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়নি। এভাবে ঘটনা পরম্পরায় তাদের দুর্নীতির যেসব তথ্য আমাদের হাতে এসেছে তা লিখে শেষ করা অনেকটা দুরূহ বিষয়।
বিগত ২০২২ সালের বোর্ড অব ডিরেক্টর নির্বাচনে আরিফ মিয়া এবং জোনাস ঢাকী ভোট ক্রয় করার জন্য বিভিন্ন ক্রেডিট ইউয়নের প্রতিনিধিদের রিসোর্টে রাখেন, সে বাবদ বিল হয় ১৮ লক্ষ টাকার অধিক। যা তারা কখনো পরিশোধ করেননি।
আরিফ মিয়া বিভিন্ন সময় রিসোর্টে তার বন্ধু বান্ধব ও শুভাকাঙ্খীদের বিভিন্ন প্রোগ্রাম করার জন্য নিয়ে আসতেন এবং এ বাবদ যাবতীয় খরচ তিনি পরিশোধ করবেন বললেও পরবর্তীতে তা দেননি। এ বাবদ প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকার বিল তার নামে বকেয়া রয়েছে।
তাদের মেয়াদকালে কালব রিসোর্টের ৭ বিঘা জমি ক্রয় করে যার প্রকৃত মূল্য বিঘা প্রতি ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা করে কিন্তু জমির মূল্য দেখানো হয়েছে বিঘা প্রতি ২ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা। এখানেও ৭ বিঘা জমিতে ৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আরিফ মিয়া রিসোর্টে যে কোনো প্রোগ্রামে ৩য় পক্ষের মাধ্যমে আয়োজন দেখিয়ে ১০% প্রাপ্য বিল থেকে কমিশন বাণিজ্য করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব দুর্নীতির মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ জোনাস ঢাকী, সীমা ও নোয়েল গোমেজসহ তাদের চক্রের সদস্যরা ভাগবাটোয়ারা করে নিতেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। আরিফ মিয়া রিসোর্টের লেকে বিনা অনুমতিতে মাছ চাষ করে সেই মাছের খাবার রিসোর্ট থেকে সরবরাহ করাতেন। রিসোর্টের নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী নিজের বন্ধুর মাধ্যমে সরবরাহ করতেন। যারফলে প্রতি মাসে খাবার সামগ্রী ক্রয় বাবদ অতিরিক্ত ৫ লক্ষ টাকার অধিক ব্যয় হতো।
কালবের নানা প্রকল্পের প্রধান ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধাভোগি হিসেবে নাম পাওয়া যাচ্ছে ফাহমিদা সুলতানা সীমার। বার লাইসেন্সের সোয়া পাঁচ কোটি টাকার বাজেট থেকে বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা করে বড় অংকের সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয়ে বোর্ডের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে তিনি অপপ্রচার চালান।
উন্নয়ন কাজ বুঝে নেয়া কমিটির আহবায়কও ছিলেন সীমা। তাছাড়া, জমি ক্রয় সংক্রান্ত আহবায়ক কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনিই।
সূত্রমতে, ইমপেলভিস্তা (৩/১১ হুমায়ুন রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭) নামের ১টি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর মিঃ কামরুল হাসান হলেন ফাহমিদা সীমার আপন ভগ্নিপতি। ভগ্নিপতিকে সহযোগিতা দেয়ার জন্য ‘কালব’র চলমান অনলাইন সফটওয়্যার থাকা সত্ত্বেও নতুন করে সফটওয়্যার তৈরির নামে এপ্রিল ২০২১ খ্রিঃ ৭২,৮৫,০০০/- টাকার ওয়ার্ক অর্ডার ভাগিয়ে নেন। উক্ত কাজের মূল কারিগর ভাইস চেয়ারম্যান ফাহমিদা সীমা। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন ‘কালব’র কিছু অসাধু দুর্নীতিবাজ ডিরেক্টর ও কর্মকর্তা।
পরবর্তীতে জানুয়ারী ২০২২ খ্রিঃ একই সফটওয়্যারকে অফ লাইন বলে চালিয়ে দিয়ে ৩৯,০০,০০০/- টাকার ওয়ার্ক অর্ডার ভাগিয়ে নেন। সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞদের মতে সফটওয়্যারে অনলাইন বা অফলাইনে তেমন কোন পার্থক্য নেই। সামান্য কিছু পরিবর্তন করতে হয় মাত্র। যেখানে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো খরচ নেই। সেখানে বিনা খরচের সেই কাজটি করতে ফাহমিদা সুলতানা কোন প্রকার ক্রয় সংক্রান্ত নিয়ম কানুন তোয়াক্কা না করে উক্ত কাজ সম্পাদনের ব্যয় দেখিয়ে ভাউচার করেন ৩৯,০০,০০০/- টাকা।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০১৯ সালে ফাহমিদা সুলতানা সীমা ‘কালব’র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একজন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হিসেবে গাইবান্ধা সদর উপজেলা শিক্ষক কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ এর পক্ষে একজন প্রতিনিধি বা ডেলিগেট হিসেবে ‘কালব’-এ তার সংযোগ সৃষ্টির সুযোগ হয়। তৎকালে মিসেস সীমা বা তার স্বামীর কোন সম্পদ না থাকলেও পরবর্তীতে তার স্বামীর মালিকানাধীন ২টি মাইক্রোবাস যার নম্বর যথাক্রমে ঢাকা মেট্রো চ ১৩-৮৯৫৬ এবং ঢাকা মেট্রো চ ১৪-২১১৬। এভাবেই শুরু হয় তার দুর্নীতির সিঁড়ি বেয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার পালা। যার শিকার হয় ‘কালব’র মতো একটি এতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান।
‘কালব’র ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিন বছরের লুটপাটের টাকায় গাইবান্ধা শহরে একটি নতুন বাড়িও নির্মাণ করেন তিনি। গাজীপুর জেলাধীন কালীগঞ্জ থানার কুচিলাবাড়ীতে অবস্থিত কালব রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হল ‘কালব’র একটি প্রজেক্ট। উক্ত রিসোর্টটিকে ফাদমিদা সুলতানা সীমাও জোনাস ঢাকী ও আরিফ মিয়া গংদের মতো নিজের সম্পত্তি মনে করতেন।
ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তার আয়ত্বাধীন এলাকায় মোট কর্মীর সংখ্যা ছিলো ১৭২জন। কর্মী নিয়োগ, বদলীর সকল দায়-দায়িত্ব জিএম এর হলেও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ফাহমিদা সুলতানা সীমা টাকার বিনিময়ে প্রতি ২/৩মাস পর পর কর্মী বদল করতেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রায় ১২৪টি ক্রেডিট ইউনিয়নের মধ্যে ৬৪টি শিক্ষক ক্রেডিট ইউনিয়ন। উক্ত ক্রেডিট ইউনিয়নগুলোর মধ্যে বেশীরভাগ ক্রেডিট ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভায় ফাহমিদা সুলতানা সীমাকে বাধ্যতামূলক প্রধান অতিথি হিসেবে দাওয়াত দেয়ার রেওয়াজ চালু করেছিলেন তিনি। সেসব দাওয়াতে তাকে নগদ টাকা ও দামী উপঢৌকন দিতে বাধ্য করতেন ক্রেডিট ইউনিয়নগুলোকে। এছাড়াও যাতায়াতের জন্য দাবী করে মাইক্রোবাস ভাড়া আদায় করতেন। আবার টাকা নিয়ে ‘কালব’-এ স্টাফ নিয়োগ দেয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
তার সময়কালে ‘কালব’ বোর্ডের ৫টি উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। বোর্ড ডিরেক্টর ও স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে ভয় দেখাতেন নিজেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ।
দুর্নীতির কাজে স্থানীয় জেলা পর্যায়ে কিছু অসাধু কর্মীকে তিনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেন। বাকী কর্মীগণ তার ভয়ে কম্পমান থাকতো।
সমবায় অধিদপ্তর, স্থানীয় শিক্ষা অফিসার, দুর্নীতি দমন কমিশন ও ‘কালব’র অভিজ্ঞ ডেলিগেটদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে পরাজিত জোনাজ ঢাকী, সীমা, আরিফ ও নোয়েল গোমেজ গংদের দুর্নীতির তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থার মাধ্যমে ‘কালব’র ঐতিহ্য ও সম্পদ পূনরুদ্ধার করা জরুরী বলে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সকলের দাবি।
‘কালব’র বর্তমান চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশন যখন বিগত বোর্ডের চেয়ারম্যান জোনাস ঢাকীকে নির্বাচনে পরাজিত করে শক্ত হাতে প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন এবং বিগত কমিটির দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হন। তখন জোনাস ঢাকী, সীমা, আরিফ ও নোয়েল গোমেজসহ তাদের চক্রের সদস্যরা দিশেহারা হেয়ে পড়েন। আগষ্টিন পিউরিফিকেশনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যা অপবাদ দিতে থাকেন। এতোকিছু করেও যখন তাঁকে দমাতে ব্যর্থ হন তখন তারা ‘কালব’কেই বন্ধ করে দেয়ার পায়তারা করেন। সমবায় কর্মকর্তাদের নানা ভয়ভীতি ও আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে জোর করে কালবের কর্যক্রমকে ব্যাহত করার চেষ্টা চালান। পতিত সরকারের মদদপুষ্ট ক্যাডার বাহিনী হিসেবে খ্যাত তথাকথিত যুবলীগ কর্মীদের দিয়ে রিসোর্টে হামলা চালান এবং ‘কালব’ কর্মীদের মারধর করে রিসোর্ট দখল করার চেষ্টা করেন। এতো কিছুর সাথে যুদ্ধ করেও বর্তমান চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশন টিকে আছেন এবং বিগত কমিটির দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অটল অবস্থানে রয়েছেন। ‘কালব’র হারানো ঐতিহ্য এবং জৌলুস ফিরিয়ে এনে ‘কালব’কে স্বমহিমায় সুপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে বদ্ধপরিকর রয়েছেন আগষ্টিন পিউরিফিকেশন।

আলোকিত/২৪/১০/২০২৪/আকাশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here