নোয়াখালীতে অবৈধ ইট ভাটার ছড়াছড়ি, বিপন্ন পরিবেশ,প্রশাসন নির্বিকার

0
395
নোয়াখালীতে অবৈধ ইট ভাটার ছড়াছড়ি, বিপন্ন পরিবেশ,প্রশাসন নির্বিকার
নোয়াখালীতে অবৈধ ইট ভাটার ছড়াছড়ি, বিপন্ন পরিবেশ,প্রশাসন নির্বিকার
স্টাফ রিপোর্টার ঃ
নোয়াখালীর ৯টি উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইট ভাটা, প্রশাসনের নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ইট ভাটা। কয়লার পরিবর্তে পোঁড়ানো হচ্ছে কাঠ। ধোঁয়া নির্গামনের জন্য জিগ জাগ ভাটা ছিমনী দেওয়ার নিয়ম থাকলেও মানছে না কেউ। ইট ভাটার চারপাশ ১ কি.মি. এর মধ্যে কোন স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য কোন প্রতিষ্ঠান থাকলে ইট ভাটা স্থাপনা করা যায় না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এমনকি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে এইসব ইট ভাটা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৯টি উপজেলায় ১৫৬টি ইট ভাটা রয়েছে। এরমধ্যে বাংলা ভাটা রয়েছে ১১টি। সম্প্রতি জিগ-জাগ পদ্ধতির ৪১ টি ইট ভাটা অবৈধ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জানা যায়, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বছরের পর বছর চালু রয়েছে এই সব অবৈধ ইট ভাটা। মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করলেও তাদের থামানো যাচ্ছে না।  এইসব অভিযান পরিচালনা কালে প্রশাসনের লোকজনকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়ায় রয়েছে ২০টির মতো অবৈধ ইট ভাটা।আর সে-সব ইট ভাটা স্থানীয় সাবেক এমপি মোঃ আলীর হস্তক্ষেপের কারণে এইসব অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি।অতি সম্প্রতি হাতিয়ায় সাধারণ মানুষ এসকল অবৈধ ইট ভাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পরিবেশ অধিদপ্তর নোয়াখালী ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে হাতিয়ায় দুই একটি ইট ভাটায় অভিযান চালিয়ে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করে। এইসব ইট ভাটায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ। কাঠ পোড়ানোর ফলে নষ্ট হচ্ছে অনেক গাছ-গাছালী। অতিরিক্ত কাঠ পোড়ানোর ফলে নির্গত হচ্ছে ধুলিকর্ণা, পার্টিকুলেট কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, সালফারের এবং নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ যা চোখ ও ফুসফুসে শ্বাসনালীকে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এছাড়া ফসলী জমির টপ সয়েল নিয়ে যাওয়ার কারণে  উর্বরতা কমে যায়। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় রয়েছে ড্রাম চিমনি দেয়ে গড়ে উঠেছে ১১টির মত অবৈধ ইট ভাটা। বর্তমান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কঠোর নির্দেশনায় দিয়ে বলেছেন, নতুন করে আর কোন ইট ভাটার লাইন্সেস দেওয়া হবে না। যেসব অবৈধ ইট ভাটা আছে তা বন্ধের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ইট ভাটা বন্ধের উদ্দ্যোগ নিলে মালিক পক্ষ ইট ভাটা বন্ধ না করার জন্য হাই কোর্টে রিট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। নোয়াখালীর ইট ভাটার মালিক সমিতির নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  জানান, নোয়াখালীতে যারা বাংলা চিমনি ব্যবহার করে ইট ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন তা বন্ধের জন্য আমরা প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করবো। যাদের জিগজাগ ইট ভাটা রয়েছে প্রশাসন থেকে লাইন্সের মাধ্যমে ইট ভাটাগুলো চালানো হচ্ছে।তিনি জানান, এই সব ইট ভাটা যখন গড়ে উঠে এর আশেপাশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ছিল না। এখন গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানের দোহাই দিয়ে আমাদের ইট ভাটা বন্ধের যে নির্দেশ দিচ্ছে সেটি পুনঃবিবেচনার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন। প্রতিবছর একটি ইট ভাটায় ৭ কোটি টাকার মত বিনিয়োগ রয়েছে এমনকি হাজার হাজার শ্রমিক ওইসব ইট ভাটায় কাজ করছে। আমরা তাদের কর্মস্থানের ব্যবস্থা করেছি। ইট ভাটা গুলো বন্ধ হলে নোয়াখালীতে বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাবে। আশা করি প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন। নোয়াখালী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিহির লাল সর্দার বলেন সরকারের নির্দেশনায় আর কোন ইট ভাটার লাইন্সেস দেওয়া হবে না। বর্তমানে যেসব ইট ভাটার লাইন্সেসের মেয়াদ শেষ হয়েছে তা আর নবায়নের সুযোগ নাই। আমরা অচিরেই এই সব অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো, সরকারের নির্দেশনা আমাদেরকে বাস্তবায়ন করতেই হবে। নোয়াখালী ইটভাটা মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ইকরাম উল্যা ডিপটি জানান, জিগ-জাগ পদ্ধতির ইটভাটাগুলো দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর যাবত সরকারের সকল আইন মেনে ব্যবসা করে আসছিলো। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকারি সকল প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রনালয়ে ছাড়পত্র হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়ে বিভিন্ন আইনের ফাক ফোকড় দেখিয়ে কেন ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন করা বন্ধ রেখেছেন? খোঁজ নিয়ে জানা যায় সুবর্ণচর উপজেলায় বর্তমানে ১১টি বাংলা ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট প্রস্তুত হচ্ছে। এইসব ইটভাটায় প্রতিনিয়ত কাঠ পোড়ানোর ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আরো জানা যায়, ২০২০ সালে স্হানীয়  যুবলীগ নেতা বাবলু কুমার দাস ও সুভাস দাস এর হাত ধরে বাংলা ভাটার (সুভাস ব্রিকস্) সুচনা হয়। এরপর একে একে যুবলীগ নেতা রহমানের ২টি, আওয়ামীলীগ নেতা হাসানের হাসান ব্রিকস্, আড়তদার কাশেমের নূরালী ব্রিকস্ জিগজাগ পদ্ধতির থাকলেও গত ২ বছর প্রশাসনকে ম্যানেজ করে  তিনি কাঠ পুড়িয়ে ইট প্রস্তুত করছেন বলে জানা যায়। জিয়ার চরের স্হানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আলম মাঝি সুবর্ণচর উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা বাবলুর সহায়তায় ২০২০ সাল থেকেই আল্লার দান নামে বাংলা ভাটা চালু রেখেছেন।জানা যায়, প্রতিবছর পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন থেকে তাকে কয়েক দফা লক্ষ টাকা জরিমানা করেও নিবৃত্ত করা যায়নি দলীয় প্রভাব বিস্তার করার কারণে।এরেই ধারাবাহিকতায় সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর আশীর্বাদ পুষ্ট করিম মাঝি গত ২০২৩ সালে মুক্তা নামে আরো একটি বাংলা ভাটা চালু করে।এছাড়াও, তাহেরা,আলিফ নামে আরো ২টি বাংলাভাটা ঐ একই বছরে চালু করা হয়।এদিকে দেদারসে মাটির টপ সয়েল নিয়ে যাওয়ার কারণে নোয়াখালীর খাদ্য ভান্ডারখ্যাত সুবর্ণচরের খাদ্য উৎপাদনে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কৃষিবিদরা।সর্বশেষ খবর নিয়ে জানা গেছে,সেই আলম মাঝি  আবারো অবৈধ  ইট ভাটা চালু করতে হাইকোর্টে রিটসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে দেনদরবার করে চলছেন।
সূত্র:(প্রথম পর্ব প্রকাশিত)
আলোকিত প্রতিদিন/২৬ অক্টোবর -২৪/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here