ইমরুল হাসান:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জুলাই আগস্টের শহীদদের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত।
২০০৬ সালের মাস্টার মাইন্ডদের তাণ্ডবে এ দেশ পথ হারিয়েছিল। মানুষরুপী বর্বর পশুদের জন্য সেদিনের হত্যাকাণ্ড ছিল স্বাভাবিক তরুণ ও পথহারা জাতি ২০০৬ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত লড়াই করে জাতিকে মুক্ত করেছে। এতে বহু পবিত্র জীবন গেছে।
রবিবার সকাল ১০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারী ড. রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভা শুরু হয়।
আহত ও নিহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শ্রদ্ধার সাথে লালন করি আপনাদের। শহীদদের জাতীয় বীর মনে করি। তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জাতিকে জানাতে হবে।
জামায়াত আমীর শহীদ পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুসারে অন্তত একজনকে চাকরি দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন তাদেরকে চাকরিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধীদলগুলোকে এসব পরিবারের পাশ দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বলেছিল ক্ষমতা ছাড়ার পর ৫ লাখ আওয়ামীলীগ কর্মীকে হত্যা করা হবে। অভ্যুত্থানের পর ৫০০ কিংবা ৫ জনকে হত্যা করা হয়নি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ২৮ অক্টোবর ছিল ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রথম মহড়া। সেদিন হত্যাকাণ্ড, লাশের ওপর নৃত্য করা হয়েছে। হাসিনাকে স্বৈরাচারকে প্রতিষ্ঠা করত সহায়তা করা হয়েছিল সেদিন। মানুষ হত্যা করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা যায়না তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত দিতে হয়, জীবন দিতে হয় ও লড়াই করতে হয়। আপোষহীন সংগ্রামের মাধ্যমেই মানুষের মুক্তি নিশ্চিত হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের ছেলেরা রক্ত দিয়েছে জীবন দিয়েছে পরাজয় মেনে নেয়নি। ৫ আগস্ট যে পরিবর্তন হয়েছে এটি সুযোগ তৈরি করেছে এটিকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের লক্ষে পৌঁছাবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, শহীদরা মরে না বরং তারা সবসময় জীবিত। আমাদের আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণক্ষরে লেখা থাকবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্রলীগর ইতিহাস খুন ও ধর্ষণের ইতিহাস। গণতন্ত্রকে কেড়ে নেয়ার ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের। ভূখন্ড ত্যাগ করার ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের। লাশের ওপর নৃত্য করার ঐতিহ্য ছাত্রলীগের।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এটি জনতার দাবি।
গণহত্যা করার পর আওয়ামী লীগ আবার রাজনীতি করার অধিকার রাখে কিনা সেটি জনগণের আদালতে ফয়সালা হবে। রাজনৈতিক দলের বিচার করতে হবে।
জনগণ ও আদালত সিদ্ধান্ত নেবে গণহত্যাকারী দল রাজনীতি করতে পারবে কি না। এ বিষয়ে জনগণ, আইন ও আদালত বিচার করুক।
তিনি বলেন, সাংবিধানিক সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে। যাতে কোনো রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক সংকট না হয় এবং ফ্যাসিবাদ যেকোনো সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা। ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে এর সঙ্গে জড়িত শেখ হাসিনাসহ সকলের বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনাকে ১ নম্বর আসামি করে মামলা করা হয়েছিল এবং অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে তার মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের ইয়াতিম করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ৫ আগস্ট ত্যাগ ও কোরবানির মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। নতুন কোনো ষড়যন্ত্রকারী বাংলাদেশের পথ হারাতে পারবে না ।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ সকলকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা দেশে লুকিয়ে আছে তাদেরকে চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে গ্রেফতার করতে হবে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয় গণহত্যা হয়েছে বাংলাদেশে। নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। গণহত্যাকারী কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। তাদেরকে দূরে রাখতে হবে।
জাগপা মুখপাত্র ও সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রক্তের হলি খেলতে চেয়েছিল। ছাত্রজনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে। তারা ভারতের সেবাদাস।
বৈষমীবিরোধী আন্দোলনের হত্যাকান্ডসহ, পিলখানা, লগি বৈঠার হত্যাকান্ড, পিলখানা হত্যাকান্ড, শাপলা চত্বরের হত্যাকান্ড ও ৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের বিচার হতে হবে। জনতার আদালতে শেখ হাসিনার বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেতে হবে।
এই সুধী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহি পরিষদ সদস্য আব্দুর রব, মোবারক হোসেন,কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা,দক্ষিণের নায়েবে আ.সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান,নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন,কামাল হোসেন প্রমুখ।
আলোকিত প্রতিদিন/২৭ অক্টোবর -২৪/মওম