রানা ইস্কান্দার রহমান:
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে হামলা-অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং তিন সাঁওতাল হত্যার ৮ম বার্ষিকীর কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। গত ৬ নভেম্বর বুধবার গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (গানাসাস) মুক্ত মঞ্চে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, এএলআরডি ও নাগরিক সংগঠন জন উদ্যোগ, গাইবান্ধা যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সমাবেশের শুরুতেই সাঁওতাল ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সাঁওতাল-বাঙালি নারী-পুরুষেরা তাদের অধিকার এবং দাবী সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বর্ণাঢ্য মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সাঁওতাল নারী-পুরুষেরা তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী পোশাক, বাদ্যযন্ত্র ও তির, ধনুকসহ অংশগ্রহণ করে।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক ও ভূমি অধিকার কর্মী শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, পরিবেশ আন্দোলন গাইবান্ধার সভাপতি ওয়াজিউর রহমান রাফেল, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদ আহ্বায়ক ঋ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, জন উদ্যোগের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, বাসদ নওগাঁ জেলার সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদ সদর উপজেলা আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী মুসা, আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুর্মু, রংপুর বিভাগীয় খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাথিয়াস মার্ডি, সাঁওতাল হত্যা মামলার বাদী থমাস হেমব্রম এবং সুচিত্রা মুর্মু তৃষ্ণা প্রমুখ।
বক্তারা সাঁওতাল হত্যার বিচার, আসামীদের গ্রেফতার, গুলিতে আহত সাঁওতাল, বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। চাষাবাদরত সাঁওতাল-বাঙালিদেও সেচ সুবিধার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সংকট নিরসনে পৃথক ও স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠনসহ সাত দফা বাস্তবায়নের দাবী করেন।
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বর্তমান আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি দাঁড়িয়ে যাও তাহলে তোমার বাংলাদেশ। যে আন্দোলনে রক্ত যায় সে আন্দোলন বৃথা যেতে পারে না। ৫০টিরও বেশী জাতিগোষ্ঠী বাংলাদেশে আছে, বাংলাদেশ সকল ধর্ম, সকল জাতিগোষ্ঠীর দেশ। সকল জাতিস্বত্তা, সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হবে। এ ছাড়াও ক্ষুদ্র্র নৃগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি; সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠনেরও দাবী জানানো হয়। সারা দেশে সাঁওতালসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানবাধিকার, জীবনমানের দিক দিয়ে আজও নানাভাবে বঞ্চিত। সমতলের আদিবাসীরা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। শুধু আদিবাসীরাই বিলুপ্ত হচ্ছে না, তাঁদের সংস্কৃতি, ভাষাও বিলুপ্ত হচ্ছে। পরিণত হচ্ছে দেশের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীতে।
গাইবান্ধায় সাঁওতাল হত্যা ও লুটপাটকারীদের বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ। অধিকাংশই ভূমিহীন, তাঁদের কাছে তুমি নেই। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ক্রমাগত সাঁওতালসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সাঁওতালরা তাদের অধিকার এবং মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত।
আলোকিত প্রতিদিন/০৭ নভেমাবর-২৪/মওম