মো. মিজানুর রহমান খান কুদরত, মানিকগঞ্জ
অপরূপ গ্রাম বাংলার পুকুর, খাল-বিল ও হাওরের পানিতে অযত্নে বেড়ে ওঠা শালুক আগে ছিল অভাবী মানুষের খাবার। কিন্তু উৎপাদন কমে যাওয়ায় এর কদর এখন দেশজুড়ে। পুষ্টি সন্ধানীদের কাছেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে বেশ। উৎপাদনের খরচ নেই, শুধু পানি থেকে তুলে আনার কষ্টটুকু মেনে নিলেই উপার্জনের সুযোগ। সেজন্য শালুক তুলতে আগ্রহী পুকুর-হাওরপারের অনেক মানুষ। অন্যদিকে সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে কিনে দিগুণ মূল্যে বিক্রি করছেন কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। সেজন্য বাজারে শালুক এখন আকর্ষণীয় খাদ্যপণ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড় শহরগুলোতে শালুকের দাম ভিন্ন। তবে মানিকগঞ্জের ঘিওর-দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে কদর বাড়ছে শালুকের। উপজেলার বিভিন্ন বাজার- ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ অথবা ১০০ টাকায়। দোকানির মজুদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকে টুকরির সামনে। এসব বিবেচনায় বাণিজ্যিকভাবে শালুক চাষ হলে আসতে পারে ভালো সফলতা- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করছেন বিশ্লেষক এবং কৃষি কর্মকর্তারা।
দৌলতপুর উপজেলার আনন্দ বাজারে টুকরিতে (ঝুড়ি) করে শালুক বিক্রি করছিলেন ষাটউর্দের কবিল মিয়া। খুচরা বিক্রি দিনে প্রায় ৪০ কেজি। তিনি জানালেন, আমনের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় শালুকের উৎপাদন কমেছে। তবে এখনও পানিতে প্রচুর শালুক পাওয়া যায়।
কবিল মিয়া (৬০) আরও জানান, শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ দলবদ্ধভাবে পুকুর, খাল-বিল থেকে শালুক তোলেন। তাদের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে কিনে নেন তিনি। এরপর সিদ্ধ দিয়ে বাজারে বিক্রি করেন ১০০ টাকা কেজি দরে। গেল ১০ বছরে শাপলা-শালুক বিক্রির মাধ্যমে পরিবার চালানোর পাশাপাশি কিছু জমিরও মালিক হয়েছেন তিনি।
একই উপজেলায় রামচন্দ্রপুর গ্রামের বানু বেওয়া দৌলতপুর বড় বাজারে শাপলা-শালুক বিক্রি করেন প্রায় তিন বছর ধরে। এ ব্যবসায় তার সংসার চলে যাচ্ছে মোটামুটি ভাবে। তিনি বাণিজ্যিকভাবে শালুক চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কয়েকজন শালুক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে ভেজা শালুক ৪০ টাকা কেজিতে কেনা যায়। প্রতি ৫০ কেজি সিদ্ধ দিলে ওজন কমে প্রায় পাঁচ কেজি। পরে এগুলো বাজারে এনে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এতে ভালো মুনাফা আসে।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ রেজাউল হক জানান, এক সময় হাওর-বিলে ব্যাপকভাবে শালুক উৎপাদন হতো। তবে বোনা আমনের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় এখন তা কিছুটা কমেছে। সরকারিভাবে শাপলা-শালুক চাষের উদ্যোগ নিলে এটি আলোর মুখ দেখতে পারবে। এটা করতে পারলে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, শাপলা গাছের গোড়ায় একাধিক গুটির জন্ম হয়। যা ধীরে ধীরে বড় হলে তাকে শালুক বলা হয়। বাজারে শাপলার ডাঁটারও বেশ চাহিদা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে শালুক অত্যন্ত উপকারী। এটি সবজি হিসেবে কাঁচা, সিদ্ধ করে ও পুড়িয়ে খাওয়া যায়। শরীরে খাদ্যশক্তির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এ সবজি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ে শালুক বেশ উপকারী। একটি ১০০ গ্রাম ওজনের শালুকে খনিজ পদার্থ রয়েছে ১.৩ গ্রাম, আঁশ ১.১ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ১৪২ কিলোক্যালোরি, প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম এবং ক্যালসিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি