মানিকগঞ্জে খাল সংস্কার প্রকল্পে অনিয়ম, কাজ শেষ না করেই ১৪ কোটি টাকা উত্তোলন  

0
219

মো. মিজানুর রহমান খান কুদরত, মানিকগঞ্জ 

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় মানিকগঞ্জ পৌরসভার খাল সংস্কার প্রকল্প জনগণের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় শহরের যানজট পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এদিকে  নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে।

জানাগেছে, ২০২২ সালে মানিকগঞ্জ জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি ও পৌরসভার তৎকালীন মেয়র মো. রমজান আলীর নেতৃত্বে আ’লীগের চিহ্নিত টেন্ডারবাজরা সিন্ডিকেট করে  খাল সংস্কার প্রকল্প হাতে নেয়।বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ঠ প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে কার্যাদেশ দেয়া হয় ওই বছরের ১০ মে। ৫ খন্ডের প্রকল্প প্যাকেজটি বাস্তবায়নের জন্য যৌথভাবে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয় জেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেলের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এপেক্স এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স কামরুল এন্টারপ্রাইজকে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৫ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।

২০২২ সালের ১৮ মে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রকল্পের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হয়। প্রভাবশালী টেন্ডারবাজ  চক্র পরবর্তীতে প্রকল্প ব্যয় আরো ৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় উন্নীত করে। এরপর বিল উত্তোলনের জন্য তড়িঘড়ি করে কাজ শুরু করে। ব্যবহার করা হয় নিম্নমানের সব নির্মাণ সামগ্রী।

পৌরবাসীর অভিযোগ, পতিত ফ্যাসিস্ট আ’লীগ সরকারের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সাবেক মেয়র, প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ঠিকাদার পরস্পরের যোগসাজসে খাল সংস্কারের নামে অর্থ লোপাটে মরিয়া হয়ে ওঠে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে উত্তোলন করে সাড়ে ১৪ কোটি টাকা।

গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর জাহিদ মালেক, রমজান আলী ও আপেল আত্মগোপনে চলে যান। সম্পূর্ণ  বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ।

পৌরসভার গঙ্গাধর পট্টি এলাকার বাসিন্দারা জানান, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে বাজার ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটি প্রায় এক বছর যাবত যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে শহরের শহীদ রফিক সড়ক এবং গার্লস স্কুল সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এতে ভয়াবহ যানজট পরিস্থিতি নিত্যনৈতিক ব্যাপারে দাঁড়িয়েছে। নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় কাজ শেষ না হওয়ার আগেই সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তার অনেক জায়গায় দেবে যাচ্ছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়,
জেলা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালটি বর্তমানে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। রাস্তার অনেকাংশে দেবে যাচ্ছে। যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

প্রকল্প কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা মানিকগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নানকে অফিসে গিয়ে ও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া না গেলে সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল বাতেন জানান, সেকেন্ড সিটি রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিআরডিপি-২) এর অর্থায়নে বাস্তবায়াধীন রিএক্টিভেশন অফ মানিকগঞ্জ খাল ইনক্লুডিং স্লোপ প্রোটেকশন, ওয়াকওয়ে, ল্যান্ড স্কেপিং, ফুট ব্রিজ, স্ট্রাকচারার ব্রিজ ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণ শীর্ষক প্যাকেজটি বাস্তবায়নের মেয়াদকাল শেষ হয় ২০২৩ সালের ১০ মে।ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে কয়েক দফায় সময়সীমা বাড়ানো হয়। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সর্বশেষ মেয়াদ ধার্য করে কর্তৃপক্ষ। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় ঠিকাদারের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আ.ন.ম. গিয়াসউদ্দিন  জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো চল্লিশ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। মোট বরাদ্দকৃত ২৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৯’শ ১৩ টাকা। এএর মধ্যে ৫০ শতাংশ টাকা ঠিকাদার কে প্রদান করা হয়েছে।
নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত নিম্নমানের খোয়া সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক সানজিদা জেসমিন জানান, বিষয়টি প্রকল্প পরিচালক সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here