খালেদ হাসান:
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য রাতের আঁধারে ফেলা হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায়। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায় ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এর ৩৩ নং ওয়ার্ডের আওতাধীন রঘুরামপুর পল্লী বিদ্যুৎ আঞ্চলিক অফিস এর বিপরীত পার্শ্বে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ইউজ করা সিরিন্জ,রক্ত মাখা কাঁচের টিউপ,মেয়াদ উত্তীর্ণ ইনজেকশন, অপচনশীল ইনজেকশনের পেকেট, সুঁই ইত্যাদি মারাত্মক পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ মেডিকেল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে আলহাজ্ব আল আমিন আহমেদ নামক একজন ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায়। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তেমনি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে ঐ এলাকার বসবাসরত হাজারো বাসিন্দা।
এলাকাবাসী বলছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আর অসচেতনতায় এমন অব্যবস্থাপনার জন্য দ্বায়ী। চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অবশ্যই চিকিৎসা বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা ও জীবাণুমুক্ত করার নিজস্ব ব্যবস্থাপনা থাকার কথা থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি মমেক হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে নিয়মিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধানে নামলে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের এই বর্জ্য গুলো তাদেরই নিয়োগকৃত ফজলুল হক নামের একজন ব্যক্তি তার নিজ দায়িত্বে অপসারণ করে। কোন টেন্ডার ছাড়াই প্রতিদিন ফজলুল হকের লোকজন বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কাগজ, ঔষধের প্যাকেট, ক্যাথেটার, স্যালাইন এর প্যাকেট ও কার্টন এর পাশাপাশি এইসব মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের স্টোর অফিসের সামনে এনে জড়ো করে। সেখান থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেগুলো বিক্রি করা যায় সেগুলো রেখে বাকিগুলো ফেলে দেওয়া হয়। প্রচুর পরিমাণে ফেলে দেওয়া মেডিকেল বর্জ্য গুলো ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের কোন ডাম্পিং প্রক্রিয়া না থাকায় তারা নিতে পারে না। ফজলুল হক প্রতিমাসে কার্টন, প্যাকেট ও অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করে কিন্তু এই টাকার কতটুকু সরকারি খাতে জমা হয় তার সঠিক উত্তর দিতে পারেনি মমেক কর্তৃপক্ষ। ফজলুল হক আর্থিক লাভের আশায় মেডিকেল বর্জ্য রাতের আঁধারে ঐ জায়গায় ফেলে দিয়ে আসে। এই বিষয়ে ফজলুল হককে জিজ্ঞেস করলে তিনি মেডিকেল বর্জ্য ফেলে আশা জায়গাটি নিজের বলে দাবি করলেও তার স্বপক্ষে কোন দলিল দেখাতে পারেনি। জমির মালিক আলহাজ্ব আল আমিন আহমেদ এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি শহরে থাকি তাই এই বর্জ্য গুলো রাতের আঁধারে কারা ফেলে যায় বলতে পারছি না। এখানে বর্জ্য ফেলে রাখার কারণে আশেপাশের লোকজন আমাকে চাপ প্রয়োগ করছে। আমি এগুলো না পারছি অন্যত্র সরিয়ে নিতে না পারছি পুড়িয়ে ফেলতে। মোহাম্মদ আবুল বাশার নামে একজন এলাকাবাসী বলেন খোলা জায়গায় ফেলে রাখা এসব প্রাণঘাতী চিকিৎসা বর্জ্য অনেক ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। আবর্জনা গুলো পচে এলাকায় বিকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা এবং ঘটনার সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা উচিত। ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক শেখ মো:নামজুল হুদা বলেন যে কোন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব হলো সিটি কর্পোরেশন বা ঐ প্রতিষ্ঠানের। ক্লিনিক্যাল বা মেডিক্যাল বর্জ্য এটার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি নিজ দায়িত্বে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে হবে। মেডিকেল বর্জ্য অবশ্যই নিদিষ্ট স্থানে একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যামে ফেলা উচিত। আর তা না হলে মেডিকেল ও ক্লিনিক্যাল বর্জ্য থেকে পরিবেশ দূষিত হবে । সুঁই বা অন্য ক্লিনিক্যাল বর্জ্য থেকে অনেক ধরনের রোগ জীবানু মানুষ ও পশু পাখির মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে। মমেক হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য গুলো দ্রুত অপসারণ এবং এর সাথে যারা জড়িত তাদেরকে দ্রুত আইনের আওয়তায় আনার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও স্বাস্থ্য সচেতন মহল।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৩ নভেম্বর-২৪/মওম