আবু সায়েম:
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানাধীন বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের কচ্ছপিয়া এলাকার নুর হোসেনের বাড়ির পেছনে পাহাড়ের চূড়ার মানবপাচারকারীদের গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৩১ ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় মানবপাচারকারী চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধারকৃত ভিকটিমদের মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশী বাকি ২৬ জন রোহিঙ্গা নাগরিক।
১৮ নভেম্বর সোমবার রাত আনুমানিক ২ঃ ৩০ এর দিকে র্যাব-১৫ এর হোয়াইক্যং আভিযানিক দল এ অভিযান পরিচালনা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক ( ল এন্ড মিডিয়া) দেবজিত পাল।
উদ্ধারকৃত ভিকটিমরা হলো, চকরিয়া দোলাহাজারার আবুল কালামের পুত্র আতিকুর রহমান (৩২), মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের আব্দুল কাদেরের পুত্র মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ( ২৭), একই উপজেলা ও ইউনিয়নের ফরিদের ছেলে মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ( ২২), একই উপজেলার নজির আহমদের পুত্র মোহাম্মদ শহিদ (১৭), টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের সাব্বিরের কন্যা হাসনা বেগম( ১৮), উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১২, ব্লক জি ১৭ এর মনজুর রহমানের পুত্র মোহাম্মদ নূর ( ১২), ক্যাম্প -৩, ব্লক এইচ -৩৬ এর নুর মোহাম্মদের পুত্র নূর কামাল ( ৩৫), ক্যাম্প ১৭, ব্লক এইচ -১০০ এর আজিমুল্লাহর পুত্র শরীয়ত উল্লাহ (১৭), ক্যাম্প -৫ ব্লক ই – ১ এর সৈয়দ নুরের পুত্র মোহাম্মদ আরাফাত ( ১৪), ক্যাম্প -১৯, ব্লক – ডি -১২ এর হাফেজ আহমেদের পুত্র নাঈমুল হাসান (২০), ক্যাম্প -৩ ব্লক – ই -৫৪ এর জালাল আহমেদের পুত্র আয়াতুল্লাহ ( ১২), রোহিঙ্গা ক্যাম্প -১৩, ব্লক – জি -৩ এর অলি আহমদের পুত্র সালমান (১৭), ক্যাম্প -১৩ ব্লক – এফ -১ এর কোভির আহমেদের পুত্র মোহাম্মদ নুর (১৭), ক্যাম্প -৩ ব্লক -ডি – ৪০ এর আব্দুল মোতালেবের স্ত্রী সেনোায়ারা (২৫), ক্যাম্প-১৭, ব্লক – এ-১০০০ এর অলি আহমদের পুত্র খুইললে বানু ( ১৮), ক্যাম্প -১৩, ব্লক – জি-৩ এর অলি আহমদের কন্যা সুফাইরা (১৭), ক্যাম্প -৩ ব্লক – সি -৩৯ এর সৈয়দ,সালামের কন্যা জোহরা আক্তার (১৭), ক্যাম্প -৪, ব্লক – ডি -৪ এর দিল মোহাম্মদের কন্যা হামিদা (১৭), ক্যাম্প -১২, ব্লক – এইচ-১৩ এর শামসুল হকের কন্যা বিবি আছিয়া ( ২৪), ক্যাম্প -৩, ব্লক -বি -৪০ এর মুসা আলির কন্যা চকুতারা ( ১৮), ক্যাম্প-৩, ব্লক ডি -৪০ এর নুর হোসেনের কন্যা তসলিমা (১৮), ক্যাম্প -১০, ব্লক – এ -৩৬ এর কাশেমের কন্যা দিল কায়াস ( ১৬), ক্যাম্প -৩, ব্লক – ই -৬ এর,নুর আলমের কন্যা আরজিনা (১৮), ক্যাম্প -১৭, ব্লক এ -১০০০ এর নুর আলমের কন্যা রুমিয়াছ (০৭), ক্যাম্প -১৫, ব্লক -বি – ০৩ এর নুর মোহাম্মদের কন্যা দিলারা ( ১৪), ক্যাম্প -১১, ব্লক – ডি -০৫ এর শামসুল আলমের কন্যা হামিদা (১৫), ক্যাম্প – ১০, ব্লক – এইচ-৩৬ এর মহিবুল্লাহর পুত্র নুরুল আমিন (০৮), ক্যাম্প -১০, ব্লক -এইচ -৩৬ এর মহিবুল্লার পুত্র নুর হাফেজ (০৬) এবং ক্যাম্প -১০ ব্লক – এইচ-৩৬ এর নুর সাহারা ( ০৩)।
এছাড়া গ্রেফতারকৃত ২ মানবপাচারকারীরা হলো, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী ৪ নং ওয়ার্ডের মৃত অছিউর রহমানের পুত্র মো: আনোয়ার (৪৪) এবং একই উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের উত্তর লম্বরীর মৃত রফিকের পুত্র মোহাম্মদ আইয়ুব (৩৬)।
র্যাব জানায়, উদ্ধারকৃত ভিকটিমদের মালয়েশিয়ায় নেয়ার কথা বলে কচ্ছপিয়ার পাহাড়ের চূড়ায় আস্তানায় আটকে রাখে মানব পাচারকারীরা। সেখানে থাকা অবস্থায় বার্মায় আছে বলে ভিকটিমদের পরিবারের নিকট ফোন করে টাকা দাবী করা হতো। এভাবে করে অনেকের নিকট হতে জনপ্রতি এক লক্ষ করে টাকা আদায় করে পাচারকারীরা। উদ্ধারকৃত এক ভিকটিমের ভাষ্যমতে তাকে আট দিন ধরে পাহাড়ী ঐ আস্তানায় আটকে রাখা হয়। অপর এক ভিকটিমকে আটকে রাখা হয় তের দিনের অধিক সময়। উদ্ধারকৃত এ সকল ভিকটিমদের ঠিকমত দেয়া হতো না খাবার। করা হতো বিভিন্নভাবে শারীরিকভাবে নিযার্তন।
র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক ( ল এন্ড মিডিয়া) দেবজিত পাল বলেন, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেন। তাদের চক্রের মূলহোতাসহ আরো ৫-৭ জন কৌশলে পালিয়ে যায় বলে জানায়।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, ভিকটিমদের আর্থ-সামাজিক অনগ্রসরতা ও পরিবেশগত অসহায়ত্বকে পুঁজি করে মানব পাচারকারী চক্র উন্নত জীবন-যাপন, অধিক বেতনে চাকুরী এবং অবিবাহিত নারীদেরকে বিবাহের মিথ্যা প্রলোভনের মাধ্যমে ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে যৌন নিপীড়ন, প্রতারণামূলক বিবাহ ও জবর-দস্তিমূলক শ্রম সেবা আদায় এর অভিপ্রায়ে পাহাড়ী আস্তানায় একত্রিত করে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য জোরপূর্বক আটক রাখা হয়। মূলহোতাসহ সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের র্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উদ্ধারকৃত ৩১ জন ভিকটিম এবং গ্রেফতারকৃত পাচারকারীদ্বয়ের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণার্থে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৯ নভেম্বর-২৪/মওম