মানিকগঞ্জে আড়াই কোটি টাকার ব্রীজে উঠতে হয় কাঠের মই বেয়ে, চরম জনদুর্ভোগ 

0
197
মানিকগঞ্জে আড়াই কোটি টাকার ব্রীজে উঠতে হয় কাঠের মই বেয়ে, চরম জনদুর্ভোগ 
মানিকগঞ্জে আড়াই কোটি টাকার ব্রীজে উঠতে হয় কাঠের মই বেয়ে, চরম জনদুর্ভোগ 

মো. মিজানুর রহমান খান কুদরত:

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ধলেশ্বরী নদীর উপর নির্মিত সেতুর আকার বৃদ্ধি এবং সংস্কার চলছে ধীর গতিতে। উপজেলার ঢুলন্ডি-সিংজুরী আঞ্চলিক পাকা সড়কের পেঁচারকান্দা এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর উপর নির্মিত এই সেতুটি সংস্কারের কাজের ব্যয় ২ কোটি ৫৫ লাখ  ৫৬ হাজার টাকা। গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শুরু হওয়া কাজ ২০২৪ সালের ২০ জুলাইয়ের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হবার পরও কাজের অগ্রগতি অর্ধেকও হয়নি। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে এ পথে চলাচলকারি তিনটি  ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষজন।

নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এ সেতুর উপকারভোগীদের যানবাহন নিয়ে জেলা সদরে যেতে হচ্ছে কমপক্ষে ১০ কি.মি ঘুরে। এতে করে এলাকার শিক্ষার্থী, চাকরিজীবি, কৃষকসহ সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকারে হচ্ছেন। এ সড়কে প্রতিদিন সিংজুরী, পয়লা ও বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ যাতায়া করে থাকেন। অন্যদিকে পায়ে হেঁটে বিকল্প কাঠের মই দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এ অবস্থায় সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় সাইংজুরী গ্রামের মো. আল আমিন বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফলতি ও অবহেলায় কাজের ধীরগতি হচ্ছে। অল্প সংক্ষক লোক দিয়ে কোনমতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে কাজ চলছে। এ ছাড়াও অদক্ষ শিশু শ্রমিক দিয়ে করানো হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সেতুর কাজ।

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে পেঁচারকান্দা বাজার সংলগ্ন ধলেশ্বরী নদীর ওপর ১০০ দশমিক ১০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু নদীর উত্তর পার্শ্বের বন্যার ভাঙ্গনে সেতুর এপ্রোচ সড়ক নদীতে বিলীন হওয়ায় যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। পরবতীর্তে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে “প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজ” প্রকল্পের আওতায়- ২ কোটি ৫৫ লাখ  ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৫.৮ মিটার সেতু বৃদ্ধি ও পুরো সেতু সংস্কারের কাজ হাতে নেয় এলজিএডি। এ কাজের দায়িত্ব পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিতু ট্রেডার্স জামালপুর।

গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শুরু হওয়া কাজ ২০২৪ সালের ২০ জুলাইয়ের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হবার পরও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫০ ভাগ। এরি মধ্যে কাজ এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২৫ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।

স্থানীয়রা বলছে, যাতায়াতের উন্নয়নে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় সমালোচনার মুখে পড়ছে উন্নয়ন কাজ। কয়েকদিন পর পর শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে সাইট থেকে চলে যান, আবার শুরু করেন। কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে।

স্থানীয় বালিয়াখোড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান বলেন, জনগনের ভোগান্তি লাগবে সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানাই। অনন্ত ৩টি ইউনিয়নের মানুষজনের চলাচলে খুবই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষকের কৃষি পণ্য ও উপকরণ পরিবহনে দ্বিগুণ অর্থ অপচয় এবং কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, কাজের সিডিউল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজ হয়েছে মাত্র অর্ধেক। অল্প সংক্ষক লোক দিয়ে চলছে কাজ। অদক্ষ শিশু শ্রমিক দিয়েও করানো হচ্ছে গুরুত্বপূর্ন সেতুর কাজ বলছেন কেউ কেউ।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি পিন্টু সাহা মুঠোফোনে জানান, জাতীয় নির্বাচন এবং বর্ষার কারনে কাজ শুরু করতে একটু বিলম্ব হয়েছে। ২য় ধাপে কাজের সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামী জানুয়ারীর মধ্যে কাজ শেষ হবার কথা জানান তিনি।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, আমি ঘিওরে নতুন যোগদান করেছি। বর্তমানে সেতুর কাজ চলমান রয়েছে। সিডিউল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে প্রায়ের মধ্যে ৫০ ভাগ কাজ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এ কাজে নিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সাথে কথা বলা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।

আলোকিত প্রতিদিন/০৪ ডিসেম্বর-২৪/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here