মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম:
আমরা রাস্তায় বের হলেই দেখি কিছু মানুষ তাদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকে। তারা তাদের অসহায়ত্বের কথা এমনভাবে বলে যে, মানুষ টাকা দিতে বাধ্য হয়। আর আমরাও তাদের কথা শুনে মনে করি, তারা হয়তো খুব অভাবের মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছে এবং পর্যাপ্ত খাবার পর্যন্ত পাচ্ছে না।
এই যে এতক্ষণ যে কথাগুলো বললাম, তা হয়তো প্রত্যেকটা ভিক্ষুককে দেখেই আমাদের মনে হয়। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন যে, এমন অনেক ভিক্ষুক আছে যাদের ইনকাম আমার আপনার থেকে অনেক বেশি। শুধু ইনকামই নয়, অনেকে ঢাকা শহরে নিজস্ব বাড়ি পর্যন্ত তৈরি করে ফেলেছে। অপরদিকে আমরা এই ভিক্ষুকদের কষ্টের কথা শুনে নিজের কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকলেও তাদের দেওয়ার চেষ্টা করি। আর এখানেই তারা আমাদের আবেগ নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে চলেছে।
চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক ভিক্ষার নামে কিছু প্রতারণা: দৈনিক ইত্তেফাকের ২০১৯ সালের প্রকাশিত একটা প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় প্রচন্ড রোদের মধ্যে একটি ৩ বছরের শিশুর চোখে, মাথায় ও হাতে রক্তমাখা ব্যান্ডেজসহ মাটিতে বসিয়ে ভিক্ষা করছে তারই আপন বড়ো বোন। রক্তমাখা অসহায় শিশুটিকে দেখে এস আই আজাদের হৃদয় গলে যায়। শিশুটিকে দেওয়ার জন্য তিনি পকেট থেকে টাকা বের করেন। তখনই ব্যান্ডেজ দেখে পুলিশ অফিসারের মনে সন্দেহ হয়। যার জন্য সে শিশুটির হাতে সামান্য চাপ দেয়। কিন্তু এ নিয়ে শিশুটির মুখে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়া যায় না। পরবর্তীতে উদঘাটন হয়, শিশুটির মূলত কিছুই হয়নি। এটি ছিলো সম্পূর্ণরূপে প্রতারণার একটি ফাঁদ। চলতি বছরে প্রকাশিত ঢাকা নিউজের এক অনলাইন প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, এক ব্যক্তির ভিক্ষা করেই দেড় মাসে আয় আড়াই লাখ টাকা, আছে জমি, দোতালা বাড়ি এবং মোটরসাইকেল। ভারতের জৈন নামক এক ব্যক্তি তো ভিক্ষা করেই কোটি টাকার মালিক। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জৈন নামক ভারতীয় এই ব্যক্তি হচ্ছে গোটা দুনিয়ার সবথেকে ধনী ভিখারি। ডিবিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু ভিক্ষা করেই লাখ লাখ টাকা আয় করে ঢাকা শহরের বহু ভিখারি।
এই লাখ লাখ টাকা কামানো ভিক্ষুকদের প্রতিই আমরা হাজার টাকা কামানো মানুষ সহানুভূতি দেখাই। এ-সব ভিক্ষুকরা শুধু আমাদের অনুভূতি নিয়েই খেলছে না। তারা সত্যিকারের অসহায় মানুষের প্রতিও সন্দেহের দৃষ্টি ফেলতে বাধ্য করছে। যার জন্য আমরা আসলে বুঝতে পারি না, কাকে সাহায্য করা দরকার, আর কাকে নয়। যাদের প্রকৃত পক্ষেই সহায়তা দরকার, হয়তো তাদের কাছে আমার আপনার অর্থ পৌঁছাচ্ছেই না।
আলোকিত প্রতিদিন/০৬ ডিসেম্বর-২৪/মওম