আলোকিত প্রতিবেদক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপির প্রতি নির্যাতনের জবাব দলটি হিংসার বদলে ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দিতে চায় আমরা।
‘আমার ব্যক্তিগত জীবনেও নির্যাতন হয়েছে। আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, মাকে নির্যাতন করা হয়েছে এবং ভাই তাদের অত্যাচারে মারা গেছে… কিন্তু আমরা এ নির্যাতনের জবাব তাদের মতো হিংসার মাধ্যমে দেব না। আমরা ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এর জবাব দিব।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্ততা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফার লক্ষ্য হলো ‘সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তি’। ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৩১ দফার ঘোষণা দেন তিনি।
এ ঘোষণার প্রথম দফাটিই হলো প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে সব মত ও পথের সমন্বয়। এর জন্য বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি।
এছাড়া দফার অংশ হিসেবে ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ গঠনের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে দলটির। বিএনপির আরেকটু গুরুত্বপূর্ণ দফা হলো পরপর দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে জানান।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের বহু সহকর্মী খুন হয়েছেন। শুধু জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। গত ১৬ বছরে অনেক নেতাকর্মীর বাড়িঘর এবং ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ‘মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই তাদের বিএনপির ওপর নির্যাতনকারীদের জবাব দেওয়া হবে।
তারেক রহমান বলেন, ‘ভোটের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন পাওয়াই আস্থার প্রতিফলন। মুখে বললেই হবে না; জনগণ জানতে চায়, আমরা তাদের জন্য কী করব। জনগণের আস্থা অর্জনের পর সে আস্থা ধরে রাখতে হবে আমাদের।
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনই শেষ কথা নয়। অনেকে বলে, তারেক রহমান শুধু ভোট ভোট করে। আমরা রাজনৈতিক দল, আমরা তো ভোটের কথাই বলব। মানুষ জানতে চায়, আমরা কী করব। এখন আর শুধু কথায় চিড়া ভিজবে না।
নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘অনেকের নামে এখনো গায়েবি মামলা রয়েছে। এত নির্যাতন সহ্য করে যারা লড়াই করে যাচ্ছেন, তাদের কষ্ট যেন কোনো স্বার্থান্বেষী মহল নষ্ট করে দিতে না পারে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু লোক তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দিচ্ছে। কেন তাদের সে সুযোগ দেবেন আপনারা?’
তারেক রহমান বলেন, ‘মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। আপনাদেরও জনগণের দিকে তাকাতে হবে। কী করলে জনগণ আপনাকে আরও পছন্দ করবে, সেটি বুঝতে হবে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। এ আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার। এটি জনগণের দায়িত্ব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজেদের সংযত রাখব এবং আমাদের সহকর্মীদের সংযত রাখতে চেষ্টা করব। মানুষ চায় না এমন কাজ কেন করবেন, যেখানে আপনাদের আস্থার সংকট দেখা দেবে?’
তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচার যখন জনগণকে অধিকারবঞ্চিত করে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, তখন আমি বলেছিলাম টেক ব্যাক বাংলাদেশ। এর অর্থ হলো, জনগণের বাকস্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কী হবে, তা বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে। টেক ব্যাক বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য ছিল দেশের গণতন্ত্রকামী দলগুলোর সহযোগিতায় স্বৈরাচারের পতন ঘটানো। স্বৈরাচারের মাথা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৬ বছরে তারা নিজেদের আখের গোছাতে ভিনদেশে তাদের প্রভুকে খুশি করতে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রমুখ।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি