এম জসিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম: মিজানুর রহমান চৌধুরী আজ ৫৬ বছরে পা রাখলেন। তাঁর পরিচয় অনেক, কাজের পরিধি বিস্তৃত, অবদানের তাৎপর্য সুদুরপ্রসারি। বাংলাদেশের সংবাদপত্র শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তিনি অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। সমাজ সংস্কারক, সংগঠক, লেখক ও গবেষক হিসেবে তিনি অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী। তাঁর এই বিপুল কর্মময় বর্ণাট্য জীবন সামগ্রিকভাবে চট্টগ্রামের মানস ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। সে কারণে আজ তার জন্মদিন চট্টগ্রামবাসীর জন্য আনন্দের।
বহুগুণে গুনান্বিত সাংবাদিক মিজানুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রাম সহ দেশের অগণিত মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবদান রেখেছেন এবং এসব কর্মকাণ্ড এখনো চলমান রয়েছে। ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির সময় তিনি নগর ও মফস্বলে ‘লাভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষ থেকে অসহায় ক্ষুধার্ত হাজার হাজার মানুষকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছেন। করোনা মহামারীর দুঃসময় অতিক্রম করে ২০২২ সাল থেকে আবারও নতুন উদ্যমে সাংবাদিকতার কাজ শুরু করেন মিজানুর রহমান চৌধুরী।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সাংবাদিক মিজানুর রহমান চৌধুরীর জন্ম ১৯৬৯ সালের ১ জানুয়ারী চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। বাবা সৈয়দুর রহমান চৌধুরী ছিলেন ভাষা সৈনিক। মা উন্মে কুলচুমা চৌধুরী গৃহিণী।
১৯৮১ সালে ৬ ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন অবস্থায় তিনি লেখালেখি শুরু করেন।১৯৯০ সালে ডিগ্রী পাস করার পর স্রোতের গতিতেএগিয়ে যান লেখালেখি ও সাংবাদিকতায়। সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তার কর্মজীবন শুরু। সাংবাদিক মিজানুর রহমান চৌধুরী জীবনের শুরু থেকেই ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। ৯০ দশকের পর চট্টগ্রাম সাংবাদিক জগতের এই তরুণ ফ্যাসিষ্ট স্বৈরশাসক এরশাদ এবং পরবর্তী স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। যখন তিনি হাইস্কুল- কলেজের শিক্ষার্থী তখন থেকেই পড়াশোনা, জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি সাংবাদিকতা বিষয়েও জ্ঞান অর্জন করেন এবং সাংগঠনিক কাজেও যুক্ত ছিলেন। চলতি বছর (২০২৪ ) স্বৈরাচারীনি ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সারাদেশে ছাত্রজনতা যে গণআন্দোলন শুরু করেছিল সেই আন্দোলনে চট্টগ্রামের সমন্বয়কদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন সাংবাদিক মিজানুর রহমান চৌধুরী।
২০০৮ সালের পর স্বাধীন সাংবাদিকতা ও বাঙালির সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ের লক্ষে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তিনি ছিলেন তাঁর অন্যতম ভূমিকায়। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৭টি রাজ্যের সমষ্টিগত সেভেন সিষ্টার্সে মিজানুর রহমান চৌধুরীর পদচারণা রয়েছে। এছাড়াও তিনি সৌদি আরব, ওমান, আরব আমিরাত, মায়ানমারসহ বিশ্বের কয়েকটি রাষ্ট্র ভ্রমণ করেছেন। বাংলাদেশের এক অনন্য সংগঠন ‘লাভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ এর প্রধান প্রতিষ্ঠাতা মিজানুর রহমান চৌধুরী। সংগঠনটি সারাদেশে একটি মানবিক বাঙালি সাংস্কৃতিক সংগ্রাম করে চলেছে। শত বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকুলতার মাঝেও মিজানুর রহমান চৌধুরী এই সংগঠন থেকে সরে যাননি। প্রায় দুই দশক ধরে ‘লাভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ নানা সময়ে শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বা সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে তার সাহসী পথচলা অব্যাহত রেখেছে। এখনো চেয়ারম্যান হিসেবে ‘লাভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ নামক সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাংবাদিক মিজানুর রহমান চৌধুরী।
আত্মজীবনী সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে-ছন্দেতে মিজান চৌধুরী বলেছেন ‘রাজনীতি আমার ক্ষেত্র নয়, সাংস্কৃতিক আন্দোলনই আমার আসল কাজের ক্ষেত্র’। বিশেষ করে, বাংলাদেশ বা বাঙালি সাংস্কৃতিক স্বাধিকার সংরক্ষণ আমার উপযুক্ত কাজের ক্ষেত্র। এখনো তিনি সেই নিজস্ব কাজের ধারা থেকে বিন্দু পরিমাণ বিচ্যুত হননি।
কেবল ‘লাভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ই নয়, মিজান চৌধুরী ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য, বাংলাদেশ এডিটরস ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, একাধারে জাতীয় দৈনিক ‘আমাদের বাংলা, ইংরেজি দৈনিক ‘দ্যা ডেইলি ট্যুরিষ্ট, দৈনিক আমাদের চট্টগ্রাম, মাসিক কক্সবাজার সৈকত, দৈনিক আমাদের কক্সবাজার’ এর সম্পাদক ও প্রকাশক। বিগত ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ‘লাভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মিজান চৌধুরী। এছাড়াও তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাসিক প্রকাশনাসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রকাশনায় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মিজানুর রহমান চৌধুরীর সম্পাদনা বই ও তার পত্রিকাগুলো সব সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক ধারাকে প্রভাবিত করেছে, শক্তিশালী করেছে। সেজন্য চট্টগ্রামের মানুষ কৃতজ্ঞ থাকবে তার কাছে ।
পরিশেষে আমি সাংবাদিক মিজানুর রহমান চৌধুরীর সুস্বাস্থ্যে ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
এম জসিম উদ্দিন, লেখক, সাংবাদিক ও প্রকাশক
প্রথিতযশা সাংবাদিক মিজানুর রহমান চৌধুরী
আলোকিত প্রতিদিন/এপি