ভারত তৎকালীন ১৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ বাংলাদেশ থেকে লুট করে: মেজর ডালিম বীর উত্তম

0
471
ভারত তৎকালীন ১৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ বাংলাদেশ থেকে লুট করে: মেজর ডালিম বীর উত্তম
ভারত তৎকালীন ১৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ বাংলাদেশ থেকে লুট করে: মেজর ডালিম বীর উত্তম

অনলাইন ডেস্ক:

আলোচিত প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের লাইভ টকশোতে ৪৯ বছর পর প্রকাশ্যে কথা বললেন দীর্ঘদিন আড়ালে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে খুনে জড়িত অভিযোগে অভিযুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর শরিফুল হক ডালিম (বীর উত্তম)। টকশোর এক পর্যায়ে শেখ মুজিব সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মুজিব ছিল ভারতীয় নকশা বাস্তবায়নের প্রধান খেলোয়াড়।

৫ জানুয়ারি রবিবার রাত নয়টার দিকে সাংবাদিক ইলিয়াসের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত টকশোটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। বাংলাদেশে লাইভ টকশোর ইতিহাসে সকল রেকর্ড ভেঙে এক সাথে প্রায় ৮ লাখ দর্শক টকশোটি উপভোগ করেন।

টকশোতে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের নেপথ্যের ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা করেন বিদেশে নির্বাসিত আলোচিত এই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। তিনি তার জীবন ও সাম্প্রতিক সময়ের ঘটে যাওয়া নানা ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন।

টকশোর শুরুতে মেজর ডালিম বীর উত্তম বলেন, দেশবাসীকে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ছাত্র-জনতাকে, যারা আংশিক বিজয় অর্জন করেছেন, তাদের লাল শুভেচ্ছা জানাই। বিপ্লব একটি সমাজ যেকোনো রাষ্ট্রে একটি চলমান প্রক্রিয়া। সেই অর্থে তাদের বিজয় এখনও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। তার জন্য আরও সময় প্রয়োজন।

২৪’এর গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্যের নায়ক ছাত্র-জনতাকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রসারণবাদী-হিন্দুত্ববাদী ভারত যার কবজায় আমরা প্রায় চলে গিয়েছি। সেই অবস্থান থেকে সেই ৭১’এর মতো আরেকটা স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে। তা না হলে বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতীয় প্রোপাগান্ডা ও ষড়যন্ত্রের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ইন্ডিয়া বিশ্বের কাছে প্রমাণ করলো বাংলাদেশের জনগণ নিজেরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেনি। বাংলাদেশকে জন্ম দেওয়া হয়েছে ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। যে যুদ্ধে ইন্ডিয়া বিজয়ী হয়েছে। এখান থেকেই ইতিহাসের শুরু।

জাতীয় সঙ্গীত ইস্যুতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের না হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম বা অন্যান্য স্বনামধন্য দেশীয় কবিদের গান হতে পারত। রবীন্দ্রসঙ্গীতকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে এ দেশের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, ইতিহাসে এমন নজির বিরল যে ভিনদেশী কেউ কোন দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা।

৭৫ এর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরেন। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা গল্প তুলে ধরেন তিনি।

৭৫’ এর ১৫ই আগস্টে ঠিক কি হয়েছিল জানতে চাইলে সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা বলেন, খুবই স্পর্শকাতর প্রশ্ন। নিজের ঢোল নিজে বাজানো যায় না। প্রথম কথা, ১৫ই আগস্ট কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এটার সূত্রপাত হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায়। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধটা কাদের ইন্টারেস্টে হচ্ছে? এটা কি আমাদের ইন্টারেস্টের জন্য হচ্ছে যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করবো। নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করবো।

ইতিহাস বর্ণনা করে এই বীর উত্তম বলেন, যখন সাত দফাতে চুক্তি করে নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দীনকে পারমিশন দেওয়া হলো একটা প্রভিশনাল গভমেন্ট গঠন করার। সাতটা ক্লজ পড়ে সাইন করার পর নজরুল ইসলাম ফিট হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন যে, আমরা ক্রমান্বয়ে ভারতের একটা করদরাজ্য-অঙ্গরাজ্যে পরিণত হব।

মেজর শরিফুল হক ডালিম আরও বলেন, মুজিব মারা যায়নি, একটি সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছে। বাকশাল বিদায়ের পরে কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে এসে শুকরিয়া আদায় করেছে। মুজিবের মৃত্যুর পর লাখো লাখো মানুষ রাস্তাঘাটে অন্দরে বন্দরে আনন্দ মিছিল বের করেছিলো। তাদেরকে আমরা ডেকে আনি নাই সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছিলো। এভাবেই জনস্বীকৃতি পেয়েছিলো ধানমন্ডি বত্রিশের সামরিক অভ্যুত্থান।

তিনি বলেন, শেখ মুজিব তার জুলুমের মাত্রা এতোটাই তীব্র করেছিল স্বৈরাচারী আচরণের মতো যে, তখন মানুষ রবের কাছে মুক্তি চাচ্ছিল তার জুলুমের অবসানের জন্য।

 

শেখ মুজিব সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, মুজিব কী ছিল? মুজিব ছিল ভারতীয় নকশা বাস্তবায়নের প্রধান মেজর খেলোয়াড়।

 

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, ‘তথাকথিত নেতারা যখন ভারত পালিয়ে গেল। ছিল না যখন কেউ নেতৃত্বের দেওয়ার। সমঝোতা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। পাকিস্তান বাহিনী যখন বাঙালির ওপর হামলে পড়েছিল। তখন মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা আসে। আমি তখন পাকিস্তান আর্মিতে। মেজর জিয়ার ঘোষণা শুনে মনে হলো, আর বসে থাকার সময় নেই। আমরা তখনই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে গেলাম।’

মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিল, অসংখ্য নারী সম্ভ্রম হারিয়েছিল সাংবাদিক ইলিয়াসের এমন প্রশ্নের জবাবে মেজর ডালিম বলেন, কথাটা কিভাবে জন্ম নিল এটার ইতিহাস বললে, আমি তোমাকে আবার স্মরণ করে দিতে চাই। মুজিব যখন সিরাজ ভাই আর রেজাউল করিম সাহেবকে আলাদা ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করছে; সত্যিই কি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে? নাকি আমারে কোথাও নিয়ে মাইরা ফেলানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তখন সিরাজ ভাই উনাকে বললেন, মুজিব ভাই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আপনি যাইতেছেন প্রাইম মিনিস্টার অব বাংলাদেশ। কিন্তু আপনি ইন্ডিয়া হয়ে যাচ্ছেন কেন সেটা আমরা বলতে পারব না সেটা আপনার সিদ্ধান্ত।

তখন তিনি(শেখ মুজিব) বলেন, ইন্টারভিউ নিবেতো যে ক্ষয়ক্ষতি কত? তখন তিনি (সিরাজ ভাই) বলেন, এই সব কিছু মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতি প্রায় তিন লাখের মত। পরে তিন লক্ষকে যখন ইন্টারভিউ নিতে আসছিল, যখন মুজিবকে জিজ্ঞেস করছিল, হোয়াট ইজ দ্যাট থিংকিং অব লসেস লাইফ ডিউরিং দা ফ্রিডম ফাইটিং? তিনি (শেখ মুজিব) বললেন, থ্রি মিলিয়ন। তিন লক্ষকে বানাই ফেলাইলো ৩ মিলিয়ন। ওইখান থেকে যে রেকর্ড বানানো শুরু হল, তিন মিলিয়ন। ওটা চলতে আছে, চলতেই আছে, চলতেই আছে।

 

জাতির পিতা ইস্যুতে মেজর শরিফুল হক ডালিম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে জাতির পিতা, জাতির মাতা, জাতির বোন, জাতির জামাই এসবে বিশ্বাস করি না। জাতির পিতা যদি বলতেই হয় বিশ্ব মানবতার পিতা হচ্ছে হযরত আদম (আঃ)। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারে? তোমরা উন্নত দেশগুলো থেকে গণতন্ত্র-মানবাধিকার শিখে আসছ।আমাদের কুরআনে কি এগুলো নাই? তারপরে ওইসব দেশে কেন জাতির পিতা থাকে না? আমাদের এইখানে কেন থাকতে হবে?

 

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ইন্ডিয়াতে কে জাতির পিতা? সেখানে কোনো জাতির পিতা নেই। কোনো সভ্য দেশে জাতির পিতা বলে কোনো জিনিস নাই।

ফ্যাসিস্ট আ’লীগকে উদ্দেশ্য করে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, তাদের মেন্টর যে ভারত যেখানে তারা পালায়ে গেছে। ওই দেশটাতে কোনো জাতি পিতা আছে? নাই। তাহলে আমরা কেন জাতির পিতা বলব? যুক্তিটা কী? বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত রাজনীতিতে শুধু কি মুজিবের অবদান ছিল? সেখানে ভাষানির নাম নিতে হবে না? ফজলুল হকের নাম নিতে হবে না? একমাত্র মুজিবই কি বাংলাদেশের ঠিকাদার? আমি তো সেটা মনে করি না।

তিনি আরও বলেন, মুজিব তো কোনোদিন স্বাধীনতা চায়ইনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রথম কথা বলেছিল পাকিস্তান নৌবাহিনীর চৌকস কর্মকর্তা ওয়াজ্জেল হোসাইন। যার যা প্রাপ্য তাকে সেই মর্যাদায় দিতে হবে।

মেজর ডালিম বীর উত্তম আরও জানান, ৭১ এর ২৫শে মার্চ শেখ মুজিব পাকিস্তান আর্মির হেফাজতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করার আগে নিজের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে দিয়ে যান। নিজের এবং পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করে তিনি পাকিস্তানে পাড়ি জমান।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিল জিয়াউর রহমান কিন্তু পরবর্তীতে ভারতের চাপে স্বাধীনতার ঘোষণায় শেখ মুজিবুরের নাম ব্যবহার করতে বাধ্য হয় জিয়াউর রহমান।

দীর্ঘ ২ ঘণ্টার টকশোতে ইতিহাস থেকে তিনি আরও যেসব বিষয় বর্ণনা দেন তা হলো- আল বদর বাহিনী নয় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিলো ভারতীয় বাহিনী। ভারত তৎকালীন ১৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ বাংলাদেশ থেকে লুট করে নিয়ে যায়। বাঁধা দিলে মুজিব মেজর জলিলকে গ্রেপ্তার করে। জহির রায়হান ও শহিদুল্লাহ কায়াসারকে হত্যা করেছিলো মুজিব।

তিনি আরও দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধে ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জৎ লুট হয়েছিলো এইটা একটা মিথ্যা প্রচারণা। বিপ্লবী সিরাজ সিকদারকে পরিকল্পনা করে হত্যা করে মুজিব। মুজিবের ভাষণে নয় মেজর জিয়াউর রহমানের ডাকে লক্ষ লক্ষ মানুষ একতাবদ্ধ হয়েছিলো এবং আমি নিজেও পাকিস্তান থেকে চলে এসেছিলাম মেজর জিয়ার ডাকে। ভারত মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করছে যাতে তাদের একটি প্রদেশ বানাতে পারে।

আলোকিত প্রতিদিন/৬ জানুয়ারি-২৫/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here