নাজমুল হাসান:
রোজার আর মাত্র তিনদিন বাকি। দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র রমজান। নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও অস্থিরতা রয়েছে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কম থাকায় সয়াবিন তেলের উপর। প্রশাসনের সহায়তা চায় খুচরা ব্যাবসায়ী এবং ক্রেতারা।
২৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার কুমিল্লা দেবিদ্বার ও মুরাদনগরের স্থানীয় বড় পাইকারী বাজার কোম্পানিগঞ্জ ঘুরে জানা গেছে বিগত বছর গুলোতে রমজান আসলেই বেড়ে যায় নিত্য-পণ্যের দাম। ছোলা, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল, মুড়ি ও খেজুরের মতো পণ্যগুলোর চাহিদা হু হু করে বেড়ে যায়। শসা, কাঁচামরিচ, টমেটো, গাজর, ধনেপাতা, কালো বেগুন, লেবু চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে দাম। তবে এ বছর রমজান ঘিরে ভোগ্যপণ্যের দাম এখনো অনেকটাই স্থিতিশীল। সয়াবিন তেল ছাড়া রমজানের অন্যসব পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে। রমজানের বাকি মাত্র তিন দিন। এরই মধ্যে বাজারে রমজানের পণ্য কেনাবেচা ধুম লেগেছে । মুদি দোকানে ক্রেতাদের দৈনন্দিন চাহিদা পণ্যের সাথে রোজার পণ্য কিনতে দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজি দরে। গত বছর রমজানেও এ দামের চেয়েও একটু বেশি ছিলো। একইভাবে খেসারির ডাল১০৫-১১০ টাকা ও মসুর ডাল ১১০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাজারে সবজির সরবরাহ অনেক; এতে কমেছে দাম। বর্তমানে শালগম ৩০-৪০ টাকা, ধরনভেদে শিম ৩০-৫০ টাকা ও টমেটো ২০-২৫ টাকা, ধনেপাতা ৫০-৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৫৫-৬০ টাকা, লেবু প্রতি হালি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বেগুন ৫০-৬০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা ও লাউ ২০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি এখন ২০-২৫ টাকা। মাস দুই আগে চিনির দাম উঠেছিল ১২৫-১৩০ টাকায়। এখন তা কিছুটা কমে ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এ বিক্রেতা। রমজানের আরেকটি অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ। ৪০-৪৫ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন ক্রেতারা।
রমজান ঘিরে বাজারে মুড়ি ও খেজুরের চাহিদাও বাড়ে। খেজুরের দাম কিছুটা কমছে। গত বছর রমজানের আগে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। এবার সে তুলনায় খেজুরের বাজার স্থিতিশীল। প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুর ২৫০-৩০০ টাকা এবং ভালো মানের খেজুর ৪০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি কেজি মুড়ি ৮০-৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত বছরও এমন দাম ছিল বলে জানান বিক্রেতারা। বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দামও সহনশীল রয়েছে। প্রতি ডজন কেনা যাচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি ৩০০-৩২০ টাকা।
দেবিদ্বার জাকির হোসেন ও কোম্পানিগঞ্জ বাজারের মুদি দোকানি আলী আকবর বলেন, ডালজাতীয় কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি, বরং কমেছে কিছুটা। আগের বছর রমজানেও এমন দাম ছিল। মাঝে মসুরের দাম কিছুটা বেড়েছিল, এখন সেটা কমেছে। তেল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা প্রতি লিটার তেল গায়ের মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বিভিন্ন দোকান ঘুরে সয়াবিন তেল আগের মতো তেমন দেখা যায়নি। ৫ লিটার এবং ৩ লিটারের তেলের বোতল কমই পাওয়া যাচ্ছে তবে খুলো তেলের চাহিদা বাড়ছে। সরবরাহ সংকটের সুযোগ নিয়ে কিছু কিছু বিক্রেতা ১৭৫ টাকা লিটারের তেল ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। অনেকে তেলের বোতল কেটে ড্রামে ঢেলে চড়া দামে খুচরায় বিক্রি করছেন।
তেল না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন ক্রেতা বলেন, রমজানের আগে সয়াবিন তেলের চাহিদা যখন বেড়ে যায় সরবরাহকারীরা তখন ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এটি মানুষের পকেট কাটার ধান্দা। এবার অন্যসব পণ্যের মুনাফা তেলে উঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
আলোকিত প্রতিদিন/২৭ফেব্রুয়ারি-২৫/মওম